বাংলাদেশের আকাশে আজ ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ২৭ জুন শুক্রবার থেকে পবিত্র মহররম মাস গণনা করা হবে। সেই হিসাবে আগামী ৬ জুলাই রোববার পবিত্র আশুরা পালিত হবে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সভাকক্ষে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। আর মহররম অর্থ সম্মানিত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.
শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়। শিয়া সম্প্রদায় এদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে তাজিয়া মিছিল উল্লেখযোগ্য।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, আজ ২৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল ২৭ জুন শুক্রবার থেকে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র মহররম মাস গণনা শুরু হবে। সেই হিসাবে আগামী ১০ মহররম (৬ জুলাই) পবিত্র আশুরা পালিত হবে।
সভায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আ. ছালাম খান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মিজানুর রহমান, ওয়াক্ফ প্রশাসক মো. নূর-ই-আলম, তথ্য অধিদপ্তরের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সরকার, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজ চৌধুরী, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সহকারী পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন, চরমোনাই আহছানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ ফারুক, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল হক, জমিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়ার সহকারী অধ্যক্ষ আব্দুল গাফফার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিপিজের উদ্বেগ
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন সিপিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
গতকাল গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া নিহত হয়েছেন। আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে তাঁদের সংবাদকর্মীদের ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে এই হামলা চালানো হয়।
সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ।সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রবণতা হলো, তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে, কিন্তু তার পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখায় না। শরিফের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তিনি হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানোর কাজে সহযোগিতা করছিলেন।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, ইসরায়েল কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখানো ছাড়াই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর এতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সারা আরও বলেন, সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।সারা কুদাহ, সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালকসিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ। খুব সম্প্রতি শরিফ গাজার মানুষের অনাহারে থাকা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা অনাহারে ভুগছেন।
গত ২৪ জুলাই এক ভিডিওতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি অভিযোগ করেন, আল-শরিফ ২০১৩ সাল থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসামের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যুদ্ধ চলাকালে শরিফ ‘সবচেয়ে অপরাধমূলক আক্রমণাত্মক চ্যানেল’-এর জন্য কাজ করছেন।
জুলাইয়ে আল-শরিফ সিপিজেকে বলেছিলেন, আদরায়ির এ প্রচার শুধু গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি বা সুনাম নষ্ট করাই নয়, এটি বাস্তব জীবনের জন্য একটি হুমকি।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার আগে কী লিখে গেছেন সাংবাদিক শরীফ১ ঘণ্টা আগেআল–শরিফ তখন আরও বলেন, ‘আমি এসব কিছু করছি, কারণ আমার প্রতিবেদন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদারদের অন্যায় কাজগুলো তুলে ধরছে, যা তাদের জন্য ক্ষতির। তারা আমাকে সন্ত্রাসী বলছে, কারণ দখলদারেরা আমাকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চাইছে।’
সিপিজে বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে মোট ১৮৬ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৭৮ জনই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। তাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।