৩ দাবিতে রাবি চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে শাটডাউন
Published: 21st, October 2025 GMT
তিন দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন, ইন্টার্নশিপ ভাতা চালু এবং বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের টেকনিক্যাল ক্যাডার সংযোজন।
আরো পড়ুন:
‘তুমি না মরলে আমি মাহীরের হব না’, বলেন বর্ষা
জুবায়েদ হত্যা: ২৫ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা, ১৯ অক্টোবর বাস্তবায়ন
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে বিভাগীয় ভবনে তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
এর আগে, দুপুর ১টার দিকে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেন তারা।
এ সময় তারা ‘সাইকোলজির আধিপত্য, মানি না মানবো না’, ‘এক দুই তিন চার, ডিপার্টমেন্টে তালা মার’, ‘বৈষম্য নিপাত যাক, সিন্ডিকেট মুক্তি পাক’, ‘সাইকোলজির আধিপত্য ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ক্লিনিক্যালের বাংলায়, সাইকোলজির ঠাঁই নাই’, ‘ডিপার্টমেন্টে রাজনীতি চলবে না চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জান্নাত জামান বলেন, “যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগগুলোতে স্ব স্ব বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পরই আবেদন করতে পারে। ২০২৩ পর্যন্ত আমাদের বিভাগেও একই নিয়ম ছিল। কিন্তু আমাদের বিভাগের সভাপতি হিসাবে মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক আসায় আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পরিবর্তন করেছেন।”
তিনি বলে, “এ পরিবর্তনের মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা অনার্সে ৩ মাস, মাস্টার্সে ৬ মাস ইন্টার্ন করে আসি, সেখানে মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী অনেকেই আসে অ-বিজ্ঞান থেকে।”
একই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমন আলী বলেন, “আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আমরা আজ এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিভাগ চালু করতে দেব না। ২০২৫ সালের নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমরা লক্ষ্য করেছি—২০২৩ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পরিবর্তন করে কেবল মনোবিজ্ঞান বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “অথচ সাম্প্রতিক মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান থেকে কাউকেই নেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, আমাদের বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান সাইকোলজি বিভাগ থেকে আসার পরই এই পরিবর্তনটি করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের দাবি আদায়ের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। যদি এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা সম্পূর্ণ শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
এ কর্মসূচিতে বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মন ব জ ঞ ন ব ভ গ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির পর একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা–মেয়ে, ফলে এগিয়ে বাবা
নাটোরের লালপুরে মেয়ে হালিমা খাতুনের (১৮) সঙ্গে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা আবদুল হান্নান (৪৩)। ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেছেন বাবা। জিপিএ-৪.৩ নিয়ে পাশ করেছেন আবদুল হান্নান। অন্যদিকে তাঁর মেয়ে হালিমা পেয়েছেন ৩.৭১।
আবদুল হান্নান ও হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। হান্নান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং তাঁর মেয়ে হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নেন। এর আগে ২০২৩ সালে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন তাঁরা।
হালিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্মের আগেই আমার বাবা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করতে পারেননি। পরে ঘটনাটি জানার পর ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা পড়ালেখায় ইতি টেনেছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে বাবা কাউকে না জানিয়ে আবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসলে ঘটনাটি আমাদের পরিবারে তো বটেই, দেশে আলোচিত হয়। এরপর বাবা পড়ালেখায় আরও সিরিয়াস (সচেতন) হন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি আমার সঙ্গেই পড়ালেখা করেছেন। পরীক্ষা দিয়ে আমার চেয়েও ভালো ফল করেছেন। আমি এতে মন খারাপ করিনি। বরং বাবার ফল আমাকে আরও ভালো করার উৎসাহ জুগিয়েছে।’
পড়ালেখার প্রতি নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে আবদুল হান্নান জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়ালেখার জন্য তেমন পরিবেশ পাননি। ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশেষ কারণে অকৃতকার্য হন। পরিবারের প্রয়োজনে পড়ালেখা ছেড়ে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। এরপর বিয়ে করে সংসারী হন। কিন্তু মনের মধ্যে শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ দমে যায়নি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার সময় হঠাৎ নিজেরও পরীক্ষায় বসার ভাবনা আসে। কাউকে না জানিয়ে তাই নিজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরীক্ষার সময় হঠাৎ বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন আবারও অকৃতকার্য হওয়ার দুঃস্বপ্ন ভর করে।
একটু থেমে আবদুল হান্নান বলেন, তবে সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেননি। এসএসসি পাস করেন। এরপর প্রকাশ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। মেয়ের সঙ্গে বসে পড়ালেখা করতে থাকেন এবং শেষে কাঙ্ক্ষিত ফলও পান। ফলাফলে মেয়েকে টপকে যাওয়ার ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও তিনি বিস্মিত হননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা যখন নতুন করে শুরু করেছি, তখন শেষ পর্যন্ত (মাস্টার্স) পড়বই। চাকরি করার বয়স হয়তো থাকবে না। তাতে কিছুই আসে–যায় না। আমি এই সমাজের একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
আবদুল হান্নানের ভাবনা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন নাটোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোস্তম আলী হেলালী। তিনি বলেন, শিক্ষালাভের কোনো বয়স নেই। আবদুল হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে এ কথা প্রমাণ করেছেন। তিনি চাকরির জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ছেন। এটা সমাজের জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁদের উভয়কেই অভিনন্দন।