প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক আবারও তাঁর স্বভাবসুলভ নাটকীয়তায় বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সের সাম্প্রতিক পর্বে অংশ নিয়েছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। সেখানে বছরের শেষ নাগাদ টেসলার উড়ন্ত গাড়ির প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করার কথা বলেছেন।

অবশ্য ইলন মাস্কের কাছে উড়ন্ত গাড়ির ধারণা নতুন নয়। অন্তত এক দশক আগে থেকে মাস্ক এমন পরিকল্পনার কথা বলছেন। মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়া কিংবা হাইপারলুপ ট্রেন চালুর মতো তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প উড়ন্ত গাড়ি। এই গাড়ির প্রতিশ্রুতি বরাবরের মতো ‘শিগগিরই’ আর ‘একদিন না একদিন’ আসবেই মনে হচ্ছে। পডকাস্টে আলোচনার সূত্রপাত হয় টেসলার দ্বিতীয় প্রজন্মের রোডস্টার গাড়ি নিয়ে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে তৈরি প্রথম রোডস্টারের পর নতুন সংস্করণ ২০২০ সালে বাজারে আসার কথা ছিল। অন্য সব ঘোষণার মতোই সেই গাড়ি আসি আসি করে ‘আগামী বছর’ আসবে বলছেন ইলন মাস্ক। জো রোগানের প্রশ্নের উত্তরে ইলন মাস্ক বলেন, ‘প্রোটোটাইপ প্রদর্শনের জন্য আমরা প্রায় প্রস্তুত। এই প্রদর্শনী হবে এমন কিছু, যা মানুষ কোনোভাবেই ভুলবে না।’ উপস্থাপক রোগান আরও জানতে চান, কীভাবে তা অবিস্মরণীয় হবে। মাস্ক সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে জানান, ‘ভালো হোক বা খারাপ। এটি স্মরণীয় হবেই।’

আলাপের কিছুক্ষণ পরই মাস্ক নতুন ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমার বন্ধু পিটার থিয়েল একবার বলেছিল, ভবিষ্যতে আমাদের উড়ন্ত গাড়ি থাকার কথা ছিল। অথচ তা এখনো নেই।’ রোগান তখন জানতে চান, ‘নতুন রোডস্টারে কি ভাঁজ করা ডানা থাকবে?’ মাস্ক সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘উন্মোচনের আগে তো উন্মোচন করা যায় না। এটি হবে টেসলার ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় পণ্য উন্মোচন।’ ইলন আশা প্রকাশ করেন, বছরের শেষ নাগাদ তা প্রদর্শন করা সম্ভব হবে।

মাস্ক অতীতেও নানা প্রযুক্তি প্রদর্শনের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও বেশির ভাগ প্রযুক্তি বাজারে পৌঁছাতে অনেক বছর লেগে গেছে। ইলন মাস্কের হাইপারলুপ প্রকল্প তেমনই এক প্রযুক্তি, যেখানে শহরের মধ্যে ঘণ্টায় ৭০০ মাইল গতিতে চলার মতো ট্রেনের কথা বলা হয়েছিল। বাস্তবে তা এখনো সীমিত একটি টানেলেই সীমাবদ্ধ। টানেলে এখন চালকসহ টেসলা গাড়ি ধীরগতিতে যাতায়াত করে। সেই বাস্তবতায় উড়ন্ত রোডস্টারের প্রোটোটাইপ দেখা গেলেও তা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসবে, এমন নিশ্চয়তা এখনো নেই। টেসলার স্বয়ংক্রিয় সাইবারক্যাব প্রকল্প বা ঘোষিত রোবোট্যাক্সি দুটিই এখনো বাস্তবে কারখানায় উৎপাদনের পর্যায়ে যায়নি।

ইলন মাস্ক পডকাস্টে আরও বলেন, ‘প্রথমে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে, তা সত্যিই কাজ করে কি না। এই গাড়িতে এমন প্রযুক্তি আছে, যা একেবারেই পাগলাটে ও অবিশ্বাস্য।’ জো রোগান জানতে চান, এটি কি আগের ঘোষণার চেয়ে ভিন্ন কিছু? মাস্ক জবাব দেন, ‘একেবারেই ভিন্ন। এটি এমন প্রযুক্তি, যা হয়তো গাড়িও নয়। দেখতে গাড়ির মতো, কিন্তু জেমস বন্ডের সব গাড়ি একত্র করলেও এমন কিছু পাওয়া যাবে না।’ মাস্কের এই মন্তব্যের পর অনেকে ধারণা করছেন, টেসলার নতুন প্রকল্পটি হতে পারে একটি ভিটল। অর্থাৎ উল্লম্বভাবে উড়তে ও নামতে সক্ষম, এমন যানকে অনেকেই ‘উড়ন্ত গাড়ি’ বলেন। যদিও এ ধরনের যান রাস্তায় চলে না। ছোট হেলিকপ্টারের মতো আকাশে ওঠানামা করতে পারে। জো রোগান বলেন, ‘আপনি খুব সীমিত তথ্য দিচ্ছেন।’ উত্তরে ইলন মাস্ক জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে রোগানকে প্রোটোটাইপটি দেখাতে চান। তবে তা রোগান আদৌ দেখতে পাবেন কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

উড়ন্ত গাড়ির ধারণা নতুন নয়। ১৯৫০-এর দশক থেকেই নানা প্রতিষ্ঠান এমন যান তৈরির চেষ্টা করেছে। জটিল প্রযুক্তি, নিরাপত্তার ঝুঁকি ও কঠোর বিমান উড্ডয়নের নিয়মের কারণে কোনো প্রকল্পই মূলধারায় পৌঁছাতে পারেনি। যদি ইলন মাস্কের নতুন রোডস্টার সত্যিই উড়তে পারে, তবে তা চালাতে প্রশিক্ষিত পাইলট প্রয়োজন হবে। আর যদি প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হয়, তবে তার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ও আইনগত কাঠামো তৈরিতেও সময় লাগবে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উড়ন ত গ ড় র ইলন ম স ক প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাকশিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিজিএমইএ-আইএমএফ বৈঠক

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মধ্যে পোশাকশিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও রূপান্তর নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় এই বৈঠক হয়।

আরো পড়ুন:

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বিজিএমইএ-এনপিও সমঝোতা স্মারক

শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এজেন্ডায় পোশাক খাতের অবদানকে উচ্চ প্রশংসা করে এবং শিল্প খাতের চলমান রূপান্তর প্রচেষ্টায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয়।

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, সহসভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা এবং পরিচালক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী।

আইএমএফ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনিয়র ইকোনমিস্ট কিয়াও চেন, সিনিয়র ইকোনমিস্ট রুইফেং ঝাং এবং ইকোনমিস্ট আয়া সাইদ।

আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পোশাকশিল্পের ভূমিকা, চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈশ্বিক অস্থিরতা সত্ত্বেও কিভাবে পোশাকশিল্প প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি এখন শ্রমনির্ভর মডেল থেকে বেরিয়ে এসে মূল্য সংযোজিত পণ্য, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ম্যান-মেইড ফাইবার (এমএমএফ) ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকে এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য শুল্ক পরিবর্তন ও বাণিজ্য সুবিধা হ্রাসের বিষয়েও আলোচনা হয়। বিজিএমইএ নেতারা জানান, তারা সরকারকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পাদনের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় থাকে।

বিজিএমইএ নেতারা বৈঠকে শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন সহজীকরণ ও ব্যয় হ্রাসের ওপর জোর দেন। তারা উল্লেখ করেন, বোর্ড ইতিমধ্যে সরকারকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের স্থিতিশীলতা, বন্দর ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, কাস্টমস ও বন্ড প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সুদের হার এক অঙ্কে রাখার বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এছাড়া তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ