অন্তর্বর্তী সরকারের চূড়ান্ত করা খসড়া ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ কমিশনের বাস্তব স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বেশকিছু বিষয় চিহ্নিত করে প্রযোজ্য সুপারিশসহ খসড়াটি ঢেলে সাজানোর জন‍্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

অন‍্যথায় অধ্যাদেশটি পুলিশ কমিশনের ওপর সরকারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং কমিশনকে সাবেক আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্রে পরিণত করার ঝুঁকি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আরো পড়ুন:

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২ আসামি গ্রেপ্তার 

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলিতে নিহত কে এই সরোয়ার?

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়নি, নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত খসড়া অধ‍্যাদেশ অনুযায়ী বাছাই কমিটি ও কমিশন গঠন, জনবল নিয়োগ, আর্থিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ঝুঁকির কথা তুলে ধরে বুধবার (৫ নভেম্বর) বিবৃতি দিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.

ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “সাতজন সদস্যের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত একজন আমলা ও দুইজন পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে যেভাবে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে করে কমিশন সাবেকদের আনুগত্যের প্রতিদানকেন্দ্রে পরিণত হওয়াসহ সরকারের নির্বাহী বিভাগের অধীনে একটি সংস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।”

“এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে সাবেক ও বর্তমান আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ বাতিল করে বিচার, আইন,  আইনপ্রয়োগ, মানবাধিকার ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক সমন্বয়ে কমিশন গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে,” বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘‘কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার স্বার্থে এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সরকারের অনুমোদনের বিধান বাতিল করে এ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। এ ছাড়া প্রেষণে নিয়োগের ব্যাপারে সরকার নয়, বরং কমিশনের সুপারিশ ও অনুমোদনের বিধান, যা দশ শতাংশের বেশি হবে না এবং সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত কোনো সরকারি কর্মচারীর কমিশনে প্রেষনে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের দ্বিমত থাকলে, সেক্ষেত্রে কমিশনের অভিমত প্রাধান্য পাবে- এরূপ বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”

কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাগত জীবনে দলনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার রক্ষা, সততা ও শুদ্ধাচার চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এমন ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে হবে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কমিশনের সদস্যদের সদস্য-সচিব নিয়োগের বিধান বাতিল করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সচিবসহ সকল জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকবে এবং সচিবের পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা সরকারের সচিবের সমান হবে এই বিধান করতে হবে।”

সচিব কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্বের পাশাপাশি পদাধিকার বলে কমিশনের নন-ভোটিং সদস্যের দায়িত্ব পালন করবেন, এই মর্মে বিধান রাখা যৌক্তিক হবে বলে মন্তব্য করেছেন ড. জামান। তিনি বলেছেন, “তা ছাড়া, বাছাই কমিটির সদস্যদের বিশেষ করে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা সুস্পষ্ট করতে হবে। পাশাপাশি বাছাই কমিটি কর্তৃক চূড়ান্তভাবে সুপারিশকৃত প্রার্থীদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান এই অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানাই।”

বিবৃতিতে তিনি বলেন, পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার পেশাগত উৎকর্ষতা ও কার্যপরিধি স্পষ্টকরণ, মানবাধিকার ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিতে এ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতি প্রণয়ন বা সংস্কারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা কমিশনের হাতে অর্পণের একটি দফা সংযুক্ত করা জরুরি।

কমিশন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ আইনের স্থলে দীর্ঘদিন চাপা রাখা ‘খসড়া পুলিশ আইন, ২০০৭’- এর ইতিবাচক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সময়োপযোগী নতুন পুলিশ আইনের খসড়া প্রণয়ন ও পাশ করানোর জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ করার নিমিত্তে দফা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি ।

কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে ‘সরকার কমিশন কর্তৃক চাহিত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত এবং এর বাৎসরিক নিরীক্ষিত ব্যয়বিবরণী প্রতিবেদন প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে’ এরূপ ধারা সংযোজন করার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট আইব ম নব ধ ক র কর মকর ত স ব ধ নত সরক র র র সদস য আহ ব ন কর ত ক ত করত ট আইব

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার যেভাবে পুলিশ কমিশন করতে চাইছে, তাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে

প্রস্তাবিত ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ’–এর খসড়াটি ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নইলে পুলিশ কমিশনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে বলে আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো প্রকাশিত না হলেও ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে’ প্রাপ্ত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়াটি সম্পর্কে জেনে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল টিআইবি। এবার পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ নিয়েও তাদের একই ধরনের প্রতিক্রিয়া এল।

প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের বাছাই কমিটি ও কমিশন গঠন, জনবল নিয়োগ, আর্থিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘সাতজন সদস্যের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত একজন আমলা ও দুজন পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে যেভাবে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে কমিশন সাবেকদের আনুগত্যের প্রতিদানকেন্দ্রে পরিণত হওয়াসহ সরকারের নির্বাহী বিভাগের অধীন একটি সংস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।’

টিআইবি সাবেক ও বর্তমান আমলা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ বাতিল করে বিচার, আইন, আইনপ্রয়োগ, মানবাধিকার ও সুশাসন–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষকের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার স্বার্থে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সরকারের অনুমোদনের বিধান বাতিল করে এ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। এ ছাড়া প্রেষণে নিয়োগের ব্যাপারে সরকার নয়, বরং কমিশনের সুপারিশ ও অনুমোদনের বিধান, যা ১০ শতাংশের বেশি হবে না এবং সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত কোনো সরকারি কর্মচারীর কমিশনে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের দ্বিমত থাকলে সে ক্ষেত্রে কমিশনের অভিমত প্রাধান্য পাবে—এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাগত জীবনে দলনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার রক্ষা, সততা ও শুদ্ধাচার চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কমিশনের সদস্যসচিব নিয়োগের বিধান বাতিল করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সচিবসহ সব জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকবে এবং পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা সরকারের সচিবের সমান হবে, এই বিধান করতে হবে।

টিআইবি পরামর্শ দিয়েছে, সচিব কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্বের পাশাপাশি পদাধিকার বলে কমিশনের নন-ভোটিং সদস্যের দায়িত্ব পালন করবেন, এই মর্মে বিধান রাখা যৌক্তিক হবে। এ ছাড়া বাছাই কমিটির সদস্যদের বিশেষ করে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা সুস্পষ্ট করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার পেশাগত উৎকর্ষ ও কার্যপরিধি স্পষ্টকরণ, মানবাধিকার ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিতে এ–সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতি প্রণয়ন বা সংস্কারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা কমিশনের হাতে অর্পণের একটি দফা সংযুক্ত করা জরুরি। কমিশন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ আইনের স্থলে ‘খসড়া পুলিশ আইন, ২০০৭’–এর ইতিবাচক বিষয় বিবেচনায় রেখে নতুন পুলিশ আইনের খসড়া প্রণয়ন ও পাস করানোর জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার জন্য দফা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ ছাড়া কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে সরকার কমিশন কর্তৃক চাহিত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত এবং এর বার্ষিক নিরীক্ষিত ব্যয়বিবরণী প্রতিবেদন প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে, এমন ধারা সংযোজনের সুপারিশও করেছে টিআইবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা
  • সরকার যেভাবে পুলিশ কমিশন করতে চাইছে, তাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে