বিগত ১৬ বছরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানান, দেশের মানুষের বুকে গুলি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল ফ্যাসিবাদী সরকার। 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চুয়াল  অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট শুধু একটা দিবস নয়, গণজাগরণের উপাক্ষান। ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্ম।”

তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টে গুলিবিদ্ধ আহতদের চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি এবং তৎকালীন সরকার হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে আহদের চিকিৎসা দেওয়া না হয়।”

বক্তব্যের শুরুতে তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধারে স্মরণ করে বলেন, “১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। লাখো প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দি পরেও এ দেশের মানুষ সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়েছে।” 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সংকটময় অধ্যায়। ১৬ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এদেশের এই বিপুল সংখ্যক তরুণরা ১৬ বছর ধরে ক্রমাগত হতাশায় নিমজ্জিত ছিল। ভালো ফলাফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চাকরিকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর তদবীর বাণিজ্য। যে তরুণ ঘুষ দিতে পারেনি এলাকার মাফিয়াদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারেনি, তার চাকরি হয়নি।” 

তিনি বলেন, “সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি, যেটা মূলত ছিল দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আরেকটা হাতিয়ার। এর বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ দীর্ঘদিন প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলেও ফ্যাসিবাদী শাসকের টনক নড়েনি। দীর্ঘদিন এই সেক্টরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল। যারা আর্থিক বা অন্য সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলবে-কাজ করবে। স্বৈরাচারের পক্ষের সঙ্গী হলেই তার চাকরি হবে।”

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হয় ছ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তিন প্রার্থীর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগের পরীক্ষায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষা দেওয়া তিন প্রার্থী। তাঁরা এ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পরীক্ষার বোর্ড সদস্যদের প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের তৃতীয় তলায় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। অভিযোগ করা এই তিন প্রার্থী হলেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল নেছা, মহিমা আকতার এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আকিব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে মো. আকিব বলেন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ৪৩ জন। তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩ জন। তবে তাঁদের কাউকে পাস করানো হয়নি। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বজনপ্রীতির কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমনটি করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।

সংবাদ  সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ বোর্ডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের কোনো শিক্ষককে রাখা হয়নি। বরং অন্য বিভাগ ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে নিয়োগ পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার পরে পরীক্ষকদের খাতা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষক তাঁর পছন্দের প্রার্থীর খাতা ঘুরে দেখেন এবং প্রশ্ন বুঝিয়ে দেন।  সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলে বিষয়টি প্রমাণ করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও খাতা মূল্যায়ন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক। ফলে তাঁর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই উত্তীর্ণ হয়েছেন, আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রহসনমূলক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এর ন্যায়বিচার ও যথাযথ সুরাহা চাই।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে দলীয়করণ হচ্ছে, অভিযোগ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের২৫ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত ১৯ এপ্রিল ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুই পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের আইন অনুযায়ী এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডেও বিভাগের কোনো শিক্ষক রাখা হয়নি। এসব বিতর্কের মধ্যে দিয়েই গত মঙ্গলবার এ নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে।

তিন প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে  নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন কাদেরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কোনো বিষয় আমার চোখে পড়েনি। এ অভিযোগগুলো কতটা বাস্তব, তা জানা নেই। যাঁরা আজ সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁরা হয়তো লিখিত পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো শিক্ষকের স্বজনপ্রীতি দেখানোর সুযোগ নেই। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

আরও পড়ুননিয়োগপ্রার্থীর প্রোফাইল লাল করার স্ক্রিনশট ফেসবুকে দিলেন সহ-উপাচার্য১৬ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তিন প্রার্থীর