এবার ইলেকট্রনিক শিল্পের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা আছে বলে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বুধবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যেসব দেশের কোম্পানি আমেরিকায় উৎপাদন করছে না বা ভবিষ্যতে করার পরিকল্পনাও করেনি, এমন দেশের কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প বলেন, কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি না দিলে সব চিপ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যারা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করছে বা করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, তাদের ওপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। ঠিক কত সংখ্যক চিপ এই শুল্কের আওতায় পড়বে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ৫২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলারের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ও গবেষণা ভর্তুকি কর্মসূচি চালু করে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে বাণিজ্য বিভাগ দেশটির পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে চিপ কারখানা স্থাপন করতে রাজি করায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছিল, বর্তমানে বিশ্বে উৎপাদিত সেমিকন্ডাক্টরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা মাত্র ১২ শতাংশ, ১৯৯০ সালে যা ছিল ৪০ শতাংশ।

ট্রাম্প আরও সতর্ক করে বলেন, ‘ ধরা যাক, কেউ বলল যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করবে; কিন্তু পরে তা না করে, তখন আমরা সেটি হিসাব করে আদায় করব। আপনাকে তখন সেই শুল্ক দিতে হবে, এটা নিশ্চিত।’

নতুন এই শুল্ক কত ধরনের বা কোন কোন দেশ থেকে আমদানি হওয়া সেমিকন্ডাক্টরে আরোপিত হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য চিপ তৈরি করা তাইওয়ানের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএমএসসি ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা করেছে। ফলে এনভিডিয়ার মতো বড় ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝা থেকে রেহাই পেতে পারে।

এনভিডিয়া জানিয়েছে, তারা আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি চিপ ও ইলেকট্রনিকে শত শত বিলিয়ন বা হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। তবে এনভিডিয়ার কোনো মুখপাত্র এ প্রতিবেদনে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জ্যাকবসেন বলেন, যেসব বড় কোম্পানির হাতে প্রচুর নগদ অর্থ আছে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা গড়ে তুলতে পারে, তারাই এই সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে। যারা বড়, এখানে শুধু তারাই বাঁচবে।

এই সেমিকন্ডাক্টর-শুল্ক মূলত চীনকে লক্ষ্য করে আরোপ করা হতে পারে বলে বাজারের ধারণা। পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের সিনিয়র ফেলো মার্টিন চোরজেম্পা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে বর্তমানে যে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে খাতটির বড় অংশই এই শুল্কের বাইরে থাকবে।

মার্টিন চোরজেম্পা আরও বলেন, চীনে তৈরি চিপগুলো যেহেতু এই শুল্কছাড় পাবে না, তাই এসএমআইসি বা হুয়াওয়ের তৈরি চিপ, যেগুলো সাধারণত চীনে তৈরি যন্ত্রে ব্যবহার হয়—ছাড় পাবে না। শুধু সেমিকন্ডাক্টরে এই শুল্ক আরোপ করা হলে বা চিপযুক্ত যন্ত্রাংশে না করা হয়, তাহলে এর প্রভাব খুব একটা দেখা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো চিপ উৎপাদনকারী দেশগুলো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করেছে। এই চুক্তির কারণে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও ওষুধসহ অধিকাংশ রপ্তানিপণ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৫ শতাংশ একক শুল্কে চুক্তি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান আলাদাভাবে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর তুলনায় তাদের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ না করার আশ্বাস দিয়েছে। এ থেকে ধরে নেওয়া যায়, তাদের ক্ষেত্রেও ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র শ ল ক আর প এই শ ল ক উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

খেলার আগে–পরে এত কথা, মাঠে আগের মতোই ভারতের একতরফা জয়

অনেকটা একই চিত্রনাট্য। ম্যাচের আগে উত্তাপ ছড়াল নানা ঘটনাপ্রবাহ। মাঠের ভেতরে সামান্য তর্কেও জড়ালেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু ক্রিকেটীয় লড়াই? তা থেকে গেল একপেশেই। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নীল সমুদ্রের পালে হাওয়া লাগল ঠিকই। কিন্তু ভারত–পাকিস্তান ঐতিহ্যের ক্রিকেট রোমাঞ্চ পানসে হওয়ার বেদনাও হয়তো থেকে গেল কোথাও।

দুবাইয়ে রোববার এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতের ৬ উইকেটের জয়ে একটা নতুন ইতিহাসও লেখা হলো। শেষ ছয়টি ম্যাচেই এই লড়াইয়ে জয়ী দলের নাম ভারত। এর আগে ভারত–পাকিস্তান লড়াইয়ের ৭৪ বছরের ইতিহাসে কখনো টানা পাঁচটির বেশি ম্যাচ জিততে পারেনি কোনো দল; এবার হলো সেটাই। ৩ বছর আগে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে এই দুবাইয়েই ভারতের বিপক্ষে শেষ জয়টা পেয়েছিল পাকিস্তান। এর পর থেকে সব ম্যাচেরই জয়ী দলের নাম ভারত। আজ তো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশ রান তাড়া করেই জিতল তারা।

ম্যাচের মাঝবিরতিতে অবশ্য মনে হচ্ছিল এবার হয়তো লড়াইটা অন্তত গ্রুপ পর্বে দুই দলের আগের ম্যাচের চেয়ে বেশি হবে। ভারতীয় ফিল্ডারদের ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার দায় তো আছেই, তবে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও এক সপ্তাহ আগের ম্যাচের চেয়ে ভালো করেছিলেন।  

পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান

সম্পর্কিত নিবন্ধ