অভ্যন্তরীণ আলোচনার পর সালাহউদ্দিনকে নিয়ে মন্তব্য: বিসিবি
Published: 5th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহীকে নিজের পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন সালাহউদ্দিন। আসন্ন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়তে চান সালাহউদ্দিন।
বিসিবি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। তবে এ নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর তিনি (সালাহউদ্দিন) পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমরা আর কোনও মন্তব্য করার আগে বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করব।’’
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ হলেন আশরাফুল
খেলা চলাকালিন মারা গেলেন বরিশাল দলের ফিজিও হাসান আহমেদ
জাতীয় দলকে ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারায় সালাহউদ্দিনকে নিয়ে প্রবল সমালোচনা হচ্ছে। যে আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছিল বিসিবি তার কাছাকাছিও যেতে পারেননি তিনি। সহকারী কোচের পাশাপাশি ব্যাটিং কোচেরও দায়িত্ব সামলে যাচ্ছিলেন। উল্টো তার সময়ে ব্যাটিং হয়েছে আরো ছন্নছড়া। পরিকল্পনার ঘাটতি, পারফরম্যান্স গড়পড়তা এবং নেতৃত্বের গুনাবলিতে একেবারে তলানিতে অবস্থান করছিলেন এসিসি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে লেভেল থ্রি কোচিং প্রশিক্ষণ নেওয়া সালাহউদ্দিন।
প্রবল সমালোচনার মুখে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পদত্যাগ করেছেন সালাহউদ্দিন। তার মেয়াদ ছিল ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত। জানা গেছে, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কোচিং পদ থেকে সালাহউদ্দিন সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। তবে ভেতরের খবর, সমর্থক এবং গণমাধ্যমের সমালোচনা নিতে পারছিলেন না তিনি। যে কারণে নিজের কাজ উপভোগ করতে পারছেন না। এজন্য এক মাসের টার্মিনেশন পিরিয়ড শেষে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান সালাহউদ্দিন।
এর আগেও তিনি ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের সহকারী কোচ ও ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া ২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিসিবির জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির বিশেষ কোচ ছিলেন।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন স ল হউদ দ ন জ ত য় দল
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি
জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
এনসিটিবির কার্যকর স্বায়ত্তশাসন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে: টিআইবি
খাগড়াছড়িতে হতাহতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় টিআইবি
গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ বছরে গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, যদিও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪৩.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবুও বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।
একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণেই এ দুর্নীতি ঘটেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।”
গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তি এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ; ট্রাস্ট আইনে জবাবদিহি, নিরীক্ষা ও তথ্য উন্মুক্তকরণের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা; রাজস্ব বাজেটের বাইরে আন্তর্জাতিক তহবিল, কার্বন ট্রেডিং ও বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগ নেওয়া; স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া; একটি স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা; এবং অবকাঠামো ও সৌর সড়ক বাতি প্রকল্পের অনিয়মে জড়িতদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা।
ঢাকা/রায়হান/ইভা