নারীর লেন্সে সমাজটাকে দেখতে চাই
Published: 5th, November 2025 GMT
২০০৬ থেকে অভিনয় করছি। প্রচুর নাটকে কাজ করেছি। তারপর তো চলচ্চিত্রে এলাম। নাটক করতে করতে নাটকের অবস্থাটা বুঝেছি। তারপর যখন সিনেমা করতে শুরু করলাম, সিনেমার পরিস্থিতিটাও আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। এত বছরের পেশাজীবনে যে উপলব্ধিটা হয়েছে, সেটা হলো বাংলাদেশে নারীপ্রধান গল্পে কাজ হয় খুবই কম। এই কম হওয়ার পেছনে ইন্ডাস্ট্রির কিছু গাফিলতি আছে। এখানে যাঁরা টাকা লগ্নি করেন, সেই মানুষগুলোর মনমানসিকতারও কিছু সমস্যা আছে।
দর্শক চান না, প্রযোজকও বানান নাসুপারস্টারের ওপর লগ্নি করলে টাকা ফেরত আসে। তাই পুরুষপ্রধান চরিত্রের সিনেমার ওপর প্রযোজকেরা বেশি টাকা লগ্নি করেন। দায়বদ্ধতার বিষয়টা তাঁরা মাথায় রাখেন না। তাঁরা কিন্তু এটা মনে করেন না যে তাঁদেরও সমাজের জন্য কিছু করার আছে। আমি এখানে প্রযোজকদের বেশি করে সামনে আনতে চাই। কারণ আমি মনে করি, বাংলাদেশে প্রচুর মেধাবী পরিচালক আছেন, প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, যাঁরা ভালো কাজ করার জন্য, একটু ভিন্ন কিছু করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু প্রযোজক যাঁরা আছেন, তাঁরা টাকাটা লগ্নি করার জন্য প্রস্তুত নন। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসাটা খুব জরুরি।
দর্শকেরও দায় আছে। নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা দর্শক হলে গিয়ে দেখতে চান না। যে গল্পগুলো হচ্ছে, সেখানে কী ধরনের নারী চরিত্র আমরা দেখি? সেই নারী চরিত্রগুলোকেই দেখি, নারীদের যে রকম করে দেখতে চায় সমাজ। সমাজের ওই তথাকথিত নিয়মের মধ্যে পড়ে না, এ রকম নারীকে পর্দায় আমরা কিন্তু গ্রহণ করি না। রেহানা মরিয়ম নূর নিয়ে আমরা কান চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে এসেছি, এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি, দর্শক কিন্তু এ রকম একটা নারী চরিত্রকে গ্রহণ করেননি। কিন্তু আপনি দেখবেন, একটা পুরুষ চরিত্র যখন সহিংসতা করে বা রাগী একটা চরিত্র করে, সেটা কিন্তু খুব সহজে গ্রহণ করা হয়।
সমাজে আমরা যেটা করি, সিনেমা তা-ই প্রতিফলিত করে। আসলে নারীপ্রধান গল্প বা একটু ভিন্নধর্মী কাজ, যেখানে নারী চরিত্রকে তথাকথিত নারীর মতো দেখানো হবে না, এ রকম চরিত্র খুব একটা সামনে আসে না। কিন্তু এ রকম অজস্র গল্প আছে, বাঁধ ভাঙার গল্প, যেগুলো মানুষ পর্যন্ত পৌঁছানো উচিত।
তারপরও নারীপ্রধান কিছু গল্প এখন হচ্ছে। যেমন রেহানা মরিয়ম নূর, প্রিয় মালতী, বাড়ির নাম শাহানা। এই সিনেমাগুলোর প্রতিটির কেন্দ্রেই কিন্তু খুব শক্তিশালী নারী। আমি যখন কাজ শুরু করেছিলাম, এ ধরনের সিনেমা তখন খুব একটা দেখিনি। সাহস করে পরিচালকেরা এ ধরনের সিনেমা করার জন্য এগিয়ে আসতেন না।
কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যএকজন পুরুষ শিল্পী অভিনয় করে যে টাকা পান, গুটিকয় নারী তাঁর কাছাকাছি পারিশ্রমিক পান। হাতে গোনা চার-পাঁচজন এ রকম আছেন। সিনেমাতে এই তফাত ভীষণভাবে আছে। নাটকে কোনো কোনো নারী অভিনয়শিল্পী আছেন, যাঁরা সমান সমান পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটা ঘটে না।
কর্মক্ষেত্রটাও নারীর জন্য খুব প্রতিকূল। এমনিতেই মেয়েরা যখন বাসা থেকে বের হন, তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর প্রতিকূল জীবন। ইন্ডাস্ট্রিতেও যে খুব নিরাপদ একটা পরিবেশে কাজ করি, এ রকম নয়। নির্যাতিত হওয়ার অনেক ঘটনাও এখানে আছে। অনেক এক্সপ্লয়েট হওয়ার ঘটনা আছে। ম্যানিপুলেট হওয়ার ঘটনা আছে। তা ছাড়া রাত হয়ে গেলে বাসাতেও ঝামেলা হয়। অনেক মেয়েকে দেখবেন, যাঁরা পোশাকে কাজ করেন, রূপসজ্জায় কাজ করেন, শিল্পনির্দেশনার কাজ করেন; তাঁদের কিন্তু বাসা থেকে ঝামেলা হয় শুধু রাত হয়ে যায় বলে। আমাদের শুটিংগুলো দেখা যায় রাত করে হচ্ছে, ওঁদের কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এভাবে তাঁদের কাজের ক্ষেত্রটা অনেক ছোট হয়ে যায়। হয়তো তাঁর প্রতিভা আছে, কিন্তু কাজটা তিনি চালিয়ে যেতে পারেন না। পরিবার ওভাবে সহায়তা করে না।
নারীপ্রধান গল্পের সিনেমা দর্শক হলে গিয়ে দেখতে চান না, তারপরও নারীপ্রধান কিছু গল্প এখন হচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন য চর ত র ক জ কর এ রকম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্ন, সাহস আর নেতৃত্বের উৎসবে অনুপ্রাণিত হলো হাজারো মানুষ
দেশের তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে আবারও অনুষ্ঠিত হলো পাবলিক স্পিকিং ইভেন্ট ‘সুখী প্রেজেন্টস রাইজ অ্যাবাভ অল ২০২৫ পাওয়ার্ড বাই এমটিবি।’ ৩১ অক্টোবর ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে একত্র হয়েছিলেন হাজারো শিক্ষার্থী, তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হকের অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। এরপর লিডারশিপ, লেগে থাকা ও লক্ষ্য তৈরি করা নিয়ে আলোচনা করেন ব্যাংকিং খাতের মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদ, নাসের এজাজ ও নাসিমুল বাতেন।
আরও পড়ুন‘সেক্সিয়েস্ট ম্যান’ খেতাব পেলেন যে তারকা৮ ঘণ্টা আগে‘ব্যাংকিং লিজেন্ডারি ডুয়ো’ সেশনে কীভাবে নৈতিকতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে সহজে নেতৃত্বের পথে এগিয়ে থাকা যায়, সে বিষয়ে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও আলি রেজা ইফতেখার তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
এদিন তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে উপস্থিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পী আরিফিন শুভ ও তাসনিয়া ফারিন। নিজের সংগ্রাম ও শেখার গল্প বলে বাকিদের অনুপ্রাণিত করেন শুভ। আর ফারিন বলেন, ‘তুমি যদি নিজের স্বপ্নে বিশ্বাস রাখো, তবে সবকিছুই সম্ভব।’
সারা দিন টেকনোলজি, স্টার্টআপ, ইনফ্লুয়েন্সার কালচার আর হোলিস্টিক ওয়েলনেস–বিষয়ক বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণকারীরা পেয়েছেন ব্যবহারিক জ্ঞান ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। দিনভর এ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হয় নেমেসিস ব্যান্ডের পরিবেশনার মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ছিল প্রথম আলো ডটকম।
আরও পড়ুনব্যাগ বিক্রি করেই কালিন্দীর মাসে আয় আট লাখ টাকা৯ ঘণ্টা আগে