নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটাররা ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করে কী বার্তা দিলেন
Published: 5th, November 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলজুড়ে ভোটাররা মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটদের জয় এনে দিয়েছেন। এই ফলাফল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের এক বছরের মধ্যেই তাঁর প্রতি মানুষের অসন্তোষের সুস্পষ্ট প্রকাশ বলা চলে।
ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে মধ্যপন্থী প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য অ্যাবিগাইল স্প্যানবার্গার রাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে সহজেই জয়ী হয়েছেন।
নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের আরেক মধ্যপন্থী প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মিকি শেরিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক সিয়াটারেলি হারিয়ে দিয়েছেন।
নিউইয়র্ক নগরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোরান মামদানি এই বছর দ্বিতীয়বারের মতো সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়েছেন। প্রথমে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে এবং তারপর সাধারণ নির্বাচনে। সাধারণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন পেয়েছিলেন।
তীক্ষ্ণ আদর্শগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের এসব জয় তাঁদের দলের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ বিতর্ককে খুব একটা মীমাংসা করতে পারবে না। সেই বিতর্ক হচ্ছে, তাঁদের কোন পথে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, কয়েক মাসের মধ্যেই একাধিক মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রাইমারিও আসন্ন।
তবে ডেমোক্র্যাটদের সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারে কিছু বিষয়ে মিল ছিল। যদিও সমাধানের পথ তাঁরা ভিন্ন ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। প্রার্থীরা মানুষের সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচক ছিলেন।
নিউইয়র্কের প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ জোহরান মামদানির বিজয় সমাবেশ থেকে সিএনএনকে বলেছেন, ‘এটি শুধু ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে একটি বার্তা নয়; বরং গোটা দেশের জন্য একটি বার্তা। আমি মনে করি, মার্কিনরা এই প্রশাসনের কাছ থেকে যা দেখছেন, তাতে আতঙ্কিত।’
ক্যালিফোর্নিয়ায় ভোটাররা ‘ভোট পুনর্বিন্যাস’ ব্যালটের পদক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী বছর কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাটদের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
পেনসিলভানিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের ডেমোক্র্যাট বিচারপতিরা পুনর্নিয়োগের ভোটে জয় পেয়েছেন। ফলে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় থাকছে। এই অঙ্গরাজ্য সব সময় রাজনৈতিক লড়াইয়ের কেন্দ্র, যেখানে ভোটের নিয়ম নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ দেখা যায়।
কুমোকে আবার হারালেন মামদানি
মামদানি তাঁর প্রগতিশীল ভাবনা ও নতুন নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতির দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। নিউইয়র্ক নগরে তিনি মানুষের জীবনযাত্রার খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন, যা ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। ভোটাররা তাঁর পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নিতে একাধিক প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন, যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়ি নির্মাণের জটিল নিয়মগুলো সহজ করা যায়।
জোহরান যদি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেন, তাহলে নিউইয়র্ক নগর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে, বিশেষ করে যেখানে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য এটি একধরনের সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিজয় মঞ্চে নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক পার্টির নবনির্বাচিত গভর্নর মিকি শেরিল। ৪ নভেম্বর ২০২৫, ইস্ট ব্রান্সউইক.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তোমাদের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত: মা–বাবার উদ্দেশে জোহরান মামদানি
ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্ক নগরের প্রথম মেয়র মুসলিম হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জোহরান মামদানি ধন্যবাদ জানালেন তাঁর স্ত্রী ও মা–বাবাকে।
নির্বাচনে জয়ী ঘোষণার পর আবেগঘন এক ভাষণে জোহরান তাঁর মা-বাবা ও স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন।
জোহরান মা-বাবাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আজ আমি যে মানুষ হয়েছি, তা তোমাদের জন্যই। তোমাদের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত।’
স্ত্রী রামাকে উদ্দেশ করে জোহরান বলেন, ‘এই মুহূর্তে ও জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে পাশে পেতে চাই। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত।’
ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জোহরান মামদানি গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউইয়র্ক নগরের ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে জোহরান শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন।
একই সঙ্গে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী কোনো অভিবাসী প্রথম নিউইয়র্কের মেয়র হলেন। শুধু তাই নয়, এক শতাব্দীর মধ্যে জোহরান হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র।