চিংড়ির রপ্তানি বাড়াতে চান নীতিসহায়তা
Published: 3rd, December 2025 GMT
নব্বইয়ের দশকে দেশের চিংড়ি খাত রপ্তানি পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলেও এখন অনেক পিছিয়ে পড়েছে। রপ্তানিতে এ খাতের পুনরুত্থানে কৃষি খাতের মতো সহায়তা চান চিংড়ি রপ্তানিকারকেরা। এ জন্য তাঁরা বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ ছাড়, রপ্তানিতে নগদ সহায়তা, ঋণ পুনঃতফসিলকরণ সুবিধা এবং ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আজ বুধবার সন্ধ্যায় চিংড়ি খাতের নীতিসহায়তা নিয়ে আয়োজিত এক নীতি সংলাপে এসব দাবি জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সংলাপটি আয়োজন করে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মো.
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালে বাংলাদেশ এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর রপ্তানির পরিমাণ একই রকম ছিল। কিন্তু গত ২৪ বছরে ভারত ১৪ গুণ, ভিয়েতনাম ৫ গুণ এবং ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি ৩ গুণ বাড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা একই রয়ে গেছে। ২০২৪ সালে এ খাতে আমাদের রপ্তানি ছিল মাত্র ৩৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।’
চিংড়ির উৎপাদনশীলতা নিয়ে বজলুল হক খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দেশে বাগদা চিংড়ির হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন মাত্র দশমিক ৩৩ টন। আর গলদা চিংড়ির ক্ষেত্রে তা দশমিক ৫২ টন। অথচ ভারতে প্রতি হেক্টরে আমাদের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি বা ৭ টনের বেশি চিংড়ি উৎপাদিত হয়। ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয় সাড়ে ৩ টন।’ বজলুল হক খন্দকার বলেন, কম উৎপাদনশীলতা, উচ্চ সুদহার এবং ঋণ না পাওয়ায় এই খাতের উৎপাদন সক্ষমতার ২০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। ৬০ শতাংশ খামারি উৎপাদন ছেড়ে দিয়েছেন।
মূল প্রবন্ধে এ খাতের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকার তহবিল এবং প্রক্রিয়াকরণ খাতের জন্য আলাদাভাবে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলকরণ সুবিধারও কথা বলা হয়।
কৃষিতে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিলে ছাড় দেওয়া হলেও চিংড়িতে দেওয়া হয় না। তাই কৃষি খাতের মতো চিংড়ি চাষেও বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের দাবি জানান হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট তরিকুল ইসলাম জহির। তিনি বলেন, ‘চিংড়ি রপ্তানি ৩ গুণ বাড়াতে আমাদের নীতি সহায়তা দরকার।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ম্যানগ্রোভ বন কেটে চিংড়িঘের করার ও জেলি ব্যবহারের কারণে রপ্তানি কমার অভিযোগ রয়েছে। এখন আবার অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে সাগরে মাছের মজুত কমেছে। ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বৈষম্যের শিকার। তাদের শিল্প খাতের মতো বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এক বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি শিগগিরই বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ ছাড় পাব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, অর্থায়ন এ খাতের একমাত্র সমস্যা নয়। উৎপাদনশীলতা অনেক কম। তাই টাকা দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। এ খাতকে এগিয়ে নিতে হলে যারা প্রকৃত উদ্যোক্তা, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। তাই যেখানে সমস্যা, সেখানে নজর দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মো. শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘এ খাতে অনেক বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। ২২-২৩ টাকা খরচ হয় প্রতি ইউনিটে। তাই আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র সহ য ত র বল ন আম দ র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
সাভারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার চার ছাত্র
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে পিকনিকের কথা বলে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকালে এসব তথ্য দিয়েছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম সুমন।
আরো পড়ুন:
কর্মবিরতি করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কড়া বার্তা
শিক্ষকদের কর্মবিরতি: ঝিনাইদহে ৪৬২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি
মঙ্গরবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ভুক্তভোগীর বোন বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তার করা চারজন হলেন- দেলোয়ার ভূঁইয়া (২৬), তাজুল ইসলাম তাজ (২৩), শ্রাবণ সাহা (২৩) ও অন্তু দেওয়ান (২৮)। তারা সাভারের আশুলিয়ার বেসরকারি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী আশুলিয়ার একটি বেসরকারি বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি পরিবারের সঙ্গে ধামরাই পৌরসভায় বসবাস করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকের কথা বলে ভুক্তভোগীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে যান দেলোয়ার, তাজ ও শ্রাবণ। যাওয়ার সময় তাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ খাওয়ালে কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগী অচেতন হয়ে পড়েন। বিকাল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি ওই বাসায় তিনজনকে দেখতে পান।
মামলার বর্ণনায় বলা হয়েছে, জ্ঞান ফেরার ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন তাকে ডেকে নেওয়া তিনজন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেছে ও ঘটনার ভিডিও ও ছবি ধারণ করে। তখন তিনি প্রতিবাদ করেন। লোকজন ডাকার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। সেসময় আসামিরা তাকে হুমকি দেন। আইনগত ব্যবস্থা নিলে ধারণ করা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ও এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, সামাজিকভাবে হেয় ও সম্মানহানী করার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে শুধু চুপ করিয়েই তারা ক্ষান্ত হননি; হুমকি দিয়ে কয়েক ধাপে মোট ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন আসামিরা।
এজাহারে লেখা হয়েছে, গত ৬ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে ভুক্তভোগীকে ফের আশুলিয়ার বাইশ মাইল এলাকায় আটকে ৪ নম্বর অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ানের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতে বলেন। এতে রাজি না হলে তাকে প্রথম তিন অভিযুক্ত দেলোয়ার, তাজ ও শ্রাবণ মিলে চড়থাপ্পড়সহ মারধর করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক নেশাজাতীয় বিষাক্ত পানীয় পান করান তারা। তাদের কবল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন।
অচেতন অবস্থায় ভুক্তভোগীকে প্রথমে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় জানিয়ে মামলার বর্ণনায় বলা হয়েছে, অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি চিকিৎসাধীন থাকার মধ্যে তার পরিবারের এক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ঘটনার পরম্পরায় লেখা হয়েছে, চিকিৎসার পর ভুক্তভোগী ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে গত ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে তার ওপর নিপীড়নকারীদের দেখতে পান তিনি। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা তাকে একটি কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন ও নতুন জীবন শুরু করতে পরামর্শ দেন। এতে তিনি সায় না দিয়ে বের হতে গেলে তারা তাকে গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন।
আশুলিয়া থানার এসআই শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, “এ ঘটনায় মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে পাঠানো হবে।”
আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, এটা ছিল ৪ এপ্রিলের ঘটনা। চারজনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের ১৭ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
ঢাকা/সাব্বির/রাসেল