বিজেপি নেতাদের পিঁপড়ার মতো টিপে মেরে ফেলার হুমকি মমতার
Published: 7th, August 2025 GMT
নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের মতো বিজেপি নেতা-কর্মীদের পিঁপড়ার মতো টিপে মেরে ফেলার হুমকি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার (৬ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলায় একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাশীল দল বিজেপিকে নিশানা করে মমতা এমন মন্তব্য করেন।
বিজেপি নেতাদের মালপোয়ার (এক ধরনের মিষ্টি) সঙ্গে তুলনা করে মমতা বলেন, “মালপোয়া নেতারা বলছেন আমি বাংলা ভাষায় কথা বলছি বলে আমাকে নাকি জাতীয় সুরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার করা উচিত। আমি তাদের বলতে চাই, তোদের বুকের পাটা থাকলে কখন গুলি করবি আয়! সিপিএম অনেক গুলি চালিয়েছে। ওদের গুলির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে রয়েছি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেরে ফাটিয়ে দিয়েছে। সেই লড়াই করে যদি বাঁচতে পারি, তবে তোদের তো পিঁপড়ার মতো টিপে মারবো।”
বুধবার ঝাড়গ্রামে ‘ভাষা-আন্দোলন’-এর পদযাত্রার শেষে জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলা ভাষার উপরে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “আজকে বাংলা ভাষায় কথা বললেই কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রশ্ন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন ভাষায় কথা বলতেন? ভারতের জাতীয় সংগীত কোন ভাষায় লেখা হয়েছিল?”
আরো পড়ুন:
বাংলায় কথা বললেই বিজেপি তাকে বলছে বাংলাদেশি: মমতা
চিকেন নেক নিয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ মমতার
মমতার স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি পরিষ্কার বলে দিচ্ছি বকলমে এনআরসি হচ্ছে না, হবে না। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে না। ভাষার উপর সন্ত্রাস, সংখ্যালঘুদের উপর সন্ত্রাস মানছি না, মানবো না। আমরা রক্ত দেবো কিন্তু বিনা যুদ্ধে আমরা এক ইঞ্চি জমি ছাড়বো না।”
মমতার হুঁশিয়ারি, “একজন প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ গেলে আমি সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াবো। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে তোমাদের মুখোশ টেনে খুলে দেব। আমি গোটা বিশ্বের মানুষকে জানাবো কিভাবে অগণতান্ত্রিক কায়দায় মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।”
এসআইআরের আড়ালে কেন্দ্রীয় সরকার এনআরসির পরিকল্পনা করছে। এই অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার ঝাড়গ্রামে পথে নেমে বললেন, “এনআরসি মানছি না, মানব না।” নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে হুঙ্কার ছেড়ে মমতা বলেন, “নাম বাদ দিতে হলে আমার দেহ পেরিয়ে যেতে হবে, এনআরসি মানছি না, মানব না।”
পাশাপাশি, বাংলার বাসিন্দা ও নির্বাচিত প্রতিনিধি কাছে আসাম সরকারের এনআরসির নোটিশ পাঠানো নিয়ে ফুঁসে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ওটা বেআইনি। গণন্ত্রণ বিরোধী, অসংবিধানিক। আসাম সরকার এই নোটিশ পাঠাতে পারে না। ধিক্কার জানাই।”
রাজনৈতিক মতাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যের বার্তা দিলেন মমতা। তিনি বলেন, “ভুলে যান পার্টি, ভুলে যান রাজনৈতিক দল। আপনার ঠিকানা, আপনাকেই রক্ষা করতে হবে। একটিও নাম যেন বাদ না যায়।”
এদিকে ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের জেরে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে চার আধিকারিককে। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বুধবার এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নির্বাচন কমিশন ‘বিজেপির ক্রীতদাস’ হিসেবে কাজ করছে।” কোন অধিকারে রাজ্যের আধিকারিকদের সাসপেন্ড করা হয়েছে? সেই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নই, কোনো অফিসারকেই শাস্তি পেতে দেবেন না। এদিন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সেই কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ম খ যমন ত র মমত র
এছাড়াও পড়ুন:
রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।
আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।
অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।
২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।
এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।