নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে চীনা নভোচারীরা মহাকাশে খাবার রান্না করছেন। মহাকাশে যেকোনো ধরনের খাবার রান্না করা বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচনা করা হয়। চীনা নভোচারীরা তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনের ন্যূনতম মাধ্যাকর্ষণ (মাইক্রোগ্র্যাভিটি) পরিবেশে মাত্র ২৮ মিনিটে রোস্টেড চিকেন উইংস রান্না করেছেন। তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে থাকা ছয়জন চীনা নভোচারী মহাকাশে প্রথমবারের মতো বারবিকিউ রান্না করে উপভোগ করলেন।

চায়না অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার থেকে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, শেনঝু ২০ ও শেনঝু ২১ অভিযানের নভোচারীদের কাছে একটি ওভেন রয়েছে। এই ওভেন ব্যবহার করে খাবার রান্না করতে দেখা যায়। প্রথমবারের মতো মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশের জন্য উপযুক্ত একটি ওভেন স্থাপন করা হয়েছে মহাকাশ স্টেশনে।

মাইক্রোগ্র্যাভিটির মধ্যে খাবার রান্নার বড় চ্যালেঞ্জ ওভেনের মাধ্যমে সমাধান করেছেন নভোচারীরা। চীনা নভোচারীরা সেখানে রোস্টেড চিকেন উইংস মাত্র ২৮ মিনিটে রান্না করেছেন। ওভেনটি মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগংয়ের পাওয়ার গ্রিডে চাপ তৈরি না করে কাজ করতে পারে। ধোঁয়ামুক্ত বেকিং পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে ওভেনটি। রান্নার জন্য ক্রু সদস্যরা চিকেন উইংস একটি বিশেষভাবে তৈরি গ্রিলে রাখেন। মহাকাশ স্টেশনের দেয়ালে থাকা একটি ছোট ক্যাবিনেটের মতো কম্পার্টমেন্টে প্রবেশ করাতে দেখা যায় তাঁদের।

অ্যারোস্পেস নলেজ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান বলেন, পৃথিবীতে ওভেনের ভেতর বাতাস যেমন ঘোরাফেরা করে, তাকে পরিচলন বলে। মহাকাশে বাতাস সঞ্চালনের সেই প্রয়োজনীয় পরিচলন ঘটে না। প্রকৌশলীদের খাদ্য গরম করা ও রান্নার ধোঁয়া সামলানোর একটি অনন্য উপায় খুঁজে বের করতে হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রু সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছে। ওভেনটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৯০ ডিগ্রি উন্নত করা হয়েছে। এতে নভোচারীরা এখন মোড়কজাত খাবার গরমের পাশাপাশি খাবার রোস্ট ও বেক করতে পারছেন।

চীনা নভোচারীদের আগে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে ন্যানোর‍্যাকস ও জিরো জি কিচেন নির্মিত একটি পরীক্ষামূলক ওভেন পরীক্ষা করেছিলেন। ২০২০ সালে ওভেনের প্রথম পরীক্ষা করা হয়। সেই সময় কক্ষপথে পাঁচটি চকলেট চিপ কুকি বেক করা হয়। মহাকাশে বেক করা প্রথম খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কুকিকে। সেই পাঁচটি কুকির মধ্যে তিনটি পরে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

চীনা নভোচারীদের ওভেনে রান্না মহাকাশে দীর্ঘদিন ধরে ভালো খাবার খাওয়ার চ্যালেঞ্জকে জয় করেছে। শেনঝু ২১ ক্রু ৩১ অক্টোবর তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনের দিকে যাত্রা করে। তাঁরা সেখানে প্রায় ছয় মাস অবস্থান করবেন। এই তিনজন নভোচারী শেনঝু ২০–এর নভোচারীদের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠে জিত, বাইরে হার

ভারতে বসে এই লেখা লিখছি। নারী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম কোনো বাংলাদেশি নারী হিসেবে মাঠে, টিভি পর্দার সামনে, চতুর্থ আম্পায়ারের ভূমিকায় আম্পায়ারিং করছি। প্রতিটি পদক্ষেপে দৃঢ় থাকার চেষ্টা করছি। এ জন্য প্রশংসাও পাচ্ছি।

এটাকে শুধু ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবেই দেখি না, খেলাধুলায় মেয়েদের সংগ্রামের ফসল এই অর্জন। আমাদের মেয়েরা এখন ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করছে। দেখে সাবেক ক্রিকেটার এবং একজন নারী হিসেবে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন খেলায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জয়যাত্রা সত্যিই চোখে পড়ার মতো।

২০১৮ সালে কুয়ালালামপুরের ক্রিকেট মাঠে লেখা হয় নতুন ইতিহাস। নারীদের টি-২০ এশিয়া কাপ ক্রিকেটে শিরোপা জেতে আমাদের মেয়েরা। আগে যেখানে সব সময় জয়ী হতো ভারত, সেখানে আমাদের কন্যারা প্রথমবারের মতো হাতে তুলে নেয় ট্রফি। ছেলেরা এখনো সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। এদিক থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় ট্রফিটা মেয়েরাই এনেছে।

ফুটবল মাঠেও উড়ছে জয়পতাকা। ২০২২ ও ২০২৪—পরপর দুবার দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হিসেবে মঞ্চ আলো করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এ বছর প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছে তারা, এএফসির চূড়ান্ত পর্বেও নাম লিখিয়েছে অনূর্ধ্ব-২০ দল। আর অনূর্ধ্ব-১৬ দল দুবার খেলেছে এএফসির চূড়ান্ত পর্বে। সাফের সেরা আমাদের দুই ফুটবল–কন্যা সাবিনা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমা। এখনো চোখে ভাসে নেপালের বিপক্ষে ঋতুর জয়সূচক আর মিয়ানমারের বিপক্ষে জোড়া গোল।

প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারে সব খেলা মিলিয়ে সাবিনা খাতুন ও ঋতুপর্ণা চাকমার বর্ষসেরা খেলোয়াড় হওয়াটাও ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েদের সাফল্যই নির্দেশ করে। আরও সুখবর, সাবিনা-ঋতুপর্ণাসহ ১৬–১৭ জন বাংলাদেশি নারী ফুটবলার এবার ভুটানে লিগে খেলেছে।

সেই তুলনায় বলতেই হবে ছেলেরা পিছিয়ে আছে। এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে তারা শুধু ১৯৮০ সালে খেলেছে। এ বছর হামজা চৌধুরীসহ প্রবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে আশা ছিল ৪৫ বছর পর চূড়ান্ত পর্বে উঠবে, কিন্তু স্বপ্ন পূরণের অনেক আগেই তাঁদের থামতে হয়েছে। সেই ২০০৩ সালে সাফে শিরোপা জিতেছে ছেলেরা। অপেক্ষা কত দিন চলবে জানা নেই।

এশিয়ান নারী চ্যাম্পিয়নশিপে গত মার্চে কাবাডিতে প্রথমবার ব্রোঞ্জ জিতেছে আমাদের মেয়েরা। ২০২৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বকাপ শুটিংয়ে কামরুন নাহার কলি ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অষ্টম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য গড়েছেন।

চীনে অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে তিন মাস আগে ব্রোঞ্জ জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দলীয় ও ব্যক্তিগত খেলায় তারা এগোচ্ছে। ২০১৬ এসএ গেমসে মাবিয়া আক্তারের সোনা জয়ের কান্না ও সাঁতারু মাহফুজা খাতুনের জোড়া সোনা নারী ক্রীড়ার বড় মুহূর্ত।

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান অলিম্পিকে সোনা জিতে পূর্ব বাংলার লুৎফুন নেছা হক, জিনাত আহমেদ, রওশন আক্তাররা। ১৯৬৮ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের দ্রুততম মানবী হন সুফিয়া খাতুন। স্বাধীনতার আগে-পরে তিন বোন কাজী জাহেদা, কাজী নাসিমা, কাজী শামীমা ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করেন। ১৯৮১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় চতুর্থ এশিয়ান জুডোতে ব্রোঞ্জ জেতেন কামরুন নাহার। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এটি বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথম কোনো পদক। সময়ের সঙ্গে বেগবান হয়েছে সেই যাত্রা। দাবার কিংবদন্তি রানী হামিদ ৮২ বছরেও খেলছেন; টেবিল টেনিসে ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিনেস বুকে নাম তোলা জোবেরা রহমান লিনু আমাদের আদর্শ।

তবুও বঞ্চনা

কিন্তু আজও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত মেয়েরা। পরিবার-সমাজের মতের বিরুদ্ধে তাদের এখনো লড়তে হয়। লড়াইটা অনেক সময় ফেডারেশনের বিরুদ্ধেও করতে হয়। যৌন হয়রানি বা নিরাপত্তাহনীতার কথা কে না জানে। সাফল্যের তুলনায় মেয়েদের প্রাপ্তিও কম। আজও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার তারা। নানা সংকটে আবর্তিত হয় তাদের জীবন। সুযোগ-সুবিধার অভাব। মেয়েদের প্রতি সমাজ-সংসারের বিশ্বাসের অভাবও রয়েছে।

২০০৭ সালে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের যাত্রার শুরুতে আমাদের চারপাশে কেউ বিশ্বাসই করত না, বাংলাদেশের মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারবে। তাই শুধু মাঠেই না, মাঠের বাইরেও অনেক কিছুর সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। পরিবার ও সমাজের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করত, ‘মেয়েরা ক্রিকেট খেলে কী হবে?’

সেই সময় আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, খেলাটা ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া কতটা সম্ভব। আজ থেকে ১৮ বছর আগে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের শুরুর সময় আমরা দৈনিক হাতখরচ পেতাম মাত্র ৫০ টাকা। ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে কষ্ট করে থাকতে হতো, ছোট মাঠে অনুশীলন করতে হতো। সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল, আর্থিক কোনো সহায়তাও ছিল না। আমরা জানতাম ক্রিকেটের জন্য সময় দিলে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবু ঝুঁকি নিয়েছিলাম। বিশ্বাস ছিল, একদিন আমরা এগোব। সত্যিই আমরা এগিয়েছি।

কিন্তু ক্রিকেটে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেতন ও ম্যাচ ফি এখনো অনেক কম। সম্প্রতি দৈনিক ভাতা সমান করা হয়েছে—ছেলেরা ১০০ ডলার পেলে মেয়েরাও তা–ই পাবে। আগে মেয়েরা পেত ৫০–৭৫ ডলার। ভারত, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েরা ছেলেদের সমান ভাতা ও ম্যাচ ফি পায়, কিন্তু বাংলাদেশে স্পনসরের অভাবে ম্যাচ ফি সমান হওয়া হয়তো সম্ভব নয়।

স্পনসরের অভাবে বাংলাদেশে বিভিন্ন খেলায় মেয়েদের জন্য আলাদা লিগ বা টুর্নামেন্ট খুব কম হয়। ফুটবলে সাফল্য থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের জন্য ঘরোয়া খেলা বা বর্ষপঞ্জি নেই। ঢাকায় সর্বশেষ লিগের পর ১৭ মাস ধরে কোনো ঘরোয়া আয়োজন হয়নি, অথচ ছেলেদের জন্য পাঁচটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে। গত বছর সাফজয়ী দলও প্রতিশ্রুত দেড় কোটি টাকা অর্থ পুরস্কার পায়নি, এশিয়ান কাপে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেও কোনো আর্থিক পুরস্কার মেয়েদের ভাগ্যে জোটেনি। এখানেও বঞ্চিত আমাদের মেয়েরা ।

নারীদের বঞ্চনার তালিকা আসলে অনেক দীর্ঘ। সবচেয়ে বড় বৈষম্য কোচিং স্টাফে নারীর কম উপস্থিতি। ফুটবলের কোচিং স্টাফে নারী মাত্র একজন—সহকারী কোচ। আগে সব ফিজিওও ছিলেন পুরুষ। এখন অবশ্য একজন নারী আছেন। সালমা খাতুনকে কদিন আগে মাত্র বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের নির্বাচক করা হয়েছে, অথচ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারতে কোচ-নির্বাচক সবাই সাবেক খেলোয়াড়। নারী খেলোয়াড়েরা অবসর নেওয়ার পর নেতৃত্ব বা কোচিংয়ে না এলে তাঁরা হারিয়ে যাবেন। এখানেও সংস্কারের সুযোগ আছে।

মেয়েদের খেলাধুলায় বড় বাধা বিয়ে ও সন্তান। বিয়ে হলে দলে থাকা কঠিন। ২০১২ সালে আমার বিয়ের পর দেশের সেরা খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় দল থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ফলে আজও অনেক ক্রীড়াবিদ বিয়ে করতে ভয় পান, ভাবেন ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। এ ছাড়া সন্তান নিলে অন্তত দেড় বছর খেলোয়াড় বাইরে থাকে, এরপর ফিটনেস ফেরানো কঠিন।

অনেক নারী আবার বাসায় শিশুসন্তান রেখে খেলায় ফিরতে পারেন না। আমি ভাগ্যবান, পরিবারের সহায়তায় মাত্র তিন মাস বয়সী সন্তান রেখে খেলায় ফিরেছি। কিন্তু অনেক প্রতিভা বিয়ে বা সন্তান হওয়ার কারণে হারিয়ে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা হয় না। একজন মা সন্তানকে এক দিনও আলাদা রাখতে পারেন না। সন্তান হওয়ার পর বহু মেয়েকেই খেলায় ফিরতে দেয়নি পরিবার। ফলে অনেক প্রতিভাবান নারী খেলোয়াড় আমরা হারিয়েছি।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

মেয়েদের চাকরির নিরাপত্তাহীনতাও বড় সমস্যা। ১৬–১৭ থেকে ৩০–৩৫ বছর পর্যন্ত পারফরম্যান্স থাকতে পারে, কিন্তু এরপর ক্যারিয়ার চালানো কঠিন। এরপর চাকরির সুযোগও কিন্তু কম। খেলাধুলায় যত দিন আছেন, তত দিন আয়। ক্রিকেটে তুলনামূলক আয় ভালো, ফুটবলে মোটামুটি, অন্যান্য খেলায় তা–ও নেই। কদিন আগে মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে ৩৪তম জাতীয় সাঁতারে প্রথমবারের মতো পদকজয়ীদের পুরস্কার দিয়েছে সাঁতার ফেডারেশন। সোনাজয়ী দুই হাজার, তৃতীয় হওয়ার জন্য মাত্র ৫০০ টাকা—ছেলে-মেয়ে সবাই। রেকর্ডধারীকে পাঁচ হাজার টাকা। ৪২ লাখ টাকার বাজেটে ব্রোঞ্জজয়ীর জন্য এই যুগে ৫০০ টাকাকে তামাশা ছাড়া আর কীই–বা বলা যেতে পারে!

ভারতে রেলওয়েসহ অনেক সংস্থা মেয়েদের চাকরি দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী খেলোয়াড় কোটায় মেয়েদের অন্তর্ভুক্ত করছে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, আনসারসহ কয়েকটি সংস্থা খেলোয়াড়দের চাকরি দেয়, কিন্তু ক্রিকেটে আনসার ছাড়া সেভাবে সুযোগ নেই। দেশে বিজেএমসিসহ অনেক দল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় খেলার জায়গা কমেছে।

খেলোয়াড়দের জন্য বিকেএসপি খুব ভালো জায়গা। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরা ক্রিকেটার মারুফা আক্তারকে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন নামের একজন কোচ আবিষ্কার করেছেন, আর ওর বেড়ে ওঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে বিকেএসপি। কিন্তু বিকেএসপি এ দেশে সীমিত। তাই স্কুল-কলেজে খেলাধুলার চর্চা বাড়াতে হবে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বড় হয়ে নিজের উদ্যোগে স্কুলে ক্রিকেট টিম গড়ে খেলেছি, যার পরিণতিতে আজ এত দূর পর্যন্ত এসেছি। প্রজন্ম, সুযোগ ও মনোভাব বদলাবে—এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। মাঠে ঘাম, কষ্ট ও লড়াই দিয়ে প্রমাণ করেছি—যোগ্যতা ও সম্ভাবনা আমাদের আছে। চাই শুধু সমান সম্মান ও সুযোগ।

অনুলিখিত

এসএ গেমসে ২৬ সোনা

অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের সফলতার মানদণ্ড দক্ষিণ এশিয়ান (এসএ) গেমস, আগে যার নাম ছিল সাফ গেমস। ১৯৮৪ থেকে ২০২৫—এই ৪১ বছরে ১৩টি গেমসে ৮৭টি সোনা জিতেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে মেয়েদের হাত ধরে এসেছে ২৬টি—ব্যক্তিগত ১৭, দলীয় ৭ এবং মিশ্র ইভেন্টে ২টি। তবে এই সংখ্যার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ২৬ সোনার ২২টিই গত ১৫ বছরে হওয়া মাত্র তিনটি গেমস থেকে এসেছে। এতেই ফুটে ওঠে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস, দেখিয়ে দেয় ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা।

১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৮৭, ১৯৮৯—টানা চারটি গেমসে শূন্য হাতে ফিরেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অবশেষে ১৯৯১ সালে কলম্বোয় ইতিহাস গড়েন কাজী শাহানা পারভীন। শুটিংয়ের স্ট্যান্ডার্ড রাইফেলে জিতে নেন সোনা। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় একই ইভেন্টে তাঁর সঙ্গে দলীয় সোনা জেতেন ফারজানা হোসেন ও সাবরিনা সুলতানা।

১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ গেমসে মেয়েরা সোনাবিহীন থাকলেও ১৯৯৯ সালে শুটিংয়ের ৫০ মিটার স্মলবোর স্পোর্টস রাইফেল প্রোনে শাহানা–সাবরিনার সঙ্গে মিলে দলীয় সোনা আনেন লাভলী চৌধুরী। ২০০৪ সালে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে আলো কাড়েন শারমিন আক্তার। ২০০৬ সাল আবার সোনাশূন্য। কিন্তু ২০১০ সালে ১৮ সোনার ৮টিই জিতেছেন মেয়েরা—ব্যক্তিগত ছয়, দলীয় দুই। শুটিং, কারাতে, তায়কোয়ান্দো ও আর্চারিতে বেজেছে জাতীয় সংগীত।

২০১৬ সালে চার সোনার তিনটিই এসেছে মেয়েদের হাত ধরে। সাঁতারে জোড়া সোনা জেতেন মাহফুজা খাতুন আর ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার। আর ২০১৯ সালে ১৯টি সোনার ১১টিই মেয়েদের দান। ব্যক্তিগত ছয়, দলীয় তিন, মিশ্র দুই। কারাতে, ফেন্সিং, আর্চারি ও ভারোত্তোলনে এসেছে এসব সোনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাঠে জিত, বাইরে হার
  • মাঠে ফেরা নেইমার এবারও নেই ব্রাজিল দলে