জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার সামনে সাজ্জাদ হোসেন সজলকে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতা রনি ভূইয়া ধরে রাখেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন সাক্ষী মো. শাহরিয়ার হোসেন। তিনি বলেন, পরদিন (২০২৪ সালের ৬ আগস্ট) তিনি খবর পান, তাঁর বন্ধু সজলের লাশ আশুলিয়া থানার সামনে পাওয়া গেছে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় সজলসহ ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২২তম সাক্ষী হিসেবে শাহরিয়ার হোসেন জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তিনি এ জবানবন্দি দেন।

সাভারে স্টার্লিং গার্মেন্টসে চাকরি করা শাহরিয়ার হোসেনের বন্ধু ছিলেন সজল। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করে জবানবন্দিতে শাহরিয়ার হোসেন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে বাইপাইল মোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। সেদিন বেলা আড়াইটায় শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা বিজয় মিছিল করছিলেন। ওই সময় তাঁরা আশুলিয়া থানার দিক থেকে গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান।

তখন বিজয় মিছিল নিয়ে আশুলিয়া থানার দিকে যান উল্লেখ করে জবানবন্দিতে শাহরিয়ার হোসেন বলেন, থানার সামনে পুলিশের কয়েকজন সদস্য অবস্থান করছিলেন। সজল তাঁর আগেই থানার সামনে চলে যান। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন, সজলকে আওয়ামী লীগ নেতা রনি ভূইয়া ধরে আছেন। ছেড়ে দিতে বললে সজলকে ছেড়ে তাঁকে ধরেন রনি। তারপর তিনি দেখেন, পেছনে একজন বন্দুকের গুলি লোড করছিলেন। তিনি তখন বন্ধু সজলকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। তারপর তাঁরা একটি গুলির শব্দ পান।

জবানবন্দিতে শাহরিয়ার হোসেন বলেন, গুলির শব্দ শুনে তিনি সেখানকার এসএ পরিবহন অফিসমুখী রাস্তার দিকে যান। অল্প কিছু দূর যাওয়ার পর তিনি পড়ে যান। তখন দেখেন, তাঁর পায়ে ছিটা গুলি লেগেছে। সামনে একটি বাসার গেট খোলা পেয়ে ভেতরে চলে যান তিনি। সেখান থেকে সেদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হওয়ার সময় থানার সামনে পুলিশের একটি পিকআপ গাড়িতে কয়েকটি লাশ পোড়ানো দেখেন।

এজলাস থেকে বেরিয়ে যান এক প্রসিকিউটর

জবানবন্দি শেষে আজ সাক্ষী শাহরিয়ার হোসেনকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁকে এ মামলার আসামি আবদুল্লাহিল কাফীর আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার সময় ওভারপাসে (আশুলিয়া থানার কাছে) পুলিশের দুজন কর্মকর্তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেছেন।

এর জবাবে সাক্ষী শাহরিয়ার বলেন, তিনি দেখেননি।

আইনজীবী মিজানুরের এমন প্রশ্নের প্রতিবাদ জানান প্রসিকিউটর মো.

আবদুস সোবহান তরফদার। তিনি বলেন, পুলিশের দুজন কর্মকর্তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল, এটিই প্রতিষ্ঠিত নয়। ফলে এই সাক্ষীর কাছে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই যে পুলিশের দুজন কর্মকর্তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেছেন কি না।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার সময় ওভারপাসে পুলিশের দুজন কর্মকর্তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেননি—এ কথা সাক্ষী বলেছেন। এর মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় না যে সেখানে কোনো লাশ ছিল।

ট্রাইব্যুনালের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার। পাল্টাপাল্টি যুক্তির একপর্যায়ে প্রসিকিউটর সোবহান এজলাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, সেটি প্রসিকিউটর সোবহানের ইচ্ছা। এরপর এজলাস থেকে বেরিয়ে যান প্রসিকিউটর সোবহান।

এ ঘটনার ১০–১৫ মিনিট পর এজলাসে প্রবেশ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তখন আরও কিছু প্রশ্ন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এবং সেসবের জবাবও দেন সাক্ষী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, ৫ আগস্ট বেলা ৩টার পর আশুলিয়া থানা লুট হতে দেখেছেন কি না?

এর জবাবে সাক্ষী শাহরিয়ার বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

পরে আইনজীবী মিজানুর প্রশ্ন করেন, আশুলিয়া থানায় অগ্নিসংযোগ হতে দেখেছেন কি না?

সাক্ষী শাহরিয়ার জবাব দেন, তিনি থানায় অগ্নিসংযোগ হতে দেখেননি।

তখন চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আশুলিয়া থানায় অগ্নিসংযোগ বা লুট হয়েছে কি না, সেই বিষয় এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে সাক্ষীকে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই যে থানা লুট বা অগ্নিসংযোগ হয়েছে কি না। এসব মিসলিডিং কোয়েশ্চেন।

চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিপক্ষের আইনজীবীর আশুলিয়া থানা লুট বা অগ্নিসংযোগ–সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো আমলে নেননি ট্রাইব্যুনাল।

আশুলিয়া থানা–সংলগ্ন ওভারপাসে পুলিশের দুজন কর্মকর্তার লাশ ঝুলে থাকার বিষয়ে প্রশ্নেও তখন ট্রাইব্যুনাল পরিবর্তন আনেন। সাক্ষী বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ওভারপাসে পুলিশের কোনো কর্মকর্তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেননি—এভাবে প্রশ্নের জবাব গ্রহণ করা হয়।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ মামলাটির বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এক আ. লীগ নেতাকে ২৭ নভেম্বর হাজিরের নির্দেশ

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ময়মনসিংহের গৌরীপুরে তিনজনকে হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা তানজির আহমেদকে (রাজীব) ২৭ নভেম্বর হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল এই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল–২।

তানজির ইতিমধ্যে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। ২৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা শাহাবুল আলম, মো. জোসেফ উদ্দিন জজ ও মো. আতাউর রহমানকেও প্রথমবারের মতো হাজির করা হবে। তাঁরা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

এ ছাড়া এই মামলায় পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল আলম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেলোয়ার হোসেন গ্রেপ্তার আছেন।

শিবির নেতাকে গুলির ঘটনায় প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ল

২০১৬ সালে যশোরের চৌগাছায় ছাত্রশিবিরের দুজন নেতার পায়ে গুলি করার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ট্রাইব্যুনাল–১ এই দিন ধার্য করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: থ ন র স মন দ খ নন আওয় ম এজল স র ঘটন অপর ধ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডের সেলিম প্রধান রিমান্ডে

রাজধানীর গুলশান থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিছিলে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ঢাকার ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ জানান, গত ২৬ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ওই দিন আদালত তাঁর উপস্থিতিতে শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছিলেন। শুনানির জন্য আজ সেলিম প্রধানকে আদালতে আনা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাওহিদুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, আগের সরকারের সময় সেলিম প্রধানকে নিয়ে অভিযোগ ছিল তিনি তারেক রহমানের কাছে টাকা পাঠাতেন এবং বর্তমান মামলাতেও একই রকম অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা যৌক্তিক নয়।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জিজ্ঞেস করেন, ‘তারেক রহমানকে কে টাকা দিয়েছেন?’ উত্তরে আসামিপক্ষের আইনজীবী একটি সংবাদ প্রতিবেদনের কপি আদালতে দেখান। এ সময় আদালতের ভেতর হট্টগোল সৃষ্টি হয়।

একপর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে সেলিম প্রধান বলেন, ২০১৯ সালের একটি মামলায় তিনি জামিন না পেয়ে কারাভোগ করেছেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি গাজী গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন এবং আওয়ামী লীগের আমলে তাঁর ব্যক্তিগত বাড়িতে হামলা হয়েছে। তিনি জোসেফ হারিছের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন।

শুনানি শেষে আদালত সেলিম প্রধানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে গুলশানের বারিধারার নেক্সাস ক্যাফে প্লেস নামক একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়।

এর গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের মিছিলে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল সকাল ৭টায় গুলশান-১ এর জব্বার টাওয়ারের পাশের রাস্তায় আসামিসহ ৩০ থেকে ৩৫ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সমবেত হন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সংগঠনের অর্থদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতাদের নিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। সেখানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানার ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশ গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
  • ভালো কাজের বিনিময়ে কারামুক্তি, কেমন আছেন তাঁরা
  • সংবিধানের ৫৩ বছর: বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের আহ্বান
  • তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি
  • গোষ্ঠীস্বার্থে ড্যাপ সংশোধন হলে ঢাকার বাসযোগ্যতা আরও সংকটে পড়বে
  • আইনজীবীর ভূমিকায় নুসরাত ফারিয়া
  • ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত
  • পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডের সেলিম প্রধান রিমান্ডে