গোবরের ঘুঁটে, খড়ের গাদা, প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের আবর্জনা এবং আগাছায় ঢাকা ছিল পাবনার বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদের পাড়। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা বেড়া পৌরসভার বিনোদনকেন্দ্রটি আজ বুধবার আবার স্বাভাবিক রূপে ফিরেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা কয়েক ঘণ্টা পোর্ট এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বেড়া উপজেলার ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের’ অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের এ কাজে সহযোগিতা করেছে বেড়া পৌর কর্তৃপক্ষ।

বেড়া, সাঁথিয়া ও পাশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শত শত মানুষ প্রতিদিন নদের প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে আসেন। উৎসবের দিনে লোকসমাগম কয়েক হাজার ছাড়ায়। বর্ষাকালে এটি ‘মিনি কক্সবাজার’ নামেও পরিচিত। তবে নোংরা পরিবেশের কারণে ভ্রমণপিপাসুরা নদের পাড়ে বসে বিরক্ত হচ্ছিলেন। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার পরিচ্ছন্নতার দাবি জানালেও পৌর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এত দিন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামে বেড়া উপজেলার ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেহরাব হোসাইন বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বেড়ার একমাত্র এই বিনোদনকেন্দ্রে নোংরা আবর্জনা দেখে কষ্ট পাচ্ছিলাম। তাই সবাই মিলে এটি পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিই। পৌর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আজ অনেকটা অংশ পরিষ্কার করতে পেরেছি।’

শুধু পৌর এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী নন, এ কর্মসূচিতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আজ সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলে পরিচ্ছন্নতার এই অভিযান। পৌরসভার পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয় যন্ত্রপাতি, ময়লা বহনকারী গাড়ি ও জনবল। এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন বেড়া পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের ফকির বলেন, ‘এই জায়গায় আমরা প্রায়ই আসি। আগে যেভাবে ময়লা-আবর্জনা থাকত, এখন তার অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে।’ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো.

সৌরভের ভাষ্য, ‘আমরা গর্বিত যে নিজেদের উদ্যোগে এমন একটা কাজ করতে পেরেছি।’

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ও কলেজশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এত দিন এই জায়গায় নোংরা পরিবেশের কারণে ভালোভাবে বসা যেত না। শিক্ষার্থীরা সেই স্থানটি পরিষ্কার করছে দেখে খুব ভালো লাগছে।’

বেড়া পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম বলেন, বেড়ার শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উপজেলার একমাত্র বিনোদনকেন্দ্রটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন, এটি সত্যিই আনন্দের ও গর্বের বিষয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের এই কাজে সব ধরনের সহায়তা করছি।’

প্রসঙ্গত, প্রায় আট বছর আগে স্থানীয় বেড়া বিপিন বিহারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তোলে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’। এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রসভ র প পর ষ ক র সহয গ ত উপজ ল র নদ র প স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় জাতিসংঘ কেন এত অক্ষম, এত অসহায়

১৯৫৬ সাল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তাদের গন্তব্য ছিল মিসরের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিনাই উপদ্বীপ ও গাজা উপত্যকা। আর পাঠানোর কারণ, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল মিলে মিসরের সুয়েজ খাল আক্রমণ করেছিল।

এখন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ চলছে এবং জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন সামনে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, জাতিসংঘ এখন গাজায় কী করতে পারে কিংবা কেন কিছুই করছে না?

যদিও সুয়েজ সংকট ও বর্তমান গাজা পরিস্থিতি আলাদা। তবু ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘ জরুরি বাহিনীর অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের গাজা দখল অভিযানে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে। ক্রমেই বেশিসংখ্যক আইনজ্ঞ ও গবেষক বলছেন, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড জাতিহত্যা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ছয়বার ভেটো দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবারও; যাতে নরকে পরিণত হওয়া গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা বা মানবিক সাহায্যের পথ খোলার প্রস্তাব পাস না হয়।

তবে ১৯৫৬ সালেও নিরাপত্তা পরিষদ অচল হয়ে পড়েছিল। কারণ, তখনকার দুই আগ্রাসী দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভেটো ক্ষমতা রাখত। ওই সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৫০ সালের ‘ইউনাইটিং ফর পিস’ প্রস্তাব ব্যবহার করে সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়।

জাতিসংঘ সনদের অধ্যায়-৭ অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিরক্ষী মোতায়েন বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

তবে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও বড় ভূমিকা রেখেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইসরায়েলের মিসর আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন।

যদিও সুয়েজ সংকট ও বর্তমান গাজার পরিস্থিতি আলাদা। তবু ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘ জরুরি বাহিনীর অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

জাতিসংঘ তখন একজন বলিষ্ঠ মহাসচিবও পেয়েছিল—দ্যাগ হ্যামারশোল্ডকে। তিনি জোটভুক্ত নয়, এমন দেশগুলোকে শান্তিরক্ষী পাঠাতে রাজি করাতে সক্ষম হন। মিসরও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করে।

কিন্তু কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আজ গাজাকে আন্তর্জাতিক ইস্যু করতে মোটেই রাজি নয়।

আজকের শিক্ষাটা হলো, সাধারণ পরিষদ চাইলে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটাতে পারে। তবে দিন শেষে জাতিসংঘ কার্যকর হয় শুধু তখনই, যখন সদস্যরাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখায়।

নিউইয়র্ক সিটিতে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ