সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সদর বাজারের অভ্যন্তরে খাদ্যগুদামের সামনের রাস্তাটি প্রায় ৫০ মিটার। এই ছোট অংশটুকুর নির্মাণকাজ ঝুলে থাকায় দুর্ভোগ কমছে না স্থানীয়দের।
সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে যেমন তৈরি হয় জলাবদ্ধতা, তেমনি পানি শুকিয়ে গেলে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে স্বাভবিক চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্থানীয়দের কয়েকজন বলেন, মাত্র ৫০ মিটার রাস্তার জন্য ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়েছে। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। দ্রুত ওই অংশের কাজ শেষ করা দরকার।
এলজিইডির হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালে ধর্মপাশা থানার সামনে থেকে বাহুটিয়াকান্দা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক নির্মাণ এবং ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের শয়তানখালী সেতু নির্মাণ ও একটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় সুনামগঞ্জের মাহবুব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই বছরের ২৬ মার্চ কার্যাদেশ দিলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য গত বছর বাজারের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনও করেন। পরে সময় বর্ধিত করা হয়। ইতোমধ্যে থানার সামনে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলেও খাদ্যগুদামের সামনে প্রায় ৫০ মিটার জায়গার কাজ এখনও বাকি। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ওই অংশে সড়কটি প্রশস্ত করতে হলে খাদ্যগুদামের সীমানাপ্রাচীর ভাঙার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে সীমানাপ্রাচীর ভাঙার ব্যাপারে অনুমতি না মেলায় কাজ করা যায়নি।
ধর্মপাশা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পুরোনো সীমানাপ্রাচীরের অভ্যন্তরে এলজিইডির নিজ খরচে নতুন একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়া সাপেক্ষে সড়ক প্রশস্তকরণের ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়া গেছে।
উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন বলেন, বাজারের প্রধান সড়কটির বিভিন্ন জায়গা কিছু ব্যবসায়ীর দখলে রয়েছে। খাদ্যগুদামের সামনের অংশের কাজ না হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি এবং জরুরি প্রয়োজনে বাজারের অভ্যন্তরে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সড়ক থেকে দখল উচ্ছেদসহ খাদ্যগুদামের সামনের অংশের কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, খাদ্যগুদামের সীমানাপ্রাচীরের কারণে সড়কটি প্রশস্ত করা যাচ্ছিল না। সীমানাপ্রাচীর সরানোর অনুমতি দেরিতে পাওয়ায় কাজটি শেষ করতে দেরি হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ ৫০ ম ট র শ ষ কর ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত অন্তত ১৭
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানে ১০ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছে কাবুল। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুই পক্ষই জানায়, অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়াতে রাজি তারা।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রথম দফার বৈঠক করেছে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
এদিকে গতকাল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। এটা ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে উদ্বেগজনক।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আফগান উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ নবি ওমরি। তিনি বলেছেন, কাবুল কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি। এসব গোষ্ঠীকে সমর্থনও করে না।
আফগানিস্তানে তিন স্থানে হামলাযুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল জানায়, দেশটির পাকতিকা প্রদেশের পৃথক তিন স্থানে পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদউল্লাহ আমিনি বলেন, পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন বারমাল, উরগুন ও খানাদার এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
পাকতিকার প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলায় স্থানীয় তিন ক্রিকেটারসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সাইয়েদ নাসিম সাদাত জানান, হামলায় নিহত সেই তিন ক্রিকেটার একটি ম্যাচ শেষে উরগুনে ফিরছিলেন।
গতকাল আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে কাবুল। তবে শান্তি আলোচনার বিষয়টি ভেবেই তাদের বাহিনীকে পাল্টা হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান বলছে ‘জঙ্গি আস্তানা’এর আগে গতকাল পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আফগান সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। এতে পাকিস্তানি সাত সেনা নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলী শহরে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা ইরফান আলী।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলাটি চালায় পাকিস্তানের নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ। এর জবাব দিতেই আফগানিস্তানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা নিশানা করে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতি তো আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে হয়নি, যারা পাকিস্তানে হামলা চালায়।
দোহায় শান্তি আলোচনাগতকাল দোহায় প্রথম ধাপের বৈঠকের পর ইসলামাবাদ বা কাবুল এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গতকাল রাতে জানায়, দুই দেশের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হয়েছে।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি ‘অগ্রহণযোগ্য’। আজ সকালে আবার দুই পক্ষ বৈঠকে বসবে।
পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। আরও রয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক। আফগান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।
বৈঠক শুরুর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, আলোচনায় মূলত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অবসান এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে গুরুত্ব দেওয়া হবে।