ক্রিকেটের পরিপাটি নাট্যশালায় এক চরম উত্তেজনার অবসান ঘটাল ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। লন্ডনের ঐতিহাসিক ওভালে সোমবার (৪ জুলাই) সিরিজ নির্ধারণী শেষ টেস্টে মাত্র ৬ রানে জয় তুলে নেয় ভারত। আর তাতেই ২-২ সমতায় শেষ হয় সিরিজ। ভাগাভাগি হলো অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে গাঁথা হয়ে রইল এক অনন্য রেকর্ড, ২১টি সেঞ্চুরির মহোৎসব।

এই সিরিজে ব্যাটসম্যানদের ঝলক ছিল চোখ ধাঁধানো। দুই দল মিলে মোট ২১টি সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছে, যা স্পর্শ করেছে টেস্ট ইতিহাসের এক পুরোনো অধ্যায়। ঠিক ৭০ বছর আগে, ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার এক সিরিজেও উঠেছিল একই সংখ্যক সেঞ্চুরি। তখনকার মতো এখনো ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড।

সেঞ্চুরির এই মহাযজ্ঞে ভারতীয় ব্যাটাররা রেখেছেন আধিপত্য। তারা করেছেন ১২টি সেঞ্চুরি। দলের নেতা শুভমান গিল একাই হাঁকিয়েছেন ৪টি সেঞ্চুরি, যেটি সিরিজের সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের হয়ে ৯টি শতক এসেছে, যার মধ্যে জো রুটের ব্যাট থেকে এসেছে তিনটি।

আরো পড়ুন:

ওভালে ঐতিহাসিক জয়, ম্যাচ জেতানো আত্মবিশ্বাসের গল্প শোনালেন সিরাজ

রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজ সমতায় সফর শেষ ভারতের

অন্যান্য সেঞ্চুরিয়ানদের তালিকাও কম চমকপ্রদ নয়। ভারতের ঋষভ পন্ত, লোকেশ রাহুল, যশস্বী জয়সওয়াল করেছেন দুটি করে শতক, সঙ্গে একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ইংল্যান্ডের হয়ে একবার করে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন হ্যারি ব্রুক, বেন ডাকেট, জেমি স্মিথ, অলি পোপ এবং অধিনায়ক বেন স্টোকস।

টেস্ট ক্রিকেটে দুই দলের এমন লড়াই দীর্ঘদিন স্মরণে থাকবে কেবল ফলাফলের কারণে নয়, রেকর্ডের কারণেও। এর আগে মাত্র একটি সিরিজে ২০টি সেঞ্চুরি হয়েছিল ২০০৩-০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বৈরথে। আর এমন ছয়টি সিরিজে ১৭টি করে সেঞ্চুরি হয়েছে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র ক ট র কর ড র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিতে দৃষ্টি হারালেও স্বপ্ন হারায়নি হিমেল, দেখতে চায় স্বাধীন বাংলাদেশ


ছবি-২: মায়ের কাঁধে ভর করে টাঙ্গাইলের একটি অনুষ্ঠানে যেতে বাড়ি থেকে বের হয় দৃষ্টি হারানো হিমেল। তাঁদের বিদায় জানান হিমেলের ভাই মো. জনি মিয়া। আজ মঙ্গলবার সকালে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের লালবাড়ী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
গুলিতে দৃষ্টি হারালেও স্বপ্ন হারায়নি হিমেল, দেখতে চায় স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রতিনিধি,

গত বছরের ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাওয়ের সময় পুলিশের গুলিতে চোখের দৃষ্টি হারায় হিমেল ইসলাম (১৬)। চিকিৎসকেরা তাকে ও তার পরিবারকে জানিয়েছেন, সে আর কখনো চোখে দেখতে পারবে না।

তবু চোখে স্বপ্ন আছে হিমেলের—আবার সুন্দর করে বাঁচার, আবার স্বাধীন বাংলাদেশকে দেখার। মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে এমনটাই বলল হিমেল।

উপজেলার লালবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খাটের ওপর বসে আছে হিমেল। তার মা নাছিমা বেগম ও বড় ভাই মো. জনি মিয়া (২৫) তাকে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন টাঙ্গাইলের শিল্পকলা একাডেমিতে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ছেলের চোখ হারানো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারে মা, দুই ছেলে, বড় ছেলের স্ত্রী ও এক নাতি আছে। প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামী আফাজ উদ্দিন তাঁদের ফেলে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে নাছিমা বেগমের জীবনে নামে দুর্ভোগ। ছেলেদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে থাকেন। বড় ছেলে জনি ১৩-১৪ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে শ্রমিকের কাজ শুরু করে। হিমেলও ১২-১৩ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় এক ডেকোরেটরের দোকানে কাজ করত।

গত বছরের ৪ আগস্ট গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয় হিমেল। সে সময় তার চোখ, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসার পর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এক সপ্তাহ পর ছুটি দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সে আর চোখে দেখতে পারবে না। পরে চোখের ক্ষত না শুকানোয় হিমেলকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। এখন নিয়মিত তাকে সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে হয়।

নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স হইছে। এখন আর কাজ করতে পারি না। বড় ছেলেডা এক ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে, ১০ হাজার টাকা বেতন পায়। তা দিয়্যা ছেলে, বউ, মা আর নাতি নিয়া খুব কষ্টে দিন কাটাইতাছি।’

হিমেলের ভাই জনি মিয়া বলেন, ‘আমি উত্তরা স্পিনিং মিলে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। সংসারে ছয়জন মানুষ নিয়া খুব কষ্টে চলি। আল্লায় ভাইডারে যদি ভালো কইর‍্যা দিত, তাইলে আগের মতো কাজ করা পারত। আমাগো সবাই ভালো কইর‍্যা চলতে পারতাম।’

হিমেল ইসলাম বলে, ‘আমি ৫ আগস্টের আগে পড়ালেখা করতাম। ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিলাম। ডেকোরেশনের কাজ করতাম। এখন আমার চোখে গুলি লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। আগস্টের ৪ তারিখে আন্দোলনে যোগ দিই। হাইওয়ে থানায়। থানা থেকে আমাদের গুলি করে। আহত অনেকের মধ্যে আমি একজন। আমার সারা মুখে এখনো বুলেট আছে। এই বুলেটে আমার অনেক ক্ষতি হয়। দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবারের অনেক কষ্ট এখন। এখন আমার চাওয়া একটাই—আবার আমি সুন্দর করে বাঁচতে চাই; স্বাধীন বাংলাদেশ আবার দেখতে চাই।’

নাছিমা বেগম জানান, সরকারিভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং রাজনৈতিক দল ও কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। এর সবই হিমেলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে।

এদিন হিমেলকে নিয়ে টাঙ্গাইলের পথে রওনা দেন মা নাছিমা বেগম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভাই জনি মিয়া হিমেলের পায়ে জুতা পরিয়ে দেন, ময়লা মুছে দেন। এরপর গাড়িতে তুলে দেন মা ও ভাইকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ