যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে হোয়াইট হাউসে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। সৌদি যুবরাজের এই সফর রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে স্বাগত জানাতে লালগালিচা বিছিয়ে দেয়। ট্রাম্প তাঁকে এমন এক অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান, যেখানে ছিল বাদক দল, পতাকাবাহী অশ্বারোহী বাহিনী এবং সামরিক বিমানের প্রদর্শনী।

এই বিলাসবহুল আতিথেয়তার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন রূপে গড়তে চাইছেন, যেখানে থাকবে আর্থিক বিনিয়োগ এবং এ অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গে মার্কিন অংশীদারত্ব। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের বিষয়টি এর কেন্দ্রে থাকবে।

মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ট্রাম্প দুজনই ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন এবং উত্তর দিয়েছেন।

ট্রাম্প এবং মোহাম্মদের বৈঠক থেকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে মার্কিন-সৌদি প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার বিষয়টি রয়েছে।

ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প বারবারই বলেছেন, তিনি চাইছেন সৌদি আরব তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিক। ওই চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদ এবং ট্রাম্প এ বিষয়ে সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেননি তাঁরা। সম্ভাব্য সময়সূচি সম্পর্কেও কিছু বলেননি।

তবে যুবরাজ আবারও উল্লেখ করেছেন, সম্ভাব্য কোনো চুক্তির অংশ হিসেবে রিয়াদ একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতি চায়।

সাংবাদিকদের যুবরাজ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটা ভালো এবং আমরাও আব্রাহাম চুক্তির অংশ হতে চাই। তবে আমরা একই সঙ্গে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য একটি সুস্পষ্ট পথ নিশ্চিত করতে চাই। এ নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আজ প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এর ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব সঠিক পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করতে হবে।’

সৌদি কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন, আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি রিয়াদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরব শান্তি উদ্যোগে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্ত হিসেবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, এ বিষয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এক রাষ্ট্র ও দুই রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে কথা বলেছি। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিছুদিনের মধ্যে আমরা এ নিয়ে আরও আলোচনা করব।’

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প বারবারই বলেছেন যে তিনি চাইছেন সৌদি আরব তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিক। ওই চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদ এবং ট্রাম্প এ বিষয়ে সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ন্যাটোর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ঘোষণা

হোয়াইট হাউসে গতকাল সৌদি যুবরাজের জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদকে ‘ন্যাটোর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র’ (নন-ন্যাটো মেজর অ্যালাই) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এ ধরনের স্বীকৃতি পাওয়া দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম পাওয়া, বিক্রি ও অন্যান্য সহযোগিতা পাওয়াটা সহজ হয়। তা ছাড়া এ ধরনের দেশগুলোকে জটিল লাইসেন্স প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় না। অথচ অন্যান্য দেশকে অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থা কেনার সময় জটিল প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়।

সৌদি আরবের আগে ‘ন্যাটোর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়া দেশের সংখ্যা ছিল ১৯। এগুলো হলো আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মিসর, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, কেনিয়া, কুয়েত, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও তিউনিসিয়া। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকেও এই মর্যাদার সমতুল্য বলে বিবেচনা করে।

হোয়াইট হাউস আলাদা করে দেওয়া এক ঘোষণায় বলেছে, ট্রাম্প ও সৌদি যুবরাজ বিন সালমান একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এটি ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রতিরোধ সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

অবশ্য চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

আরও পড়ুনসৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ঘোষণা করলেন ট্রাম্প৮ ঘণ্টা আগে

পাকিস্তানের সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক সপ্তাহের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করল সৌদি আরব। সেপ্টেম্বরে কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর উপসাগরীয় মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। ওই হামলার পর সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তিটি হয়েছিল।

গত সোমবার ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, তিনি সৌদি আরবের কাছে মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দেবেন।

বৈঠকে সৌদি যুবরাজকে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা চাইবে আপনাদের কম সক্ষমতাসম্পন্ন বিমান দেওয়া হোক। আমি মনে করি, এটা আপনাদের খুব একটা খুশি করবে না।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তারা (সৌদি আরব) চমৎকার মিত্র। ইসরায়েলও চমৎকার মিত্র। আমরা ঠিক এখন এ বিষয়টি বিবেচনা করছি। কিন্তু আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি উভয়েরই সর্বোচ্চ মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’

হোয়াইট হাউসে গতকাল সৌদি যুবরাজের জন্য একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদকে ‘ন্যাটোর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র’ (নন-ন্যাটো মেজর অ্যালাই) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

ট্রাম্পের দাবি, ইরান চায় চুক্তি

ট্রাম্প আবারও গত জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা এটা সবার পক্ষ থেকে করেছি এবং ফলাফল অসাধারণ ছিল। কারণ, আমাদের আছে সেরা পাইলট, সেরা সরঞ্জাম, সেরা যুদ্ধবিমান এবং সেরা সবকিছু।’

পরে ইরান সম্পর্কে সুর নরম করে ট্রাম্প বলেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে চাইছে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে একেবারেই পথ খোলা রেখেছি এবং আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইরানের সঙ্গে চুক্তি হওয়াটা ভালো হবে। যুদ্ধের আগে আমরা এটা করতে পারতাম, কিন্তু সম্ভব হয়নি। আমি মনে করি, সেখানে কিছু ঘটবেই।’

সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থা এসপিএর খবরে বলা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের কাছ থেকে একটি হাতে লেখা চিঠি পেয়েছিলেন। তবে চিঠির বিস্তারিত জানানো হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তিকে সমর্থন জানাবে।

যুবরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চুক্তিতে সহায়তা করতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাব। আমরা বিশ্বাস করি, একটা ফলপ্রসূ চুক্তি হওয়াটা ইরানের ভবিষ্যতের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। যদি একটি চুক্তি হয়, তাহলে তা অঞ্চল, বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রকেও সন্তুষ্ট করবে।’

হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে বৈঠক হয়। ১৮ নভেম্বর, ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র স য বর জ র ইসর য় ল র জন য উল ল খ হয় ছ ল আরব র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি নিয়ে বিদেশে যেতে অনলাইন সেবা মিলবে বিনা পয়সায়

কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়াকে একটি ডিজিটাল কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসেছে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি)। বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা বিনা পয়সায় পাবেন এই অনলাইন সেবা। এর মধ্য দিয়ে সরাসরি চাকরির আবেদনের সুযোগ পাবেন কর্মীরা। কম খরচে, সহজে বিদেশে যেতে সহায়তা করবে এ সেবা। কমবে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে এ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে পুরো অভিবাসনপ্রক্রিয়ার বিভিন্ন পক্ষ।

জাতীয় সমন্বিত এ ডিজিটাল গেটওয়েতে যুক্ত থাকছে বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মী, রিক্রুটিং এজেন্সি, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র (টিটিসি), বিদেশি নিয়োগকর্তা, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং প্রত্যাবর্তন বা পুনর্বাসন সেবা প্রদানকারী সংস্থা।

বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা এ প্ল্যাটফর্মে গিয়ে শুরুতে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। এতে তাঁর নামে একটি প্রোফাইল চালু হবে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য যুক্ত করতে হবে। এরপর অনলাইনেই ২০০ টাকা ফি দিয়ে বিএমইটি নিবন্ধন নিতে হবে। এটি ব্যবহার করে বিএমইটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা যাবে। এখান থেকেই ছাড়পত্রের স্মার্টকার্ড নামিয়ে নেওয়া যাবে। বিদেশি নিয়োগকর্তারাও এখানে নিবন্ধন করতে পারবে, এরপর দূতাবাস তাদের সত্যায়ন করার পর তারা চাহিদাপত্র দিতে পারবে। তাদের চাহিদাপত্র রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে যাবে। কর্মীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে চাকরির জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই বিদেশে যেতে আগ্রহী কর্মীরা টিটিসিতে ভর্তি হতে পারবেন।

এর আগে গত সরকারের সময় ‘আমি প্রবাসী’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে বিএমইটির ছাড়পত্র সেবা চালু করা হয়। সেখানে বিএমইটি ফি ছাড়াও অ্যাপ পরিচালনাকারী বেসরকারি কোম্পানিকে ফি দিতে হতো। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর ওই সেবা বাতিল করে দেয়। গত ১৯ এপ্রিল থেকে ওইপি নামের নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু হয়। এর সব তথ্য থাকবে বিএমইটির কাছে।

দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভোগান্তি কমবে

এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘“আমি প্রবাসী” অ্যাপ ব্যবহার করলে প্রবাসীদের টাকা দিতে হতো, অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি। “আমি প্রবাসী” ছিল অভিবাসনপ্রক্রিয়ার একটি উপাদান, এখন এই প্ল্যাটফর্মে সব বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আরও কম খরচে, সহজে বিদেশে যেতে এ প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছে, যাতে কর্মীরা প্রতারিত না হন, যাতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য না থাকে। নিয়োগকর্তা যে ভুয়া নন, এর মাধ্যমে কর্মী জানতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে অভিবাসন খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভোগান্তি বহুলাংশে কমে যাবে।

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, মালয়েশিয়া যে ১০ শর্ত দিয়েছে, তার কয়েকটি নিয়ে ইতিমধ্যে আপত্তি জানানো হয়েছে। যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেটিও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, এসব শর্ত মানা হলে পুনরায় সিন্ডিকেট হবে। অল্প কিছু এজেন্সি কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। যতটা পারা যায়, সুযোগ অবারিত রাখতে হবে। তাই শর্ত শিথিল করতে বলা হয়েছে। মালয়েশিয়া এটা শিথিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ওইপি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে ২,৬৪৭ রিক্রুটিং এজেন্সি

ওইপি প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৬৪৭টি রিক্রুটিং এজেন্সি যুক্ত হয়েছে। ১০ লাখ ৯১ হাজার ১৬১ জন কর্মী বিদেশে যেতে ছাড়পত্রের জন্য বিএমইটিতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৮ জন। টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নিতে নিবন্ধন করেছেন ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৪২ জন। অনলাইনে ওইপি সাইটে গেলে এসব তথ্য দেখা যাচ্ছে এবং নতুন নিবন্ধনের মাধ্যমে এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিন হচ্ছে।

দালাল চক্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে সময়োপযোগী উদ্যোগ

অনুষ্ঠানে বলা হয়, ওইপি প্ল্যাটফর্ম দালাল চক্রের ভূমিকা কমাতে এবং কর্মীদের জন্য অভিবাসন খরচ কমাতে সহায়তা করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হবে। শ্রমিক, নিয়োগকর্তা ও সরকার—সব পক্ষের জন্যই এটি কাজে আসবে। তথ্য ও সেবা—দুটোই নিশ্চিত হবে। এর মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া গড়ে উঠবে এবং গন্তব্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তি আরও শক্তিশালী হবে।

এতে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ডেইপাক এলমার। সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ