মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় কমিরুল মোল্যা (৩০) নামের এক যুবককে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার মহম্মদপুর থানায় মামলাটি করেন তাঁর ভাই জমিরুল মোল্যা।

স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাড়ীখালী উত্তরপাড়া এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে কমিরুলকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের হত্যাচেষ্টা করা হয়। পরে মৃত ভেবে তাঁর শরীরের অধিকাংশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি টের পেয়ে তাঁকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় করা মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

কমিরুল মোল্যা একই উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক মোল্যার ছেলে। বর্তমানে তিনি মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার প্রধান আসামির নাম আবদুল্লাহ (৩২)। তিনি রাড়ীখালী উত্তরপাড়ার বাসিন্দা।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় কমিরুল মোল্যা আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন (১৯ জুন) দুপুরে বাড়ি থেকে রাড়ীখালী বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। রাড়ীখালী উত্তরপাড়া এলাকায় পৌঁছালে ওই গ্রামের আবদুল্লাহ নামের এক যুবক তাঁকে ঝাড় থেকে কাটা বাঁশ বের করে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাঁকে পেছন থেকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করেন। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কমিরুলের দাবি, ‘গত ৫ আগস্টের পর ওই ছেলের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। আমার ধারণা, এ কারণেই আমাকে খুন করতে চেয়েছিল।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আবদুল্লাহসহ আরও পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে কমিরুলের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করেন। এরপর তাঁকে মৃত ভেবে শরীরে অধিকাংশ মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান। কেবল তাঁর পায়ের অংশ মাটির ওপরে ছিল। প্রতিবেশী এক শিশু বিষয়টি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়। শিশুটির পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের এক চিকিৎসক আজ সকালে বলেন, কমিরুলের এখনো গলায় ব্যথা আছে এবং শ্বাস রোধ করার কারণে তাঁর চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এ কারণে তাঁকে চক্ষুবিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নেই।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, গতকাল ওই যুবকের ভাই ছয়জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে এ মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম র ল

এছাড়াও পড়ুন:

ওজুর ফরজ কয়টি

ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)

ওজুর ফরজ কয়টি

ওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—

১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।

২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।

৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।

৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।

আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যা

ফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।

১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)

৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)

৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)

আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শ

ওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:

সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।

পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)

কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।

ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতা

পূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।

ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।

পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।

নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।

(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)

ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ