সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ধর্ষণ মামলার বাদীর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, নোবেল কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি। মামলাটি বিচারাধীন ছিল।

আসামি নোবেলের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে বাদীকে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। পরবর্তী সময় বাদী ও আসামি উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সংবাদমাধ্যমগুলোয় ফলাও করে ছাপানো হয়েছে সংবাদটি। কিছু সংবাদ পরিবেশনের ধরন দেখে মনে হয়েছে, যেন তারা নোবেলের কোনো সাফল্যের সংবাদ পরিবেশন করছে। সংবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নোবেলের বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা ঝলমলে ছবি।

এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কারাগার ও আদালত প্রাঙ্গণে এর আগেও বহুবার ঘটেছে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারী কিংবা কন্যাশিশুর বিয়ের ঘটনা। প্রশ্ন হলো, আর কতকাল ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারী কিংবা কন্যাশিশুর বিয়ের ঘটনার সাক্ষী হতে হবে আমাদের?

বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধকে সামাজিক ও আইনগতভাবে বৈধতা দেওয়ার ফলে পার পেয়ে যায় নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, অখ্যাত থেকে বিখ্যাত অনেকেই। বিয়ের মাধ্যমে জামিন লাভ করা যায় সহজেই।

কখনো সালিস কিংবা আপস–মীমাংসার মাধ্যমে, কখনো চড়–থাপ্পড় দিয়ে, কখনো জরিমানা করে, আবার কখনো বিয়ের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। এ ধরনের দৃষ্টান্ত দেখে আশকারা পেয়ে অনেক অপরাধী এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। কারা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে কারাগারের গেটে তাই বিয়ের এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত নিন্দনীয়।

ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে বিয়ে দিলেই ধর্ষণের অপরাধ কমে যায় না। অপরাধের জায়গাতেই থাকে। তাই বাদীপক্ষ চাইলেও আইন তার অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে না। যা অপরাধ, তা অপরাধই

ধর্ষণ জঘন্যতম ফৌজদারি অপরাধের একটি। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ, যেখানে আপস-মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই। অথচ আমরা হরহামেশা তেমন ঘটনাই দেখতে পাচ্ছি। এমন গুরুতর একটি অপরাধ কীভাবে জামিনযোগ্য হতে পারে? বিয়ে বিষয়টিকে জামিনের একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে অপরাধীরা। বিয়ে দিয়েই যদি ধর্ষণের মতো একটি
অপরাধ থেকে পার পাওয়া যায়, তবে আইন–আদালতের প্রয়োজন কী?

আরও পড়ুনধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার শিশু ও নারীর বিয়ে কীভাবে সম্ভব২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

অনেকে বলবেন, এই বিয়েতে বাদীর সম্মতি ছিল। কিন্তু কী কারণে ও কোন পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শিকার একজন নারী এ ধরনের বিয়েতে সম্মতি দেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পারিবারিক ও সামাজিক প্রবল চাপের কাছে মাথা নত করেন অনেকেই। সামাজিক ও পারিবারিক সম্মান রক্ষার প্রত্যাশার কাছে পরাজিত হয়ে তাঁরা মেনে নেন অসম্মান আর গ্লানিতে পূর্ণ এক জীবন। এক ধর্ষণের লজ্জা থেকে মুক্ত হতে গিয়ে বিয়ের চক্রে আবদ্ধ হয়ে সহস্রবার ধর্ষণের শিকার হন তাঁরা। মেনে নেন ধর্ষণকারীর সঙ্গে জীবন পার করার মতো অভিশাপ।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ব্যক্তি কিংবা পরিবারের দাবির কাছে কেন মাথা নত করবে আইন-আদালত। আইন থাকবে তার নিজের জায়গায়, চলবে তার নিজস্ব গতিতে। ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে বিয়ে দিলেই ধর্ষণের অপরাধ কমে যায় না। অপরাধের জায়গাতেই থাকে। তাই বাদীপক্ষ চাইলেও আইন তার অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে না। যা অপরাধ, তা অপরাধই।

পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, যে পক্ষেরই চাপ থাকুক না কেন, ধর্ষণের মতো একটি গুরুতর অভিযোগ তুলে নেওয়ার বিষয়টি আইনসম্মত হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশের আইনে বলা হয়েছে, ধর্ষণ বা ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় কোনো আপস-মীমাংসার প্রশ্নই আসে না। আদালতের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে কারাগার প্রাঙ্গণে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে দেওয়ার এ ধরনের ঘটনা খুবই অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয়।

এমনিতেই থামানো যাচ্ছে না ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো। ধর্ষণের ঘটনায় মাত্র ৩ শতাংশ আসামি সাজাপ্রাপ্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আদালতে বিয়ের আদেশের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার আপস নিষ্পত্তির মতো ঘটনাগুলো নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততাকে চোখে আঙুল দিয়ে আরেকবার দেখিয়ে দেয়।

নিশাত সুলতানা লেখক ও উন্নয়নকর্মী

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ র এ ধরন র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ঘ, আহত ৩০

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে দুটি গ্রামের বাসিন্দার সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জন টেঁটাবিদ্ধ হন। সোমবার দুপুরে বালুচর ইউনিয়নের বালুচর বাজারে মোল্লাকান্দি ও খাসমহল গ্রামবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাজারের ১০টা দোকানপাটেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। 

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মোল্লাকান্দির বাসিন্দা শাহীন ব্যাপারীর একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ রয়েছে বালুচর বাজারে। তাঁর কাছে ৬ মাসের বিল পায় বিদ্যুৎ বিভাগ। সোমবার দুপুরে সেই বিলের জন্য তাগাদা দিতে আসেন এক কর্মকর্তা। এ সময় শাহীনের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, তর্কাতর্কির সময় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তার পক্ষ নেন খাসমহল বালুচরের সুলতান সর্দার (৪০)। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে শাহীনের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার জেরে মোল্লাকান্দি ও খাসমহল বালুচরের বাসিন্দার মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় ৬ জন টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। টেঁটাবিদ্ধ ৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

বালুচর ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেনের ভাষ্য, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে ২০-৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে শুনেছেন। এখন পরিস্থিতি শান্ত। 

সিরাজদীখান থানার ওসি শাহেদ আল মামুন বলেন, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা বালুচর বাজারে আছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ