যুবদল নেতা হত্যায় বড় অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে: র্যাব
Published: 19th, November 2025 GMT
রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামিসহ দুই জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
বুধবার (১৯ নভেম্বর দুপুরে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার রায় ঘিরে দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তা
চট্টগ্রামে পাওনা টাকা নিয়ে যুবক হত্যা: ৩ আসামি গ্রেপ্তার
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা মিরপুর কেন্দ্রিক গড়ে উঠা সন্ত্রাসীগ্রুপ ‘ফোর স্টার’ এর সক্রিয় সদস্য। এটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড, যাতে বড় অংকের অর্থের লেনদেন হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন মিরপুর-১২, ব্লক-বি, বিক্রমপুর সেনিটারী ও হার্ডওয়্যার দোকানে ৬ জন অজ্ঞাত সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল দিয়ে বুকে ও পিঠে অতর্কিত গুলি করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে (৫০) হত্যা করে। পরে ওই স্থান থেকে পালানোর সময় স্থানীয় জনতার ওপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং এতে একজন রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরবর্তীতে ছাত্র জনতা তাদেরকে ধাওয়া করে জনি ভূইয়া (২৫) নামে একজন সন্ত্রাসীকে আটক করে পল্লবী থানা পুলিশের কাছে দেয়। এ বিষয়ে ভিকটিমের পরিবার পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
র্যাব জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিসিটিভি ফুটেজ এবং আনুষঙ্গিক তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে সাভার থানাধীন বিরোলিয়া এলাকা হতে গোলাম কিবরিয়া হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামি এবং হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো.
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও তারা জানায় যে, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যাতে বড় অংকের অর্থের লেনদেন হয়। আসামিরা পেশাদার হত্যাকারী এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ সন ত র স হত য ক ণ
এছাড়াও পড়ুন:
বামপন্থা, ইসলাম ও পালনবাদ: ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন
মাওলানা ভাসানী সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে, তিনি একজন বিভ্রান্ত মানুষ। না হতে পারলেন মাওলানা, না রাজনীতিবিদ, না পারলেন সমাজতন্ত্র কায়েম করতে, না পারলেন ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে। কিন্তু মাওলানা কি আদৌ সমাজতন্ত্র বা ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক দর্শনটা আসলে কী?
মাওলানার চীন সফর–পরবর্তী সংবর্ধনাকে ঘিরে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। সেদিনও ভাসানীর মাথায় ছিল তালপাতার টুপি, পরনে লুঙ্গি। তাঁর বেশভূষা দেখে শ্রোতাদের মধ্যে গুনগুন মন্তব্য, ‘ইয়ে তো মিসকিন হ্যায়!’ কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে ভাসানী বক্তব্য শুরু করতেই সেই শ্রোতারা বলল, ‘ইয়ে তো মাওলানা হ্যায়!’
রাজনৈতিক বক্তব্য শুনে তারা এবার অবাক হয়ে পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘আরি বাহ্, ইয়ে তো পলিটিশিয়ান হ্যায়!’ যখন ভাসানী বিশ্ব মোড়লদের শোষণ–নিপীড়ন সম্পর্কে বলতে শুরু করলেন, তখন ওই একই দর্শকশ্রোতা বলে উঠল, ‘হায় আল্লাহ, ইয়ে তো এস্টেট মেন হ্যায়!’ কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়:
‘দুর্গত এলাকা প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী
কী বলেন। রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু,
যেন মহাপ্লাবনের পর নূহের গভীর মুখ
সহযাত্রীদের মাঝে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি
উত্তরে হাওয়ায় ওড়ে। বুক তার বিচর্ণিত দক্ষিণ বাংলার
শবাকীর্ণ হু হু উপকূল, চক্ষুদ্বয় সংহারের
দৃশ্যাবলীময়, শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা
নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার।’
(সফেদ পাঞ্জাবী/শা.রা.)
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর গঠিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতির’র মাধ্যমে কি প্রচলিত ধারণার ইসলমি খেলাফত চেয়েছেন নাকি ইসলামি সমাজতন্ত্র চেয়েছেন? তাঁর রাজনৈতিক পরিভাষাগুলো আমাদের অনেক শিক্ষিত ইতিহাসবিদের কাছেও অবোধ্য-দুর্বোধ্য। আমরা তাঁর তিনটি রাজনৈতিক পরিভাষার ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে বোঝার চেষ্টা করব। রুবুবিয়াৎ, খুদায়ে খিদমাতগার এবং হুকুমতে রাব্বানিয়া।
কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই।রুবুবিয়াৎ বা পালনবাদকোরআনের অনুবাদ করতে গিয়ে অধিকাংশ অনুবাদক ‘রব’ শব্দের অর্থ করেছেন ‘প্রভু’, যা ইসলামি দৃষ্টিতে শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার করা। মাওলানা ভাসানী সচেতনভাবে এর অনুবাদ করেছেন ‘পালনবাদ’। একজন পালনকর্তা হিসেবে আল্লাহ সবাইকে খাওয়ান, পরান, আলো–বাতাস দেন। জীবজন্তুকে খাওয়ানোরও দায়িত্ব নেন। কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে আমি (আল্লাহ) খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছি। (২:৩০) এই খলিফা ইসলামি খেলাফত বা রাজতন্ত্রের খলিফা না। কারণ, খেলাফত ব্যবস্থায় রাজতন্ত্রের খলিফা হন একজন। আর রুবুবিয়াতের খলিফা আমি, আপনি, সবাই। আমরা সবাই আল্লাহর প্রতিনিধি। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর যা যা দায়িত্ব, আমাদের ওপরও তা-ই দায়িত্ব। এটা যে ভাসানীর মনগড়া ব্যাখ্যা, বিষয়টা এমন না। তাঁর ব্যাখ্যার পেছনে কোরআনে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় মানুষকে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে বলা হয়েছে। (২:১৩৮)
মাওলানা ভাসানীর হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি থেকে প্রকাশিত ‘হুকুমতে রাব্বানিয়া: পূর্বশর্ত’ গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধে লেখক শামসুল হক বলেন, ‘আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী মানবজীবনে রূপায়িত হলে কতই না সুন্দর হবে।...রব হিসেবে এই সৃষ্টিকে পালন অর্থাৎ রুবুবিয়াতের কাজ করাই আল্লাহর সবচাইতে বড় কাজ। আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষেরও প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে রুবুবিয়াৎ পালন।’
রুবুবিয়াতের চারটি স্তর—বিয়ের আগে, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে, সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে।
আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০—১৭ নভেম্বর ১৯৭৬)