Prothomalo:
2025-11-06@03:40:58 GMT

প্রকৃতির সৌন্দর্য লাল কাঁকড়া

Published: 6th, November 2025 GMT

ঘটনাটি বছর ছয় আগের। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ গবেষণা অনুদানের আওতায় প্রকল্প প্রস্তাবনা বাছাইয়ের কাজে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ–সংলগ্ন প্যাঁচার দ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যাচ্ছিলাম।

হিমছড়ির কাছাকাছি পৌঁছাতেই সৈকতের বালুচরে লাল রঙের খোলকি প্রাণীর একটি বিশাল ঝাঁক দেখতে পেলাম। দূর থেকে মনে হচ্ছিল যেন লাল পিঁপড়ার সারি বালুর ওপর নাচতে নাচতে যাচ্ছে। দ্রুত গাড়ি থামাতে বললাম এবং ক্যামেরা হাতে সৈকতের দিকে ছুটে গেলাম। কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম—ওগুলো আসলে ছোট নয়, বেশ দৈত্যকায় চোখওয়ালা লাল খোলকি প্রাণী! সময় নষ্ট না করে দ্রুত কিছু ছবি তুলে নিলাম, কিন্তু ক্লোজ শট নিতে গেলেই ওরা মুহূর্তের মধ্যে নিজ নিজ গর্তে লুকিয়ে পড়ল।

তবে দুঃখের বিষয়, গত বছরের ডিসেম্বরে সেখানে গিয়ে একটি প্রাণীরও দেখা পাইনি। ধারণা করছি, সৈকতে মানুষের অতিরিক্ত চলাচল, ঘোড়া ও মোটরসাইকেল চালনার কারণে তারা হয়তো অন্যত্র সরে গেছে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে সোনাদিয়া দ্বীপপুঞ্জে বিরল ও দুর্লভ পাখি অনুসন্ধানের সময় আবারও সেই লাল খোলকি প্রাণীগুলোর দেখা পেলাম। তার পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই কক্সবাজারের সোনাদিয়া কিংবা সুন্দরবনের ডিমের চরে এদের ঝাঁকে ঝাঁকে দেখতে পাচ্ছি। এমনকি এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচরের তারুয়া সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণকালেও এদের দেখা পেয়েছি।

দৈত্যকায় চোখওয়ালা লাল খোলকি প্রাণীগুলো আসলে এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান এক আবাসিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী—লাল কাঁকড়া। ইংরেজি নাম রেড ঘোস্ট ক্র্যাব। শ্রেণি Malacostraca, গোত্র Ocypodidae ও বৈজ্ঞানিক নাম Ocypode macrocera। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে এদের বিস্তৃতি রয়েছে।

লাল কাঁকড়ার আকার মাঝারি। এর খোলস বাক্সের মতো গভীর, রং হালকা লালচে-বাদামি। বড় কর্নিয়াসহ চোখ লম্বা ও দৈত্যকায়; প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের চোখের কক্ষপথের বাইরের প্রান্তে দাঁতের মতো প্রক্ষেপণ থাকে। চোখের ডগায় থাকে শিংয়ের মতো আকৃতি। নখ তুলনামূলক ছোট ও ভোঁতা। শব্দ উৎপাদনের জন্য খোলসের উপরিভাগে একটি উঁচু অংশ (রিজ) রয়েছে, যেখানে ৩৫ থেকে ৫৬টি ছোট টিউবারকল থাকে।

এরা সাধারণত বঙ্গোপসাগরের বালুকাময় সৈকত ও বাদায় বাস করে। দিন-রাত দুই সময়েই সক্রিয় থাকলেও প্যাঁচা ও অন্যান্য শিকারির হাত থেকে বাঁচতে রাতে বেশি চলাফেরা করে। সর্বভুক এই প্রাণী জৈব পদার্থ, ছোট কৃমি, ছোট শেলফিশ ও মাছ খায়। উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা ও মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ত খননের মাধ্যমে মাটিকে বায়ু চলাচলযোগ্য করে তোলে বলে অনেকেই এদের ‘পরিবেশ প্রকৌশলী’ হিসেবে অভিহিত করেন।

আ ন ম আমিনুর রহমান: পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সৈকতে লাল কাঁকড়া

২ / ৮মানুষের আনাগোনা দেখলে পানিতে নেমে পড়ে কাঁকড়াগুলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ