আগেকার সময়ে কথা, কাজ, অঙ্গভঙ্গি, সাংকেতিক চিহ্ন, ছবি, কার্টুন কিংবা পত্রিকার ছাপার অক্ষরের মাধ্যমে মানহানি করা যেত। এর প্রতিকার দণ্ডবিধিতে আছে। ডিজিটাল যুগে পদার্পণের পর মানহানি করা বা ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাবিধ ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো মোকাবিলায় সাইবার নিরাপত্তা-বিষয়ক বিশেষ আইন প্রণীত হয়। দণ্ডবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শর্টকাট রাস্তা তৈরি করে সাধারণ প্রকৃতির অপরাধের শাস্তি দিতেও এই বিশেষ আইন ব্যবহার করায় বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে সাইবার-সংক্রান্ত আইনের কিছু ধারা বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ এবং সিভিল সোসাইটিতে এর ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ কারণে আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, সাইবার সিকিউরিটি আইন ২০২৩ নামে কয়েকবার একই আইনকে নতুনভাবে জারি করতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই বিতর্কিত ধারাগুলো বিলুপ্ত না হয়ে অন্য কায়দায় আইনের অন্যত্র স্থাপিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আইনের ৬১ নম্বর ধারার মাধ্যমে ২০০৬ সালের আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ এবং ৬৬ ধারা বাতিল করা হলেও ২০১৮ সালের আইনের ২১, ২৫, ২৯, ৩১, ৩২, ৩৩ ধারা বিতর্কিতই থেকে যায়। একইভাবে ২০২৩ সালের আইন জারি করে ২০১৮ সালের আইন বাতিল করা হয়। কিন্তু এ আইনের ২১, ২৫, ৩১ ধারা পূর্বের বিলুপ্ত আইনের নতুন সংস্করণ বলে দাবি করলে অত্যুক্তি হবে না। এই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে। এখন এ আইনে ১৭ থেকে ৩০ ধারা পর্যন্ত হ্যাকিং, সাইবার সন্ত্রাস, পর্নোগ্রাফি, শিশু পর্নোগ্রাফি, সাইবার স্পেস ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতি বা প্রতারণা, ইত্যাদি অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হলেও বিলুপ্ত পূর্ববর্তী আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ফলে সাইবার স্পেস ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফেক ভিডিও এবং মিথ্যা কনটেন্ট দিয়ে অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মানহানি করা, সুনাম নষ্ট করা বা সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করার অপরাধের বিচার হবে এখন দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারা থেকে ৫০৯ ধারার আলোকে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি ‘যে লাউ সে-ই কদু’ই থেকে গেল না? এর উত্তর, অপরাধজনক কাজ হলে সভ্য সমাজ তাকে বাহবা দিতে পারে না।
অন্যদিকে সৎ উদ্দেশ্যে কৃত কাজের সুরক্ষা পাওয়া দরকার। এই বিবেচনায় দণ্ডবিধি অনেক বেশি বাস্তবতানির্ভর আইন। দণ্ডবিধির মানহানি-সংক্রান্ত ধারায় ৯টি ব্যতিক্রমের ফিরিস্তি ও উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, কোনটি মানহানি এবং কোনটি মানহানি নয়। আবার অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শন বা সামাজিক শান্তি বিনষ্ট-সংক্রান্ত ধারাগুলোতে একইভাবে ব্যতিক্রম উল্লেখ করে এবং উদাহরণ দিয়ে অপরাধের সীমারেখা টানা হয়েছে। এসব সঠিকভাবে বিবেচিত হলে সমাজের উপকারের জন্য সমালোচনাকে ক্ষুদ্র স্বার্থে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব নয়।
দণ্ডবিধি প্রণয়নের যুগে ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন দেখার সুযোগ ছিল না। তাই সে আইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমের উল্লেখ থাকার সুযোগ ছিল না। এখন অন্য কোনো আইনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে হস্তক্ষেপ করা না হয়ে থাকলে দণ্ডবিধির ৪৯৯-৫০৯ ধারার যেখানে প্রযোজ্য সেখানে সংশোধনী এনে বলতে হবে, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অডিও, ভিডিও বা ডিজিটাল রেকর্ড সৃষ্টি করে অপরাধজনক কনটেন্ট ব্যবহৃত হলে সেটাও অপরাধের সংগঠক হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে বিষয়টি সম্পর্কে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না।
গাজী মিজানুর রহমান: সাবেক অতিরিক্ত সচিব
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ল র আইন ব তর ক ত অপর ধ র আইন র ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ না খেলার শঙ্কায় ইতালি, ২৮ বছর পর নরওয়েকে বিশ্বকাপে ফেরালেন হলান্ড
সরাসরি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে নরওয়ের বিপক্ষে গতকাল রোববার রাতে ইতালিকে জিততে হতো বড় ব্যবধানে। কিন্তু বড় ব্যবধানে দূরে থাক, উল্টো নরওয়ের বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি ইতালি। ঘরের মাঠে উড়ে গেছে ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে।
এই হারের পর ইতালির এখন আর সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই। প্লে-অফের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। অন্য দিকে বাছাইপর্বে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরল নরওয়ে। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিল দেশটি। এবার আর্লিং হলান্ড-আলেক্সান্দার সরলথদের হাত ধরে বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্ন পূরণ করল দেশটি।
সান সিরোতে গতকাল গোলের শুরুটা অবশ্য ইতালিই করেছিল। ফ্রান্সিসকো পিও এসপোসিতোর গোলে ১১ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। এরপর ম্যাচের ৬৩ মিনিট পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারে ‘আজ্জুরি’রা। কিন্তু ৬৩ মিনিট থেকে দেখা মেলে অন্য এক নরওয়ের। প্রথমে গোল করে নরওয়েকে সমতায় ফেরান আন্তোনিও নুসা। এরপর এক মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করেন হলান্ড। আর যোগ করা সময়ে ইতালির জালে চতুর্থবার বল জড়ান স্ট্রান্ড লারসেন।
আরও পড়ুনহলান্ড এখন মেসি–রোনালদোর পর্যায়ে০৩ নভেম্বর ২০২৫এই ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে গ্রুপ ‘আই’-এর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লড়াই। যেখানে ৮ ম্যাচের সব কটিতে জিতে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল নরওয়ে। সমান ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইতালি আছে দুইয়ে।
এর ফলে ২০১৮ ও ২০২২–এর পর এখন ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়েও শঙ্কায় পড়ল ইতালি। চারবারের বিশ্বকাপজয়ীদের প্লে-অফ অভিজ্ঞতাও কিন্তু সুখকর নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপে ওঠার লড়াইয়ে প্লে-অফে তারা সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল। চার বছর পর ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও ভেঙে যায় প্লে-অফে উত্তর মেসিডোনিয়ার কাছে ১-০ গোলের হারে।
হলান্ডদের উদ্যাপন