পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশের পর এ পদক্ষেপ নিলেন পুতিন।

 

আরো পড়ুন:

বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের পুরস্কৃত করলেন পুতিন

ইউক্রেনের ৯৮টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি এমন পদক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা বাড়াবে বলে বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

রাশিয়ার নেতা বুধবার তার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা ব্যাপক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষেধ চুক্তির (সিটিবিটি) কোনো স্বাক্ষরকারী দেশ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়, তাহলে ‘রাশিয়া পারস্পরিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে’।

পুতিন বলেন, “এই বিষয়ে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশেষ পরিষেবা এবং সংশ্লিষ্ট বেসামরিক সংস্থাগুলোকে এই বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করার নির্দেশ দিচ্ছি, নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক এটি বিশ্লেষণ করানো হোক এবং পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সম্ভাব্য প্রথম পদক্ষেপের উপর সমন্বিত প্রস্তাব জমা দেওয়া হোক।”

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে মস্কো আর পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রাগারের অধিকারী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে।

গত মাসে মার্কিন নেতা হাঙ্গেরিতে পুতিনের সাথে একটি পরিকল্পিত শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করেন, তার একদিন পরে রাশিয়ার দুটি শীর্ষ তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটিই প্রথম পদক্ষেপ।

এরপর ৩০ অক্টোবর ট্রাম্প বলেন, তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগকে অন্যান্য পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তির সাথে ‘সমান ভিত্তিতে’ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মস্কোর নতুন বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করার কয়েকদিন পর আসে। বুরেভেসতনিক পারমাণবিক শক্তিচালিত ও পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

ক্রেমলিনের তথ্যানুসারে, পুতিন গতকাল বুধবার মস্কোতে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা অধিবেশনে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন।

বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ পুতিনকে বলেছেন, ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ‘রাশিয়ার জন্য সামরিক হুমকির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।’ তিনি বলেন,  “আমাদের পারমাণবিক বাহিনীকে এমন পর্যায়ে প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে"।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেছেন, আর্কটিক অঞ্চলের নোভায়া জেমলিয়া ঘাঁটিতে অল্প সময়ের নোটিশেই পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো সম্ভব।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীল প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভও সতর্ক করে বলেছেন যে, রাশিয়া যদি ‘এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের প্রতি সময়োপযোগী প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় ও সুযোগ হারিয়ে যাবে’।

বৈঠকের পর, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন অনুরোধকৃত প্রস্তাবগুলো খসড়া করার জন্য কর্মকর্তাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করেননি।

পেসকভ বলেন, “এই ধরনের পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার যুক্তিসঙ্গততা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে বুঝতে আমাদের যতটা সময় লাগে ঠিক ততটাই সময় লাগবে।”

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে থাকা ওয়ারহেডের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বব্যাপী বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিএসিএনপির ধারণা অনুসারে, মস্কোর বর্তমানে ৫ হাজার ৪৫৯টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি সক্রিয়ভাবে মোতায়েন করা হয়েছে।

সিএসিএনপি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ৫ হাজার ৫৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ সক্রিয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ১৮৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৩১ হাজারের বেশি সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র স ত র পর ক ষ র য ক তর ষ ট র র প রস ত ত র পদক ষ প র জন য মন ত র বল ছ ন র প রস

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১১৪, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা

চলতি বছরের অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় কালমেগির তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ফিলিপাইন। দেশটির মধ্যাঞ্চলে কালমেগির আঘাতে ভয়াবহ বন্য দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

আরো পড়ুন:

ঘূর্ণিঝড় মন্থা, বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা

‘সঠিক স্থান নির্ধারণ না হওয়া আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে’

প্রতিবেদনে বলা হয়, কালমেগির প্রভাবে ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনারও।

সেবুর প্রতিরক্ষা অফিসের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাফায়েলিটো আলেজান্দ্রো জানান, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ৯৯ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, কালমেগির প্রভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে। আহত হয়েছে ৮২ জন। এছাড়া ১২৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট মার্কোস বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ ঘূর্ণিঝড় কালমেগির আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সপ্তাহান্তে দেশটিতে আরেকটি ঝড় ‘উওয়ান’ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রায় ১০ থেকে ১২টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যদি এতগুলো অঞ্চল এই ধরনের প্রভাবের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ।” 

জাতীয় দুর্যোগের মানে হলো, এমন এক পরিস্থিতি যেখানে ব্যাপক হতাহত, সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

এটি সরকারি সংস্থাগুলোকে জরুরি তহবিল সংগ্রহ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় এবং সরবরাহ দ্রুত করার জন্য আরও ক্ষমতা দেয়।

স্থানীয়ভাবে ‘টিনো’ নামে পরিচিত ঘূর্ণিঝড় কালমেগি মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে ফিলিপাইনের স্থলভাগে আঘাত হানে। এতে সেবুর আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ছোট অনেক বাড়িঘর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, শহরজুড়ে কাদার ঘন স্তুর পড়েছে। উদ্ধারকারী দল ঘরের ভেতরে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে নৌকা ব্যবহার করছে।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। পরপর দুটি টাইফুনে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষতি হওয়ার মাত্র এক মাস পরই সর্বশেষ এই ঘটনাটি ঘটল।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন রাগাসা আঘাত হেনেছিল এবং তার পরেই আসে টাইফুন বুয়ালোই।

আগের মাসগুলোতে, বর্ষা মৌসুমে দেশটি ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় নিম্নমানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর, মধ্য ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও আহত হয়েছিল, যার ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল সেবুতে।

ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আজ বৃহস্পতিবার ফিলিপাইন ছেড়ে মধ্য ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ইতিমধ্যেই রেকর্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভিয়েতনামে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছিলেন।

পূর্বাভাস অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় কালমেগি শুক্রবার সকালে মধ্য ভিয়েতনামে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানকার ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল অথবা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই এক সপ্তাহ ধরে বন্যা ও রেকর্ড বৃষ্টিপাতের সাথে লড়াই করছে। দেশটির বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এখনও বন্যার কবলে রয়েছে।

থাইল্যান্ডও ঝড়ের প্রভাবের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা কালমেগির প্রভাবে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ