জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে বাংলাদেশে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সেটার উপাত্তগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য হয়। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সামনের সারিতে থাকলেও এ উপাত্তগুলোকে জলবায়ুর পরিবর্তনের অভিঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে নানামুখী ক্ষয়ক্ষতির পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে যেতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীতে অক্সফাম আয়োজিত ‘ফ্রম গ্রাউন্ড টু গ্লোবাল: দ্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড ফর ক্লাইমেট ইকুইটি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যে প্রাণহানি, জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিলুপ্তিকে লস (অ-আর্থিক ক্ষতি) বলা হয়। আর জলবায়ুর অভিঘাতে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো, ফসলের ক্ষয়ক্ষতিকে ড্যামেজ (আর্থিক ক্ষতি) হিসেবে গণ্য করা হয়।

২০১৩ সালে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। ২০২২ সালে মিসরে অনুষ্ঠিত কপ-২৭–এ লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে একটি ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সে ফান্ডে প্রাথমিকভাবে উন্নত বিশ্বের চারটি দেশ ৪০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্ত সংগ্রহে অক্সফাম একটি উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে কেউ ক্ষয়ক্ষতির উপাত্ত দিতে পারবে।

প্রমাণ তৈরিতে উপাত্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখানে একেক সংস্থা একেকভাবে উপাত্ত তৈরি করে। লস অ্যান্ড ড্যামেজের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে আমাদের মানদণ্ড সাযুজ্যপূর্ণ হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবেরউফা খানম, সহকারী পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করছে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে পাঁচটি বড় বন্যাসহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; দেশের ৩০ শতাংশ ভূমি প্লাবিত হয়েছে।

সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং অ-অর্থনৈতিক ক্ষতিও ভয়াবহ—যেমন প্রাণহানি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিলুপ্তি এবং পূর্বপুরুষের ভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার মানসিক আঘাত। এসব ক্ষয়ক্ষতির নানামুখী দিক পর্যবেক্ষণে রাখা, মূল্যায়ন করা এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতির ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে উদ্ভাবিত ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ড্যাশবোর্ড’কে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন নিকোলাস উইকস। এই ড্যাশবোর্ড ক্ষয়ক্ষতির একটি দালিলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

নিকোলাস উইকস জানান, সুইডেন ২০২৪ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১২০ কোটি ডলার জলবায়ু সহায়তা দিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া দেশটি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের সহসভাপতি হিসেবে জলবায়ু অর্থায়নের দক্ষতা ও ফলপ্রসূতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত কপ-২৯ সম্মেলনে সুইডেন জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার জন্য গঠিত বৈশ্বিক তহবিলে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, আর্থিক ও অ-আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব একই পদ্ধতিতে করলে হবে না। দুটোর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে হবে দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্ত সংগ্রহে অক্সফাম একটি উদ্যোগ নিয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: লস অ য ন ড ড য ম জ জলব য় র ম নদণ ড অন ষ ঠ উপ ত ত আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, ৩০০ আসনই লক্ষ্য: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সে লক্ষ্যে সব কটি আসনেই শাপলা কলির জন্য প্রার্থী দেওয়ার কাজ করছি। সমঝোতা বা জোট রাজনৈতিক বা আদর্শিক জায়গা থেকে হতে পারে। জুলাই সনদ ও আমাদের সংস্কারের দাবিগুলোর সঙ্গে যদি কোনো দল ঐক্যবদ্ধ বা সংহতি প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে জোটের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবেই এগোচ্ছি।’

আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এর আগে তিনি সেখানে জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত গার্মেন্টসের নিরাপত্তাকর্মী গাজী সালাউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সর্বাধিক আসনে এনসিপির প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য মনোনীত আসনগুলোয় হয়তো কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সংস্কৃতিতে দেখেছি, যাদের টাকা আছে, গডফাদারগিরি করে, তারাই নির্বাচনে দাঁড়ায়। আমরা সেই সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। এলাকার যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, সাধারণ মানুষের পাশে পাওয়া যায় যাকে, এমন খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে এলাকার শিক্ষক, ইমাম ও গ্রহণযোগ্য কাউকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাই। আমরা সেই উদ্দেশ্যে কাজ করছি।’

এনসিপির আরেক নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এনসিপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

জুলাই আন্দোলনে আহত গাজী সালাউদ্দিনের মৃত্যু প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, তিনি আন্দোলনের সাহসী সৈনিক ছিলেন। গত বছরের ১৯ জুলাই জালকুড়ি এলাকায় গুলিতে আহত হয়ে গলায় স্প্লিন্টারবিদ্ধ ও তাঁর একটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আহত যোদ্ধাদের যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল, তারা যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ফলে এখনো অনেকেই কষ্টে আছেন, লাশের সারি বাড়ছে। তিনি বলেন, আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আহমেদুর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁরা গাজী সালাউদ্দিনের কবর জিয়ারত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, ৩০০ আসনই লক্ষ্য: নাহিদ ইসলাম