‘বন্ধু’ ট্রাম্পের শুল্কের ঠ্যালা সামলাতে পারবে তো মোদির ভারত!
Published: 7th, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল। এটি এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ভারতের ওপর আমেরিকার এই অপ্রত্যাশিত শুল্কারোপ দুই দেশের সম্পর্ককে বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে বলা হচ্ছে।
এর মধ্য দিয়ে যে বিষয়টা স্পষ্ট, তা হলো: ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর’ সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর চেয়ে নিজেদের দেশে উৎপাদন (অনশোরিং) বাড়াতে বেশি আগ্রহী।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ভারতের ওপর আগে থেকেই ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো ছিল। এখন সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্ক এক যুক্তিহীন ও ভয়াবহ উন্মাদনা২৮ জুলাই ২০২৫এই সিদ্ধান্তে অনেক বিশেষজ্ঞই বিস্মিত হয়েছেন। কারণ ভারতই প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে ছিল যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বসেছিল। এমনকি ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে অপরের প্রতি বারবার প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছেন। নিজেদের ‘বন্ধু’ বলেও অভিহিত করেছেন।
এই মুহূর্তে ব্রাজিল ছাড়া আর কোনো দেশ এত বেশি শুল্কের মুখে পড়েনি। এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন অব কানাডার কৌশল ও গবেষণা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাজিবুল্লাহ বলেছেন, ‘বাণিজ্য আলোচনা ভেঙে যাওয়া ছিল সত্যি অপ্রত্যাশিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত কঠিন সময়। এটি সম্ভবত বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত। এখন ভারত এমন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে পড়ে গেছে যারা কোনো চুক্তি ছাড়াই সবচেয়ে বেশি শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। এখন দরকার বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ, যাতে আবারও পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলা যায়।’
যদিও এই ৫০ শতাংশ শুল্ক আগামী তিন সপ্তাহ পর থেকে কার্যকর হবে এবং তা হঠাৎ করেই এসেছে বলে মনে হচ্ছে, তবে গত কয়েক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা থেকে দুই দেশের মতবিরোধের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল।
গত সপ্তাহেই ট্রাম্প হুমকি দেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য তিনি ভারতকে শাস্তি দেবেন। বাণিজ্য আলোচনা অচলাবস্থায় পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত—দুই দেশকেই ‘মৃত অর্থনীতি’ বলে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, বাংলাদেশের সামনে পথ কী১৬ মে ২০২৫আলোচনা থেমে গেছেগত বছর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২১২ বিলিয়ন ডলার যার মধ্যে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ভারতের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগেই বলেছিলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি এই বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিতে চান।
রয়টার্স জানিয়েছে, শুল্ক নিয়ে আলোচনার সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা মার্কিন শিল্পপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক তুলে নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি পণ্য কিনবে। এমনকি ভারতের অভ্যন্তরীণ চাপ থাকা সত্ত্বেও আমদানি করা গাড়ির ওপর কর কিছুটা কমানোর কথাও তারা বিবেচনা করেছিল।
তবে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর শুল্ক তারা ওঠাবে না। এই দুটি খাত ভারতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল, কারণ এসব খাতে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ কাজ করে। এমন অবস্থান কানাডাসহ আরও কিছু দেশেরও রয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্ক উন্মাদনায় এলোমেলো বিশ্ববাণিজ্য১০ এপ্রিল ২০২৫কূটনৈতিক মাত্রাও আছেএই পুরো আলোচনাটি কেবল বাণিজ্যকেন্দ্রিক নয়। এর পেছনে কিছু ভূরাজনৈতিক বিষয়ও রয়েছে বলে মনে করেন নিউ ইয়র্কভিত্তিক এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ফারওয়া আমের। তিনি বলছেন, এর একটি বড় উদাহরণ হলো—মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত কীভাবে শেষ হলো, সে বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক।
ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, তিনি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। কিন্তু ভারত বারবার বলেছে, এতে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা ছিল না এবং মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের সে সময় কোনো কথাও হয়নি।
অন্যদিকে পাকিস্তান বলেছে, তারা ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করবে।
ফারওয়া আমের বলছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেলের মজুত অনুসন্ধানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি করেছে।
এই সবকিছুই ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এখন দিল্লি কঠিন একটি পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। আমের বলেন, এই পরিস্থিতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি পরীক্ষা।
কিছুদিন আগেও ট্রাম্প ও মোদি একে অপরকে প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছেন। নিজেদের ‘বন্ধু’ বলেও অভিহিত করেছেন। কিন্তু এখন আর সে সম্পর্ক আর নেই।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র কর ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
১০০০ গোল থেকে আর কত দূরে রোনালদো ও মেসি
একজনের বয়স ৪০, অন্যজনের ৩৮।
কিন্তু খেলা দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁরা বুটজোড়া তুলে রাখার সময় পেরিয়ে এসেছেন। এখনো দুজনই ম্যাচের পর ম্যাচ গোল করে যাচ্ছেন, গোল করাচ্ছেন।
বলা হচ্ছে দুই চির তরুণের কথা। একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, অন্যজন লিওনেল মেসি।
এই তো শনিবারও রোনালদো জোড়া গোল করেছেন আল নাসরের হয়ে, সৌদি প্রো লিগে আল রিয়াদের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানের দাপুটে জয়ে। অন্যদিকে মেজর লিগ সকারে মেসি দুই গোল তো করেছেনই, সতীর্থকে দিয়ে করিয়েছেন আরও একটা। তাঁর ম্যাজিকেই ইন্টার মায়ামি ৩-২ গোলে হারিয়েছে ডিসি ইউনাইটেডকে।
দুজনেই এগোচ্ছেন অবিশ্বাস্য এক মাইলফলকের দিকে—ক্যারিয়ারে ১০০০ গোল। রোনালদো কিছুটা এগিয়ে, মেসি তাঁর পিছু পিছু।
কার কত গোলশনিবার রাতের জোড়া গোলের পর আপাতত রোনালদোর ক্যারিয়ার গোল সংখ্যা ৯৪৫। ১০০০ গোলের মাইলফলক থেকে তিনি আর মাত্র ৫৫ গোল দূরে। আল নাসরের হয়ে এই মৌসুমে ৫ ম্যাচ খেলে রোনালদো করেছেন ৪ গোল। এভাবে এগোতে থাকলে হয়তো এই মৌসুমেই তিনি সেই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি। আর তা না হলেও পরের মৌসুমে তো প্রায় নিশ্চিত।
মেসির জন্য এই পথ এখনো কিছুটা দীর্ঘ। আপাতত তাঁর মোট গোল ৮৮২। ১০০০-এর মাইলফলক ছুঁতে তাঁকে আরও ১১৮টি গোল করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও প্রায় আড়াই মৌসুমে তিনি এই মাইলফলক ছুঁতে পারেন। এখন দেখার অপেক্ষা, মেসি কি ইন্টার মায়ামিতে থেকেই সেই কীর্তি গড়েন, নাকি তাঁর নিজ দেশ আর্জেন্টিনায় ফিরে গিয়ে!
আরও পড়ুনবার্সেলোনা যেভাবে ‘দেশি’, রিয়াল মাদ্রিদ ‘বিদেশি’২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলফুটবলের ঐতিহাসিক তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস)। তাদের গবেষণা অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত শীর্ষ পর্যায়ের পেশাদার ফুটবলে ৫০০ বা এর বেশি গোল করেছেন এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে এক ও দুই নম্বর নামটা তো খুবই অনুমিত—রোনালদো ও মেসি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি যখন জাতীয় দলের জার্সিতে মুখোমুখি