মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর মানুষকেও গুলি করা হয়েছে: আসিফ নজরুল
Published: 5th, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নির্বিচারে মানুষ হত্যা প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও কিছু কাজ নিষেধ করা আছে। কেউ পালাচ্ছেন, নিরস্ত্র মানুষ, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন—এমন মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রেও হত্যা করা যায় না। পৃথিবীর যেকোনো আইনে এটা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেখা গেছে, পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর একজন মানুষ হাতজোড় করছেন, তাঁকে কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। একটা মানুষ মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, তাঁর মাথায় গুলি করা হয়েছে। লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোর ‘রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক নতুন অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বিশেষ প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘পুলিশকে যে এ রকম একটা অমানুষ, বেপরোয়া, ভয়াবহ বাহিনীতে রূপান্তর করেছে, সে কত বড় অমানুষ। কত বড় অমানুষ হতে পারে সে। কোনো একটা পুলিশ বাহিনী, সম্ভবত ইসরায়েলিরা প্যালেস্টাইনের মানুষকে বোধ হয় এভাবে মারে।.
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অসংখ্য ফুটেজ আছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শেখ হাসিনার স্ট্যান্ডার্ডে বিচার করতাম, তাহলে এই বিচার ৪ / ৫ মাসে হয়ে যেত। আমরা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ২০ বছর, ৩০ বছর পরও যেন বিচার নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, এ জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে এবং আইন সংশোধন করে বিচার করছি। এখানে আপনার, মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় শান্তির দিন বোধ হয় থাকবে বিচার যখন শেষ হবে।’
শেখ হাসিনার বিচার হলেও তাঁকে হয়তো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, প্রধান যে আসামি আছে, প্রধান অপরাধী আছে, আমার ধারণা, আমি জানি না এভাবে বলাটা ঠিক হচ্ছে কি না, আমার ধারণা, তাঁর শেষ দিন ভারতেই কাটবে। তাঁকে বোধ হয় আমরা কখনো পাব না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনে যে ঘৃণা নিয়ে সে বেঁচে থাকবে, সেটাও যদি আমাদের অর্জন হয়, সেটাও কম নয়। এত ঘৃণা মানুষের, এত কষ্ট, এত ক্ষোভ। এই ঘৃণা থেকে, ক্ষোভ থেকে, ক্রোধ থেকে আশা আছে, সংস্কারের মাধ্যমে এ রকম শাসক যেন এ দেশে আর তৈরি না হয়। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নাই।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি যখন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন, তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেছেন, তিনি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হবেন। কারণ আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হলো সমালোচিত হওয়ার জায়গা। এই সরকার চলে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, কেন ঝুঁকিতে থাকব। দুঃখ নাই, আল্লাহ আমাকে এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছে দায়িত্ব পালনের জন্য। আমার জানা মতে, এই দায়িত্ব পালনে আমার ও টিমের একবিন্দু গাফিলতি নেই। এক বিন্দু অবিচার করার ইচ্ছা নাই। সুবিচার করার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। ইনশা আল্লাহ, আশা করি, আমাদের সরকারে থাকা অবস্থায় তাঁর (শেখ হাসিনা) বিচার শেষ হবে।’
প্রদর্শনী শেষে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান। একটি গল্প কীভাবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, এটি এমনই একটি অনুসন্ধান।
প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এমন দৃশ্য দেখার পর কোনো কথা বের হয় না। গত স্বৈরাচারী আমলে দেখা গেছে, দেশের পতাকাকে ব্যবহার করে নানা প্রচারণা চালানো হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রের একটি অংশ দেখা গেছে, কপালে পতাকা নিয়ে ঘুরছেন—এমন একজনের কপালে গুলি করা হয়েছে। এটার চেয়ে ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে প্রথম আলো ৩৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে, সেদিন কীভাবে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ধারণ করা ভিডিও, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও তখনকার সময়ের ছবি প্রায় পাঁচ মাস ধরে সংগ্রহ করা হয়। পরে এগুলো বিশ্লেষণ করে প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়। এটির নির্মাতা প্রথম আলোর সিনিয়র কনটেন্ট ক্রিয়েটর আব্দুল্লাহ আল হোসাইন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট প রথম আল র অন ষ ঠ ন ব চ র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্য হান্ড্রেডে দল পেলেন পাকিস্তানের ইমাদ ও আমির
দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন উঠছিল, তখন সেই সংশয় কাটিয়ে নতুন মৌসুমে নর্দার্ন সুপারচার্জার্স দলে যুক্ত হলেন মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম।
দুই তারকাই দলে এসেছেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে। আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কারণে পুরো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার বেন ডোয়ারশুইস ও নিউ জিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার (তিনি খেলতে পারতেন মাত্র দুইটি ম্যাচ)। সেই জায়গায় দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন পাকিস্তানের এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
এর ফলে পরিষ্কার হলো, হান্ড্রেডে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে ভারতের মালিকানাধীন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কোনো প্রভাব পড়ছে না। এ বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) স্পষ্ট জানায়, ভারতের বিনিয়োগকারীরা মালিক হলেও, এতে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে কোনো বাধা থাকবে না। তখন ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড বলেছিলেন, “আমরা জানি, অন্য কিছু লিগে এ ধরনের সমস্যা আছে, কিন্তু হান্ড্রেডে সেটা হবে না।”
আরো পড়ুন:
শাস্তি পেলেন টিম ডেভিড
ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে সেঞ্চুরির বৃষ্টিতে ভাঙল ৭০ বছরের রেকর্ড
তবে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন, যখন ২০২৫ মৌসুমের মার্চ মাসে হওয়া ড্রাফটে একজনও পাকিস্তানি ক্রিকেটার দল পাননি। এর পেছনে অবশ্য ব্যাখ্যাও ছিল। সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজের কারণে পাকিস্তানের সাদা বলের স্কোয়াড ছিল ব্যস্ত। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাদের সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্স এবং গতবার শহীন আফ্রিদি ও নাসিম শাহের শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করাও ছিল বড় কারণ।
নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের নতুন মালিক হচ্ছে ভারতের বিখ্যাত মিডিয়া গ্রুপ ‘সান গ্রুপ’। যারা ১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
দলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো— বেন স্টোকস। যদিও তিনি খেলার মাঠে থাকবেন না, তবে থাকবেন পরামর্শক ও দলকে উজ্জীবিত করার ভূমিকায়। কাঁধের চোটের কারণে ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজের শেষ টেস্টে না খেলা এই অলরাউন্ডার জানালেন, “আমি দ্য হান্ড্রেডে খেলছি না ঠিকই, তবে দলকে সময় দেব। ডায়েরি-কলম নিয়ে কোচিং করব না, তবে পুনর্বাসনের (রিহ্যাব) সময়টায় পাশে থাকব।”
এই মৌসুমে ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ টেস্ট ব্যাটারই থাকবেন টুর্নামেন্টে। যদিও পেসারদের অনেকেই বিশ্রামে থাকবেন। লন্ডন স্পিরিট দলের হয়ে প্রথম ম্যাচে খেলবেন উইকেটকিপার জন সিম্পসন। বিশ্রামে থাকায় খেলবেন না অলিভ পোপ ও জেমি স্মিথ। গ্ল্যামরগানের অলরাউন্ডার ড্যান ডাউথওয়েটও স্বল্পমেয়াদে দলে জায়গা পেয়েছেন।
এছাড়া ম্যানচেস্টার অরিজিনালসে রাচিন রবীন্দ্রর পরিবর্তে মার্ক চ্যাপম্যান এবং ইনজুরিতে পড়া মার্চান্ট ডি ল্যাঞ্জের জায়গায় দলে এলেন ফারহান আহমেদ। আর ট্রেন্ট রকেটসে দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জ লিন্ডের জায়গায় দু’টি ম্যাচের জন্য খেলবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন।
দ্য হান্ড্রেড ২০২৫: বদলি খেলোয়াড় তালিকা
লন্ডন স্পিরিট:
- জন সিম্পসন ও ড্যান ডাউথওয়েট (৫ আগস্টের জন্য)
ম্যানচেস্টার অরিজিনালস:
- মার্ক চ্যাপম্যান (৬–১৩ আগস্ট) – রাচিন রবীন্দ্রের পরিবর্তে।
- ফারহান আহমেদ – মার্চান্ট ডি ল্যাঞ্জের পরিবর্তে।
- আমুরুতা সুরেনকুমার – এলা ম্যাককাহানের পরিবর্তে।
নর্দার্ন সুপারচার্জার্স:
- ইমাদ ওয়াসিম (৭–১০ আগস্ট) – মিচেল স্যান্টনারের পরিবর্তে।
- মোহাম্মদ আমির – বেন ডোয়ারশুইসের পরিবর্তে।
ট্রেন্ট রকেটস:
- আকিল হোসেন (১০–১৪ আগস্ট) – জর্জ লিন্ডের পরিবর্তে।
ঢাকা/আমিনুল