তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ
Published: 8th, July 2025 GMT
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশ করা হয়।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি বিষয় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে এনেছেন আদালত।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। এই গণতন্ত্র বিকশিত হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার কোনও প্রতিফলন হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আত্মবিশ্বাস জনগণের মধ্যে জন্ম নেয়নি। যার ফলশ্রুতিতে হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, অনুচ্ছেদ দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র। পঞ্চদশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল।
রায়ে আদালত বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত আরও বলেছেন, সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে। এর মধ্যে জাতির পিতার স্বীকৃতির বিষয়, ২৬ মার্চের ভাষণের বিষয়গুলো রয়েছে।
গণভোটের বিষয়ে রায়ে হাইকোর্ট বলেন, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যেটি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো।
হাইকোর্টের রায়ে ৭ ক, ৭ খ এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে। ৭ ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ এবং ৭ খ সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা ছিল। এদিকে ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে বলা আছে। ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ বলছে, এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনও আদালতকে তার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সব বা এর যেকোনও ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করতে পারবেন। এই অনুচ্ছেদটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র য় প রক শ ক সরক র ব যবস থ গণভ ট র ব অন চ ছ দ ব চ রপত জনগণ র
এছাড়াও পড়ুন:
আনিসুল-মঞ্জুর নেতৃত্বে নির্বাচনী জোটে একমত ১৬ দল, মুখপাত্র রুহুল আমিন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠিত হচ্ছে। জোটের মুখপাত্র করা হচ্ছে জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এই জোটের সম্ভাব্য নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাপার উদ্যোগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। জাপার (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জোটে অন্তর্ভুক্ত সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করা হবে।
সভায় জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী সেসব দলের সঙ্গে একটি বৃহত্তর জোট গঠন করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ১৬টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বৃহত্তর জোট গঠন করার লক্ষ্যে একমত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে এ জোটের আত্মপ্রকাশ হতে পারে।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, যদি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, তাহলে দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনের মতো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি হয়নি।
মতবিনিময় সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবার মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারপরও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দেশের জনগণের কাছে একটি তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনীতি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে দলগুলোর। দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলে ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুনআনিসুলের জাতীয় পার্টি ও জেপি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, নতুন জোট গঠনেরও উদ্যোগ২৭ নভেম্বর ২০২৫আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, জোটের মূলমন্ত্র হবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক, জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম, মহাসচিব জাফর আহমেদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি মহসিন রশিদ, গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশের নির্বাহী সভাপতি আশরাফুল হক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকান্দার আলী মনি, বাংলাদেশ ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু।