জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নির্বিচারে মানুষ হত্যা প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও কিছু কাজ নিষেধ করা আছে। কেউ পালাচ্ছেন, নিরস্ত্র মানুষ, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন—এমন মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রেও হত্যা করা যায় না। পৃথিবীর যেকোনো আইনে এটা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেখা গেছে, পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর একজন মানুষ হাতজোড় করছেন, তাঁকে কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। একটা মানুষ মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, তাঁর মাথায় গুলি করা হয়েছে। লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোর ‘রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক নতুন অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বিশেষ প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে যে এ রকম একটা অমানুষ, বেপরোয়া, ভয়াবহ বাহিনীতে রূপান্তর করেছে, সে কত বড় অমানুষ। কত বড় অমানুষ হতে পারে সে। কোনো একটা পুলিশ বাহিনী, সম্ভবত ইসরায়েলিরা প্যালেস্টাইনের মানুষকে বোধ হয় এভাবে মারে।.

..একটা দেশের সুশৃঙ্খল বাহিনী, আমার ট্যাক্সের টাকায় চলা, তাকে (পুলিশ বাহিনী) ইজরায়েলি বাহিনীর মতো করে বাহিনী বানিয়েছে, যেটা আমাকে এভাবে খুন করতে পারে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অসংখ্য ফুটেজ আছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শেখ হাসিনার স্ট্যান্ডার্ডে বিচার করতাম, তাহলে এই বিচার ৪ / ৫ মাসে হয়ে যেত। আমরা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ২০ বছর, ৩০ বছর পরও যেন বিচার নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, এ জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে এবং আইন সংশোধন করে বিচার করছি। এখানে আপনার, মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় শান্তির দিন বোধ হয় থাকবে বিচার যখন শেষ হবে।’

শেখ হাসিনার বিচার হলেও তাঁকে হয়তো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, প্রধান যে আসামি আছে, প্রধান অপরাধী আছে, আমার ধারণা, আমি জানি না এভাবে বলাটা ঠিক হচ্ছে কি না, আমার ধারণা, তাঁর শেষ দিন ভারতেই কাটবে। তাঁকে বোধ হয় আমরা কখনো পাব না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনে যে ঘৃণা নিয়ে সে বেঁচে থাকবে, সেটাও যদি আমাদের অর্জন হয়, সেটাও কম নয়। এত ঘৃণা মানুষের, এত কষ্ট, এত ক্ষোভ। এই ঘৃণা থেকে, ক্ষোভ থেকে, ক্রোধ থেকে আশা আছে, সংস্কারের মাধ্যমে এ রকম শাসক যেন এ দেশে আর তৈরি না হয়। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নাই।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি যখন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন, তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেছেন, তিনি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হবেন। কারণ আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হলো সমালোচিত হওয়ার জায়গা। এই সরকার চলে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন তিনি।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, কেন ঝুঁকিতে থাকব। দুঃখ নাই, আল্লাহ আমাকে এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছে দায়িত্ব পালনের জন্য। আমার জানা মতে, এই দায়িত্ব পালনে আমার ও টিমের একবিন্দু গাফিলতি নেই। এক বিন্দু অবিচার করার ইচ্ছা নাই। সুবিচার করার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। ইনশা আল্লাহ, আশা করি, আমাদের সরকারে থাকা অবস্থায় তাঁর (শেখ হাসিনা) বিচার শেষ হবে।’

প্রদর্শনী শেষে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান। একটি গল্প কীভাবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, এটি এমনই একটি অনুসন্ধান।

প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এমন দৃশ্য দেখার পর কোনো কথা বের হয় না। গত স্বৈরাচারী আমলে দেখা গেছে, দেশের পতাকাকে ব্যবহার করে নানা প্রচারণা চালানো হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রের একটি অংশ দেখা গেছে, কপালে পতাকা নিয়ে ঘুরছেন—এমন একজনের কপালে গুলি করা হয়েছে। এটার চেয়ে ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে প্রথম আলো ৩৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে, সেদিন কীভাবে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ধারণ করা ভিডিও, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও তখনকার সময়ের ছবি প্রায় পাঁচ মাস ধরে সংগ্রহ করা হয়। পরে এগুলো বিশ্লেষণ করে প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়। এটির নির্মাতা প্রথম আলোর সিনিয়র কনটেন্ট ক্রিয়েটর আব্দুল্লাহ আল হোসাইন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট প রথম আল র অন ষ ঠ ন ব চ র কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার হামজারবাগ এলাকায় বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি ও একজন নিহতের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হামলার ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।

আরো পড়ুন:

রাউজানে হামলায় বিএনপির ৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ 

শরীয়তপুরে এনসিপি নেতার অফিসে ককটেল হামলা

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (জনসংযোগ) আমিনুর রশিদ জানান, নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলমান আছে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল হবে।”

গতকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার হামজার বাগ খোন্দকারাবাদ ফতেপুকুর এলাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে কাঁধে পিস্তল ঠেকিয়ে সারোয়ার হোসেন বাবলাকে গুলি করা হয়। এতে তিনি নিহত হন। এছাড়াও প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। এরশাদ উল্লাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।

ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ