‘ভারতকে পাল্টা জবাব দিতে হবে’: ট্রাম্পের শুল্ক ইস্যুতে শশী থারুর
Published: 7th, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমদানি করা মার্কিন পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আগ্রাসনের জবাব দেওয়া উচিত।
কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন।
সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের শশী থারুর বলেন, ‘প্রথমে আমাদের আলোচনায় বসা উচিত। জানি না, ট্রাম্প আমাদের ওপর এত রেগে আছেন কেন। চীনকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের মাত্র ২১ দিন। এখন যদি তারা শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, তবে আমাদের জবাবও হতে হবে পাল্টা শুল্ক।’
থারুর জানান, বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে গড়ে ১৭ শতাংশ শুল্ক নেয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদেরও সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা উচিত। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি এটা করে, আমরাও একই কাজ করব।’
বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।শশী থারুর, কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতাগতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখার শাস্তি হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভারত বারবারই বলেছে, তার জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়ার সস্তা তেল কেনা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।
ট্রাম্পের চাপের মুখেও ভারত কি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাবে—এমন প্রশ্নে থারুর বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি বুঝে আমাদের ঠিক করতে হবে, কোথা থেকে তেল ও গ্যাস কেনা হবে। যদি রাশিয়ার তেলের দাম অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম হয়, তবে কেন আমরা লাভবান হব না? উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে আমাদের তেল ও গ্যাস লাগবেই।’
বর্তমানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা কার্যত স্থগিত রয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে কৃষিসহ বেশ কিছু কৌশলগত খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর প্রবেশাধিকার দিতে ভারতের রাজি না হওয়ার বিষয়টি বলা হচ্ছে। দেশীয় কৃষকদের স্বার্থেই এমন অবস্থান নিয়েছে নয়াদিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপকে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে ভারত বলেছে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, একই কাজ অনেক দেশই করছে। এদের মধ্যে চীনও রয়েছে। ভারতের মতে, এ সিদ্ধান্ত ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’।ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারতের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। আমি জানি, এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু আমি প্রস্তুত। দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী ও পশুপালকদের স্বার্থে ভারত প্রস্তুত।’
আরও পড়ুন‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী১ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষির সঙ্গে যুক্ত। সরকার যে–ই হোক—মোদির কিংবা আমাদের; কৃষকের পাশে দাঁড়াতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রসঙ্গে থারুর বলেন, ‘বিদেশে আমাদের সত্যিকার বন্ধুরা বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু যাঁরা বুঝতে প্রস্তুত নন, আমাদের সম্পর্ককে আমাদের মতো করে মূল্য দেন না, তাঁদের বাদ দিয়ে আমাদের অন্য বন্ধু খুঁজতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র থ র র বল ন শ ল ক আর প আম দ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
টেপরির গল্প
আমার ছোট বোন টেপরি যখন জন্ম নিল, তখন বাংলা সিনেমার চিরায়ত সেই দুটি অপশন আমাদের সামনে চলে এল। ‘আম্মা নাকি টেপরি?’ অর্থাৎ সেদিন হাসপাতালে কোনো টেরিবেরি হয়ে গেলে আজ টেপরির জন্মদিনটাই আম্মার নিরস মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিণত হতে পারত।
জন্মের সময় টেপরির নাক প্রচলিত অর্থে বোঁচা ছিল। এই কারণেই আমি এই নাম রেখেছিলাম দুষ্টামি করে। জন্মের পর ওর গায়ের রং শ্যামলা ছিল, চুল ছিল কোঁকড়ানো। এই তথ্য গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর দাদি মরাকান্না জুড়িয়ে দিলেন।
আমরা বুঝতেই পারছিলাম না, দাদির এই কান্নার কারণ কী! তারপর জানা গেল, ‘শ্যামলা মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না’; ‘কোঁকড়ানো চুলের মেয়েদের স্বামীকপাল মন্দ হয়’...মূলত এসব ছাইভষ্ম ভেবে দাদি গঙ্গাকে আরও জলবতী করবার ব্রত নিয়েছিলেন।
মেয়ে ‘কালো’ নাকি ফরসা—এই বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ১১৪ নম্বর কেবিনের আশেপাশে ঘোরাফেরা করা কয়েক শ বছরের এক বৃদ্ধা আয়া আঙুল তুলে বললেন, ‘এই ম্যায়ার চুল পাতলা হইব, মাথার তালু ফরসা, মুখে-চোখে-গতরে কালা দাগগুনি সব প্যাটের ময়লা। ফুটব ফুটব গায়ের রং ফুটব!’
টেপরি বড় হতে থাকল, সেই শতবর্ষী আয়ার কথামতো আজ টেপরির চুলগুলোতে কেমন মিষ্টি অথচ আঁশটে গন্ধ, আর গায়ের রং? ওর গায়ের রং রুই মাছের ডিমের মতো, যখন তা ঢিমে আঁচে রান্না করা হয় সাত–আটটা কাঁচা মরিচের ভাপে।
এসব বাহ্যিক রূপবৈচিত্র্যের বাইরেও ও টেপরি, যে কিনা সকালে দাঁত মাজা বাদ দিয়ে আম্মার পাশে একটা ছোট বঁটি নিয়ে পেঁয়াজের পর পেঁয়াজ, রসুনের পর রসুন দফারফা করে।
এই তো কিছুদিন আগেও, মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ পড়ার পর টেপরির সঙ্গে অনেক দিন কথা বলিনি। বলতে পারিনি। আমার ভেতর তখন কী হয়েছিল আমি আজও বুঝিনি। উপন্যাসে ছোট বোন রঞ্জু মারা গিয়েছিল। আর তার ভাই ‘খোকা’ ভেসে গিয়েছিল দেশ নামের একটা পুকুরের অনেক গভীরে। হয়তো এই দেশকে আমারও তখন একটা পুকুর মনে হয়েছিল।
একুশ মে, বারটা এক, একটা ছোট্ট কেক, আমরা চারজন। দেশলাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে মোমবাতিগুলো কেকের ওপর চোখ বন্ধ করে বসে ছিল নাগা সন্ন্যাসীদের মতো। কেকের ওপর আমার দেওয়া ‘টেপরি’ নামটাই লেখার কথা ছিল, কিন্তু সেটা বানান ভুল হয়ে ‘পেটরি’ হয়ে গেছে। এত চ্যুতি–বিচ্যুতির ভেতর আব্বা কেক মুখে নিয়ে বলে, ‘মা, তোমার হাত ধোয়া ছিল তো?’
পরিবারের আত্মীয় নাম্নী লোকেরা টেপরির জন্মদিনের কথা জানে নাকি জানে না, আমি জানি না। খেয়াল করলাম, তেমন কেউই টেপরিকে বারটায় কিংবা বারটা একে, এমনকি তিরিশেও উইশ করল না। এমন সময়ে টেপরির মোবাইলে একটা মেসেজ এল, কিন্তু সেটাও টেলিকম কোম্পানি থেকে। টেপরিও এসব বুঝে যাবে...এদের সবাইকে চিনে যাবে একদিন।
টেপরির ব্যাপারে একটা–দুটো বাক্য বলা অসম্ভব। সে হয়তো সেই বোনটা, যে টেলিফোনের অন্য পাশে বসে তার রাগের মাথায় ঘরছাড়া ভাইকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য হু হু করে কাঁদে।
অকারণ এই কান্নাপর্ব আমার যাপিত সময়ে সশস্ত্র হামলা করে, দেখি অপু আর দুর্গা কাশবনে ছুটছে, দূরে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে হারিয়ে যাচ্ছে রেলগাড়ি।
টেপরি বড় হয়ে গেল। বিস্ময়কর একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে কিশোরী থেকে তরুণী আর তারপর আরও ধীরে ধীরে ধীরে কোনো এক ‘নারী’ হয়ে উঠল ও।
আমি ওকে দেখি আর ভাবি, বিকেলের পর বিকেল। দেব দেব করে কোনো একটা বড়সড় গিফট আর দেওয়া হয়ে ওঠে না। এই মন ভোলানো ভাবনাগুলোই ওকে গিফট হিসেবে দেওয়া গেলে ভালো হতো।
কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে দাদির দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে টেপরির বিয়েটাও হয়ে গেল। আম্মার শরীর খারাপ থেকে খারাপতর হওয়ায় নিজের বিয়ের কাজও ওকেই করতে হলো।
বিয়ের আগের সময়গুলোতে আমাদের প্রিয় আব্বা হঠাৎ এক–দেড় মাসেই অনেকটুকু বুড়িয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম, আব্বা ইস্পাত কঠিন হলে এই একটা মাত্র বিষয়ে উনি প্রচণ্ড অসহায়বোধ করেন। বাবা–মেয়ের সম্পর্কটাই হয়তো এমন।
টেপরি এখন দূরে চলে যাবে আমাদের কাছ থেকে। আমাদের বাসাটা ‘পাখিহীন’ হয়ে কীভাবে টিকে থাকবে; আমি অফিসের ফাঁকে, রাস্তার জ্যামে, সিনেমা হলে সিনেমা শেষ হওয়ার পর, নদীর পাড়ের বাতাসে কিংবা মধ্যরাতের ছাদে হঠাৎ-বিঠাৎ সেইটাই ভাবি।