মার্কিন শুল্কারোপ: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস না করার ঘোষণা মোদির
Published: 7th, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ‘দ্বিগুণ’ শুল্ক আরোপ করার একদিন পর কড়া বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কৃষক ও জেলেদের স্বার্থে ভারত কোনোভাবেই আপস করবে না।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। দিল্লিতে ‘এম এস স্বামীনাথন জন্মশতবার্ষিকী’ উপলক্ষে এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেন, “আমাদের কাছে কৃষকদের স্বার্থই সবার আগে। ভারত কখনো কৃষক, মৎস্যজীবী বা খামারিদের স্বার্থে আপস করবে না। আমরা জানি, এর জন্য বড় মূল্য দিতে হতে পারে, তবুও আমরা তৈরি।”
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর ইতিমধ্যেই ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। এরপর গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার তেল কেনায় ভারতের ওপর আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।
আরো পড়ুন:
ভারতের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত
হোয়াইট হাউজের জারি করা আদেশ অনুযায়ী, ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘অসাধারণ ও অস্বাভাবিক হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।
ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এই আদেশ জারির একুশ দিন পর থেকে এটি কার্যকর হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের দাবি জানিয়েছে। বিশেষত, ভুট্টা, সয়াবিন ও তুলো রপ্তানির পথ খুলে দিতে চায় তারা। তবে ভারত সরকার এখনই কৃষি ও দুগ্ধখাত পুরোপুরি উন্মুক্ত করতে রাজি নয়। কারণ এর ফলে দেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে আখ্যা দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা জানিয়েছে, ভারতের জ্বালানি আমদানি একান্তভাবে বাজার বাস্তবতা ও ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা বিবেচনায় করা হয়। সেই বাস্তবতা অগ্রাহ্য করে একতরফা শুল্ক আরোপ করায় ভারতের গভীর হতাশা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয় বলেছে, “জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে ভারত।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র
এছাড়াও পড়ুন:
টেপরির গল্প
আমার ছোট বোন টেপরি যখন জন্ম নিল, তখন বাংলা সিনেমার চিরায়ত সেই দুটি অপশন আমাদের সামনে চলে এল। ‘আম্মা নাকি টেপরি?’ অর্থাৎ সেদিন হাসপাতালে কোনো টেরিবেরি হয়ে গেলে আজ টেপরির জন্মদিনটাই আম্মার নিরস মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিণত হতে পারত।
জন্মের সময় টেপরির নাক প্রচলিত অর্থে বোঁচা ছিল। এই কারণেই আমি এই নাম রেখেছিলাম দুষ্টামি করে। জন্মের পর ওর গায়ের রং শ্যামলা ছিল, চুল ছিল কোঁকড়ানো। এই তথ্য গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর দাদি মরাকান্না জুড়িয়ে দিলেন।
আমরা বুঝতেই পারছিলাম না, দাদির এই কান্নার কারণ কী! তারপর জানা গেল, ‘শ্যামলা মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না’; ‘কোঁকড়ানো চুলের মেয়েদের স্বামীকপাল মন্দ হয়’...মূলত এসব ছাইভষ্ম ভেবে দাদি গঙ্গাকে আরও জলবতী করবার ব্রত নিয়েছিলেন।
মেয়ে ‘কালো’ নাকি ফরসা—এই বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ১১৪ নম্বর কেবিনের আশেপাশে ঘোরাফেরা করা কয়েক শ বছরের এক বৃদ্ধা আয়া আঙুল তুলে বললেন, ‘এই ম্যায়ার চুল পাতলা হইব, মাথার তালু ফরসা, মুখে-চোখে-গতরে কালা দাগগুনি সব প্যাটের ময়লা। ফুটব ফুটব গায়ের রং ফুটব!’
টেপরি বড় হতে থাকল, সেই শতবর্ষী আয়ার কথামতো আজ টেপরির চুলগুলোতে কেমন মিষ্টি অথচ আঁশটে গন্ধ, আর গায়ের রং? ওর গায়ের রং রুই মাছের ডিমের মতো, যখন তা ঢিমে আঁচে রান্না করা হয় সাত–আটটা কাঁচা মরিচের ভাপে।
এসব বাহ্যিক রূপবৈচিত্র্যের বাইরেও ও টেপরি, যে কিনা সকালে দাঁত মাজা বাদ দিয়ে আম্মার পাশে একটা ছোট বঁটি নিয়ে পেঁয়াজের পর পেঁয়াজ, রসুনের পর রসুন দফারফা করে।
এই তো কিছুদিন আগেও, মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ পড়ার পর টেপরির সঙ্গে অনেক দিন কথা বলিনি। বলতে পারিনি। আমার ভেতর তখন কী হয়েছিল আমি আজও বুঝিনি। উপন্যাসে ছোট বোন রঞ্জু মারা গিয়েছিল। আর তার ভাই ‘খোকা’ ভেসে গিয়েছিল দেশ নামের একটা পুকুরের অনেক গভীরে। হয়তো এই দেশকে আমারও তখন একটা পুকুর মনে হয়েছিল।
একুশ মে, বারটা এক, একটা ছোট্ট কেক, আমরা চারজন। দেশলাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে মোমবাতিগুলো কেকের ওপর চোখ বন্ধ করে বসে ছিল নাগা সন্ন্যাসীদের মতো। কেকের ওপর আমার দেওয়া ‘টেপরি’ নামটাই লেখার কথা ছিল, কিন্তু সেটা বানান ভুল হয়ে ‘পেটরি’ হয়ে গেছে। এত চ্যুতি–বিচ্যুতির ভেতর আব্বা কেক মুখে নিয়ে বলে, ‘মা, তোমার হাত ধোয়া ছিল তো?’
পরিবারের আত্মীয় নাম্নী লোকেরা টেপরির জন্মদিনের কথা জানে নাকি জানে না, আমি জানি না। খেয়াল করলাম, তেমন কেউই টেপরিকে বারটায় কিংবা বারটা একে, এমনকি তিরিশেও উইশ করল না। এমন সময়ে টেপরির মোবাইলে একটা মেসেজ এল, কিন্তু সেটাও টেলিকম কোম্পানি থেকে। টেপরিও এসব বুঝে যাবে...এদের সবাইকে চিনে যাবে একদিন।
টেপরির ব্যাপারে একটা–দুটো বাক্য বলা অসম্ভব। সে হয়তো সেই বোনটা, যে টেলিফোনের অন্য পাশে বসে তার রাগের মাথায় ঘরছাড়া ভাইকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য হু হু করে কাঁদে।
অকারণ এই কান্নাপর্ব আমার যাপিত সময়ে সশস্ত্র হামলা করে, দেখি অপু আর দুর্গা কাশবনে ছুটছে, দূরে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে হারিয়ে যাচ্ছে রেলগাড়ি।
টেপরি বড় হয়ে গেল। বিস্ময়কর একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে কিশোরী থেকে তরুণী আর তারপর আরও ধীরে ধীরে ধীরে কোনো এক ‘নারী’ হয়ে উঠল ও।
আমি ওকে দেখি আর ভাবি, বিকেলের পর বিকেল। দেব দেব করে কোনো একটা বড়সড় গিফট আর দেওয়া হয়ে ওঠে না। এই মন ভোলানো ভাবনাগুলোই ওকে গিফট হিসেবে দেওয়া গেলে ভালো হতো।
কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে দাদির দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে টেপরির বিয়েটাও হয়ে গেল। আম্মার শরীর খারাপ থেকে খারাপতর হওয়ায় নিজের বিয়ের কাজও ওকেই করতে হলো।
বিয়ের আগের সময়গুলোতে আমাদের প্রিয় আব্বা হঠাৎ এক–দেড় মাসেই অনেকটুকু বুড়িয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম, আব্বা ইস্পাত কঠিন হলে এই একটা মাত্র বিষয়ে উনি প্রচণ্ড অসহায়বোধ করেন। বাবা–মেয়ের সম্পর্কটাই হয়তো এমন।
টেপরি এখন দূরে চলে যাবে আমাদের কাছ থেকে। আমাদের বাসাটা ‘পাখিহীন’ হয়ে কীভাবে টিকে থাকবে; আমি অফিসের ফাঁকে, রাস্তার জ্যামে, সিনেমা হলে সিনেমা শেষ হওয়ার পর, নদীর পাড়ের বাতাসে কিংবা মধ্যরাতের ছাদে হঠাৎ-বিঠাৎ সেইটাই ভাবি।