জোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে আমরা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
Published: 6th, November 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘সার্বভৌমত্ব’ হারিয়েছে। কারণ, নিউইয়র্কের ভোটাররা ‘‘বামপন্থী’’ জোহরান মামদানিকে (জোহরান একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট) তাঁদের পরবর্তী মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টা সামলে নেব।’ তবে তিনি এর অর্থ ব্যাখ্যা করেননি; বরং দাবি করেন, দেশের সবচেয়ে বড় শহরটি এখন ‘কমিউনিস্ট শহর’ হয়ে উঠবে।
মায়ামিতে গতকাল এক ভাষণে ট্রাম্প এসব মন্তব্য করেন। মামদানির বড় জয়ের একদিন পরই তিনি এ–ও মনে করছেন, শিগগিরই ফ্লোরিডার এ শহর হবে সেসব মানুষের আশ্রয়স্থল, যাঁরা নিউইয়র্কের কমিউনিজম থেকে পালিয়ে আসবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মার্কিনদের সামনে এখন খুবই স্পষ্ট এক সিদ্ধান্ত—আমাদের সামনে আছে কমিউনিজম আর সাধারণ বুদ্ধির মধ্যে এক পছন্দ।’ তিনি আরও বলেন, এ সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক দুঃস্বপ্ন’ ও ‘অর্থনৈতিক সাফল্যের বিস্ময়’ এর মধ্যে এক পছন্দ।
আরও পড়ুনডেমোক্র্যাটদের জয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—ট্রাম্পের রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধাক্কা১৬ ঘণ্টা আগেগত বছরের ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ট্রাম্প এ ভাষণ দেন। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থনীতি উদ্ধার করেছি, স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছি, আর একসঙ্গে আমরা আমাদের দেশকে বাঁচিয়েছি—৩৬৫ দিন আগে সেই গৌরবময় রাতে।’
শিগগিরই ফ্লোরিডার এ শহর (মায়ামি) হবে সেসব মানুষের আশ্রয়স্থল, যাঁরা নিউইয়র্কের কমিউনিজম থেকে পালিয়ে আসবেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টনিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানি জয়ী হয়েছেন ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান নেতা ও আরও কিছু মহলের তীব্র সমালোচনা এবং বিরোধিতার মধ্যে। ট্রাম্পপন্থী ব্যবসায়ী মহল, রক্ষণশীল গণমাধ্যম বিশ্লেষক এবং ট্রাম্প নিজেও ৩৪ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভুত জোহরানের নীতিমালা ও মুসলিম পরিচয়কে কেন্দ্র করে তাঁকে কঠোরভাবে আক্রমণ করেছিলেন।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিজয়োৎসবে জোহরান বলেন, ‘যদি কেউ দেখাতে পারেন যে ট্রাম্পের কারণে একটি দেশ প্রতারিত হয়েছে এবং তাঁকে হারানো যায়, তবে সেটা করতে পারবে সেই শহরই; যেখান থেকেই তিনি নিজে উঠে এসেছেন।’
জোহরান মামদানির জয়ের মুহূর্ত.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয় ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত নিলেন জোহরান মামদানি
নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন জোহরান মামদানি। তিনি শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে তার এই জয় সহজে আসেনি। নির্বাচনী প্রচারের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তিনি নিজ দলের রিপাবলিকান প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। নিউইয়র্কবাসী জোহরান নয়, কুয়োমোকে ভোট দিতে বলেছেন।
আরো পড়ুন:
কে এই জোহরান মামদানি?
নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়লেন জোহরান মামদানি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, আপনার হাতে বিকল্প নেই। আপনাকে ভোট দিতেই হবে তাকে। আমি আশা করব সে দারুণ কাজ করবে। সে কাজের মানুষ, মামদানি নয়।”
তবে শেষ মুহূর্তে রিপাবলিকান ট্রাম্পের এমন মন্তব্য ডেমোক্র্যাট মামদানির জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি শেষমেশ। তিনি ৫০.৪ শতাংশ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেছেন নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ভোটে জিতে নিজের বিজয় ভাষণেই ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন জোহরান মামদানি। তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি যত দূর জানি, আপনি দেখছেন। আমি আপনাকে চারটি শব্দ বলব: টার্ন দ্য ভলিউম আপ (আওয়াজ বাড়ান)।”
ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে মামদানি আরো বলেন, “আমাদের মধ্যে কারো কাছে আপনি পৌঁছাতে চাইলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”
সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি বলেন, “যদি কেউ এই জাতিকে দেখাতে পারে কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানো যায়, তবে সেটি সেই শহরই, যেখানে ট্রাম্পের উত্থান ঘটেছিল। রাজনীতির এই অন্ধকার সময়ে নিউইয়র্ক হবে আলোর প্রতীক।”
ব্রুকলিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে শ্রমজীবী মানুষকে ধনী ও ক্ষমতাবানরা বোঝাতে চেয়েছে যে ক্ষমতা তাদের হাতে নয়। কিন্তু গত এক বছরে আপনারা প্রমাণ করেছেন, আপনাদের হাতেই সেই ক্ষমতা। আজকের এই জয় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।”
মার্কিন রাজনীতিতে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত মামদানি। আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় জন্ম হলেও তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র। তার পিতা উগান্ডার বিখ্যাত লেখক মাহমুদ মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানি নিউ ইয়র্কের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাকে নানাভাবে নিশানা করে আসছিলেন ট্রাম্প। তাকে ‘১০০ শতাংশ উন্মাদ কমিউনিস্ট’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
‘কমিউনিস্ট’ প্রার্থী মামদানি ভোটে জিতলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, “যদি নিউ ইয়র্ক একটি কমিউনিস্ট মেয়র বেছে নেয়, তা হলে আমি ওই শহরের জন্য ফেডারেল অর্থবরাদ্দ বন্ধ করে দেব, যতক্ষণ না আইন আমাকে তা দিতে বাধ্য করছে।”
তবে ট্রাম্পের এই ধারাবাহিক আক্রমণের পরেও নিউ ইয়র্কের মেয়র পদের জন্য নির্বাচিত হলেন মামদানি। প্রায় এক বছর আগে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা মামদানির জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় উত্থান। একজন তুলনামূলক অখ্যাত স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে পৌঁছে গেলেন তিনি।
ঢাকা/ফিরোজ