নাফ নদীতে আরাকান আর্মির হাতে ৬ রোহিঙ্গা জেলেকে আটক
Published: 6th, November 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফে মাছ ধরে ফেরার পথে জলসীমা অতিক্রম করায় ট্রলারসহ ছয় রোহিঙ্গা জেলেকে আটক করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলে এ ঘটনা ঘটে। ছয় রোহিঙ্গা জেলের সবাই টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন টেকনাফ পৌরসভা কায়ুকখালীঘাট ট্রলারমালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় টেকনাফের বাসিন্দা আবদুল মতলবের মালিকানাধীন ট্রলারটি সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরছিল। শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম চ্যানেলে (সাগর ও নদীর মোহনা) পৌঁছালে এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পানিতে ভাসতে ভাসতে মিয়ানমারের নাফ নদীর জলসীমানা অতিক্রম করে নাইক্ষ্যংদিয়ার (রাখাইন রাজ্যের গ্রাম) দিকে যেতে থাকে। এরপর আরাকান আর্মি ছয় জেলেসহ ট্রলারটি জিম্মি করে নাইক্ষ্যংদিয়া ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। ট্রলারসহ জেলেরা কোথায় আছেন জানা যায়নি।
সাজেদ আহমেদ বলেন, ‘ছয় জেলে রোহিঙ্গা নাগরিক। পরিচয় গোপন করে তাঁরা মাছ ধরার কাজে নেমেছিলেন। তাঁরা হলেন, মো.
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে টেকনাফের জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ট্রলারমালিকেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ করে অন্যান্য এলাকার জেলেরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণ নামলেও টেকনাফের জালিয়াপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপের কয়েক শ ট্রলার ঘাটেই নোঙর করে রয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ট্রলারসহ ছয় রোহিঙ্গা জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে, এমন খবর তিনি শুনেছেন। রোহিঙ্গারা যেন আশ্রয়শিবির থেকে কাজের সন্ধানে বের হতে না পারেন, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, নাফ নদী থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২৭ অক্টোবর নাফ নদীর বদরমোকাম এলাকা থেকে বাংলাদেশি চার জেলে ও ২৮ অক্টোবর সাত জেলেসহ আরেকটি ট্রলার অপহরণ করেছিল আরাকান আর্মি।
ট্রলারমালিক ও বিজিবির দেওয়া তথ্য মতে, গত ১১ মাসে (গত বছর ডিসেম্বর থেকে) আরাকান আর্মি নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ৩২৮ জন জেলেকে অপহরণ করেছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলেসহ ২৭টি ট্রলার ফেরত আনা সম্ভব হলেও আরও ১৮টি ট্রলার ও ১৩৯ জন জেলে রাখাইন রাজ্যের কারাগারে আটকা রয়েছেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১১ মাসের যুদ্ধের পর মিয়ানমারের সরকারি জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডুটাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকার (২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত) দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এখনো সীমান্তে সংঘাত চলছে। অপহরণ ও গুলি আতঙ্কে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ন ফ নদ
এছাড়াও পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গায় চোরাচালানের সোনা আত্মসাৎ নিয়ে বিরোধ–অপহরণ, যশোরে উদ্ধার ৫
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা সীমান্তে সোনার চালান আত্মসাৎ নিয়ে বিরোধের জেরে অপহৃত বাবা-ছেলেসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের রেজাউল ইসলামের খামারের একটি গুদামের ভেতর থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ব্যক্তিরা হলেন জীবননগরের গোয়ালপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলাম (৫২), তাঁর ছেলে শফিউল ইসলাম (২৭), স্বপন হোসেন (৪০), আবুল হোসেন (৩০) ও হাসান মণ্ডল (২৭)।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ, সাইবার ক্রাইম অপরাধ প্রতিরোধ দল, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও জীবননগর থানা-পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের প্রথম আলোকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় ফিরে অভিযানের বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।
জীবননগর থানা-পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সোনার একটি চালান আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোয়ালপাড়া গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। যা পরে জানাজানি হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর আনারুল ও তাঁর ছেলে শফিউল এবং পরদিন স্বপন, আবুল ও হাসানকে কৌশলে অপহরণ করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের সন্ধান না পাওয়ায় ২১ অক্টোবর জীবননগর থানায় একটি অপহরণের মামলা করা হয়।
হাসান মণ্ডলের বাবা শওকত আলী বাদী হয়ে ওই মামলায় গোয়ালপাড়া গ্রামের ছয়জনকে আসামি করেন। তাঁরা হলেন তিন ভাই আবদুল মজিদ (৪০), আবদুস সামাদ (৪৫) ও বিপ্লব হোসেন (৫০); লালন মণ্ডল (৪২), শাহিন উদ্দিন (৩২) ও মিজানুর রহমান (৩০)।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে জীবননগর থানা-পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে হরিহরনগর গ্রাম থেকে আজিজুল হক (৪৫) ও আমিরুল ইসলামকে (৩৭) সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ ভোরে যশোরে অভিযান চালানো হয়।