শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে আবর্জনামুক্ত হুরাসাগর নদের পাড়
Published: 6th, August 2025 GMT
গোবরের ঘুঁটে, খড়ের গাদা, প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের আবর্জনা এবং আগাছায় ঢাকা ছিল পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদের পাড়। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা বেড়া পৌরসভার বিনোদনকেন্দ্রটি আজ বুধবার আবার স্বাভাবিক রূপে ফিরেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টা পোর্ট এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বেড়া উপজেলার ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের’ অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের এ কাজে সহযোগিতা করেছে বেড়া পৌর কর্তৃপক্ষ।
বেড়া, সাঁথিয়া ও পাশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শত শত মানুষ প্রতিদিন নদের প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে আসেন। উৎসবের দিনে লোকসমাগম কয়েক হাজার ছাড়ায়। বর্ষাকালে এটি ‘মিনি কক্সবাজার’ নামেও পরিচিত। তবে নোংরা পরিবেশের কারণে ভ্রমণপিপাসুরা নদের পাড়ে বসে বিরক্ত হচ্ছিলেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার পরিচ্ছন্নতার দাবি জানালেও পৌর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এত দিন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামে বেড়া উপজেলার ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বেড়ার একমাত্র এই বিনোদনকেন্দ্রে নোংরা আবর্জনা দেখে কষ্ট পাচ্ছিলাম। তাই সবাই মিলে এটি পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিই। পৌর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আজ অনেকটা অংশ পরিষ্কার করতে পেরেছি।’
শুধু পৌর এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী নন, এ কর্মসূচিতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আজ সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলে পরিচ্ছন্নতার এই অভিযান। পৌরসভার পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয় যন্ত্রপাতি, ময়লা বহনকারী গাড়ি ও জনবল। এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন বেড়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের ফকির বলেন, ‘এই জায়গায় আমরা প্রায়ই আসি। আগে যেভাবে ময়লা-আবর্জনা থাকত, এখন তার অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে।’ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো.
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ও কলেজশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এত দিন এই জায়গায় নোংরা পরিবেশের কারণে ভালোভাবে বসা যেত না। শিক্ষার্থীরা সেই স্থানটি পরিষ্কার করছে দেখে খুব ভালো লাগছে।’
বেড়া পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম বলেন, বেড়ার শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উপজেলার একমাত্র বিনোদনকেন্দ্রটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন, এটি সত্যিই আনন্দের ও গর্বের বিষয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের এই কাজে সব ধরনের সহায়তা করছি।’
প্রসঙ্গত, প্রায় আট বছর আগে স্থানীয় বেড়া বিপিন বিহারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তোলে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রসভ র প পর ষ ক র সহয গ ত উপজ ল র নদ র প স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে: গণ অধিকার পরিষদ
মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার পর জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের পথনকশার (রোডম্যাপ) প্রতিক্রিয়া জানাতে দলটির আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, ‘২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বাতিল হওয়া কোটার অংশবিশেষ (৩০ শতাংশ) হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে ফিরে না এলে নতুনভাবে আন্দোলনের সূচনা হতো না। এখানে দুর্নীতি প্রতিরোধ বা অন্য কোনো দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়নি। অর্থাৎ গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু এই আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দিয়ে মিথ্যা ইতিহাসের ওপর জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।’
রাশেদ খান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, গণ অধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের ২০১৮ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস বাদ দিতে পরিকল্পিতভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি বড় ধরনের অপরাধ। জুলাই ঘোষণাপত্রের এই ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে মিথ্যা শেখাবে। ঠিক ৭১ নিয়ে যেভাবে আমাদের মিথ্যা শেখানো হয়েছে। তাহলে আওয়ামী লীগের তৈরি ইতিহাস ও অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?’
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড, নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারের হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি স্থান পায়নি। এসব ঘটনা এ প্রজন্মের মস্তিষ্ক ও মনস্তত্ত্বে বিপ্লবের বীজ বপন করে ও তারুণ্যকে বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করেছে। কিন্তু কেন ও কোন উদ্দেশ্যে তারুণ্যের এই সংগ্রামকে জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না?’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকালের ভাষণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, ‘এতে ১/১১ সৃষ্টির ধোঁয়াশা কেটে গেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকও বক্তব্য দেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, সরকার নূরে এরশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।
আরও পড়ুনঅংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করবে গণ অধিকার পরিষদ০৩ আগস্ট ২০২৫