কুমিল্লা-৬: মনোনয়নবঞ্চিত ইয়াসিন সমর্থকদের ফের মশাল মিছিল-বিক্ষোভ
Published: 4th, November 2025 GMT
কুমিল্লা-৬ (সদর, সদর দক্ষিণ ও সিটি করপোরেশন) আসনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের ধর্মসাগরপাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে মশাল মিছিল বের করে নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূবালী চত্বরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।
আরো পড়ুন:
৩০০ আসনেই শাপলা কলি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এনসিপি: নাহিদ
এনসিপিসহ তিন রাজনৈতিক দল যেসব প্রতীক পাচ্ছে
মিছিল ও সমাবেশে নেতাকর্মীরা সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইয়াছিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ‘অবৈধ প্রার্থী মানি না মানব না’, ‘আমি কে তুমি কে, ইয়াছিন ভাই ইয়াছিন ভাই’, ‘জেল-জুলুম কারাগারে, ইয়াছিন ভাই’, ‘কুমিল্লার ঘরে ঘরে, ইয়াছিন ভাই”, ‘নেতাকর্মীদের সুখে দুখে, ইয়াছিন ভাই’ এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নন। এ কারণে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে দাবি করেছেন।
সোমবার রাতেও কান্দিরপাড় এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন ইয়াসিনের অনুসারীরা। আলেখারচর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
স্থানীয় নেতাদের মতে, মনোনয়ন বিতর্ক ও ধারাবাহিক বিক্ষোভে কুমিল্লা-৬ আসনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে।
তবে অনেকেই আশা প্রকাশ করেছেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা, স্থানীয় সমন্বয় ও প্রার্থী নির্বাচনের ভারসাম্য মিললে অচিরেই দল অস্থিরতা কাটিয়ে শক্তিশালী নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে পারবে।
নেতাকর্মীরা জানান, হাজী ইয়াছিন দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা/রুবেল/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর ম কর ছ ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনতাকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক
১.
একটি প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করি।
আকাশে উড়ন্ত বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিমানে যাত্রী মোট চারজন। একজন পাইলট, একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন শিক্ষক, অপরজন ছাত্র। কিন্তু বিমানে প্যারাসুট আছে তিনটি! একটা প্যারাসুট নিয়ে পাইলট বললেন, ‘আমি লাফিয়ে পড়ছি, আমাকে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট করতে হবে যে বিমান ক্রাশ করছে।’ রাজনৈতিক নেতা একটি প্যারাসুট নিয়ে বললেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য আমার অনেক কিছুই করার এখনো বাকি। তাই আমার বেঁচে থাকা দরকার।’
পাঠক, নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন এ রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশি ছাড়া আর কে হবেন। দেশের সব রাজনৈতিক নেতাই যে এমন তা বলছি না। এটিও তো ঠিক, আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাও আছেন যারা দেশ ও দশের জন্য রাজনীতি করার কথা বলে গলা ফুলিয়ে ফেললেও বিপদে আগেই সরে পড়েন। নিজের দলের কর্মীদেরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালাতে একমুহূর্ত দেরি করেন না।
তবে কৌতুকটি এখানেই শেষ নয়। বাকি আছেন শিক্ষক ও এক ছাত্র। শিক্ষক বললেন, প্যারাসুট তো আছে আর একটা। এখন কী হবে? ছাত্র বলল, চিন্তা নেই স্যার। প্যারাসুট দুইটিই আছে। ওই নেতা ব্যাটা প্যারাসুট মনে করে আমার স্কুলব্যাগ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। এতক্ষণে নির্ঘাত অক্কাও পেয়েছেন। শিক্ষকের প্রাণে পানি এল। তাঁরা শুধু বাঁচার উপায় পেয়েই আনন্দিত হলেন না, নেতার করুণ পরিণতি দেখেও যেন ‘নিষ্ঠুর আনন্দ’ পেলেন। কেনই–বা পাবেন না?
আরও পড়ুন‘আমার তো রাজনীতি নাই, আমার হইল পেটনীতি’২৩ অক্টোবর ২০২৫২.একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ মনোনয়ন পাবেন, কেউ পাবেন না। এতে কেউ হতাশ হবেন, কেউ উল্লসিত হবেন—এটিই তো স্বাভাবিক। শুধু তা–ই নয়, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ প্রতিক্রিয়াও এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে পড়েছে। তা হচ্ছে মনোনয়নবঞ্চিত হলে সড়ক অবরোধ করা, ধর্মঘট-হরতাল ডাকা, ভাঙচুর করা, আগুন জ্বালানো ইত্যাদি ইত্যাদি।
হ্যাঁ, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ ঘটনাও আছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর বঞ্চিত পক্ষের ওপর হামলে পড়া। এটিই তো দেখলাম গতকাল সোমবার দেশে বর্তমান বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণার পর।
আমরা সংস্কার সংস্কার বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি ঠিকই, কিন্তু গাছের গোড়াতে পানি ঢালার কথা কেউ বলছি না, বললেও সেটি খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। গাছের গোড়ার পানি ঢালার বিষয়টা কী? যারা রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার সংস্কার আনবে, তাদের ভেতরেই সংস্কারটা আগে হতে হবে। এর জন্য জরুরি হচ্ছে, মন ও মগজে সংস্কার আনা। সেটিই যদি করা না যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের বলে যাওয়া সেই উক্তিই সঠিক হয়—গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খ ও অযোগ্যদের শাসন।সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ-আশাশুনি আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য মনোনয়ন না পাওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। অথচ এ দেশে হরতালের রাজনীতি বহু আগেই আবেদন হারিয়ে ফেলেছে, সেটি তাদেরই সবার আগে বোঝার কথা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। ফলে এ হরতাল জন-স্বতঃস্ফূর্তামূলক ছিল না। যার যার ব্যস্ততা নিয়েই মানুষ কাজেকর্মে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হয়েছে। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকেরা জোরপূর্বক হরতাল পালন করতে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে যে চরম যানজট তৈরি করলেন, তাতে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হলো।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রার্থিতা ঘোষণার পরপরই দ্রুত প্রতিক্রিয়াটা আসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আসন থেকে। সে আসনে বিএনপির এক সাবেক যুগ্ম মহাসচিবকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগের লাইফলাইনখ্যাত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আটকে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ যানজট ছড়িয়ে মহাসড়কের দুই পাশে, এমনকি এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম শহরের ভেতরেও। শুধু তা–ই নয়, মনোনয়নবঞ্চিত নেতার ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনও অবরোধ করেন।
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতার বিক্ষুব্ধ কর্মী–সমর্থকেরা ঢাকা–চট্টগ্রাম শহর অবরোধ করেন। সোমবার সন্ধ্যায়