জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, শহীদ ও আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা বা মতামত প্রাধান্য পাওয়ায় সেখানে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেজন্য ৫ আগস্ট ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পোস্ট করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এর আগে গতকাল বুধবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে (৫ আগস্ট) কক্সবাজার সফরের বিষয়ে হাসনাতসহ এনসিপির পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে ওই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

নোটিশের জবাবে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে, আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাই-বোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি। কাজেই এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একই সঙ্গে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।’

হাসনাত লিখেছেন, ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে তিনি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁকে না পেয়ে পরবর্তী সময়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবহিত করেন যে তিনি তাঁর স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছেন। যেহেতু নাসীরুদ্দীন সে সময় দলীয় কার্যালয়ে আহ্বায়কের সঙ্গে ছিলেন, তিনি তাঁকে আহ্বায়ককে বিষয়টি জানাতে অনুরোধ করেন। নাসীরুদ্দীন তাঁকে জানান যে, তিনি তা করবেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর নাসীরুদ্দীন তাঁকে নিশ্চিত করেন যে, তিনি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহ্বায়ক এতে সম্মতি দিয়েছেন। পরে তাঁর সঙ্গে নাসীরুদ্দীন, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।

‘বিধিবহির্ভূত’ নোটিশ ও তা গণমাধ্যমে প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন

বিমানবন্দর থেকে তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গণমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। নোটিশের জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘কিছু গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।.

..নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের এই পুরোনো অপরাধপ্রবণতা আমাকে একই সঙ্গে অবাক এবং ক্ষুব্ধ করে।’

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘স্লাট শেমিং’কে (নারীকে হেয় করা) কক্সবাজার সফরের ঘটনার ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয়’ দিক বলে উল্লেখ করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরেও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের যোগসাজশে একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এনসিপির পক্ষ থেকে এই গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘অসৎ গণমাধ্যমের’ বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি লেখেন, ‘তার পরিবর্তে দল এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ (কারণ দর্শানো) প্রকাশ করেছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা আইনের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি দলের কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি।’

এমন ‘বিধিবহির্ভূত’ শোকজ দেওয়া এবং অতি উৎসাহী হয়ে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হয়েছে, সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাবার অনুরোধ করে হাসনাত লিখেছেন, ‘আমি এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং মনে করি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে আরও পরিণত হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক এনস প র আম দ র আগস ট উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে জুলাই যোদ্ধাদের ফুল দেওয়া হলো পিওনকে দিয়ে!

শরীয়তপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আহত জুলাই যোদ্ধাদের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী (পিওন) দিয়ে ফুল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন আহত জুলাই যোদ্ধারা।

জেলা প্রশাসকের দাবি, নেজারত ডেপুটি কালেক্টরের (এনডিসি) নেতৃত্বে ফুল দেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগ সঠিক নয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম ও সিভিল সার্জন ডা. মো. রেহান উদ্দিন। 

অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে আন্দোলনে শহীদ হওয়া ১৪ জনের পরিবার ও ৮৩ জন আহতদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। 

জুলাই যোদ্ধাদের অভিযোগ, ১৪ জন শহীদের পরিবারের হাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার নিজে উপহার তুলে দিলেও ভিন্নতা দেখা যায় আহতদের উপহার ও ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়ার ক্ষেত্রে। তাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পিওন দিয়ে ফুল দেওয়া হয়। 

ফাতেমা ইয়াসমিন নামে নারী জুলাই যোদ্ধা বলেন, “ডিসি বা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে আমাদের ফুল দেওয়ার কথা ছিল। তারা আমাদের ডিসি অফিসের পিয়ন দিয়ে ফুল ও উপহার দিয়েছেন। এর আগেও জেলা প্রশাসন আমাদের জুলাই কন্যাদের উপহার দিয়েছেন পিয়ন দিয়ে, তারা ফুল অনেকের হাতের উপর ফেলে দিয়েছে। আমরা কখনোই তাদের থেকে সম্মান পাইনি। তাদের মনোভাব স্বৈরাচারী।” 

নারী জুলাই যোদ্ধা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “এখানে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। যারা শহীদ হয়েছেন তারা আমাদেরই সহযোদ্ধা। তাদের পরিবারের হাতে ডিসি নিজে সম্মাননা তুলে দিয়েছেন এটি বেশ ভালো, তবে আমাদের বেলায় কেন আলাদাভাবে দিচ্ছে। এখানে প্রশ্ন থেকেই যায়।”

জুলাই যোদ্ধা আব্দুর রহমান ডালিম বলেন, “আমরা জানতাম আমাদের জেলা প্রশাসক ফুলেল শুভেচ্ছা ও উপহারসামগ্রী তুলে দেবেন।   জেলা প্রশাসক সেই জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন। এটি আসলেই দুঃখজনক। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এটাই আমরা চাই।” 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, “এনডিসির নেতৃত্বে ফুল দেয়া হয়েছে এবং তিনি নিজেই ছিলেন। যারা অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগ সঠিক নয়।”

ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ সাফল্য তুলে ধরলেন প্রেস সচিব
  • কলেজ মাঠের পানি নিষ্কাশন নিয়ে শিক্ষক-স্থানীয়দের সংঘর্ষ
  • ‘৭৮ জন জুলাই যোদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে’ 
  • শহীদ ও আহতদের স্মরণে সচিবালয়ে দোয়া
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যালয়ে আগুন, ২৫ শিক্ষার্থী আহত
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস: বায়তুল মোকাররমে খতম ও বিশেষ দোয়া
  • শরীয়তপুরে জুলাই যোদ্ধাদের ফুল দেওয়া হলো পিওনকে দিয়ে!
  • মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ, আহত ৬