বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিরোধীতাকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামী শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শাখা ছাত্রদল।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ সমাবেশ করে সংগঠনটি। এ সময় ২১ জন আওয়ামী শিক্ষকের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করে তারা।

ওই ২১ জন শিক্ষক হলেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.

এসএম একরামুল্লা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাক আহম্মেদ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী জাকারিয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম, মার্কেটিং বিভাগের ড. এম. বোরাক আলী, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আরো পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ

রাবিতে বিজয় ফিস্টের খাবার খেয়ে অসুস্থ ৮৩ শিক্ষার্থী

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন, আইন বিভাগের অধ্যাপক আবু নাসের ওয়াহেদ, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রভাস কুমার কর্মকার, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, আইন বিভাগের সাদিকুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ আজম, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এনএএম ফাইসাল আহম্মেদ, চারুকলা বিভাগের সুজন সেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ রানা, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক কাজী জাহিদ হাসান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস।

এ সময় ‘স্বৈরাচারের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘সৈরাচারের ঠিকানা, এই রাবিতে হবে না’, ‘সুপারিশ, স্বজনপ্রীতি নিয়োগ বাণিজ্য, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্ৰাম সংগ্ৰাম’, ‘বছর গেল, আওয়ামী লীগের দোসর কেনো’, ‘প্রশাসনের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের।

সমাবেশে রাবি শাখা ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নিয়ে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখানে অনেক আওয়ামী লীগের শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারী আছেন, আমাদের কাছে তাদের রিপোর্ট আছে। ৫ আগস্টে রাবির সাবেক উপাচার্য তাপুকে স্যারকে কোন গাড়িতে করে কারা ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে গেছেন, সেই গাড়ির নাম্বারও আমাদের কাছে আছে। তাদের পক্ষ নিয়ে এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না, এমন কোনো মন্তব্য করবেন না, যাতে রাবি ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা আগামী রবিবার-সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত ও গণস্বাক্ষর নেব। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে। এসব শিক্ষকদের ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল উপ চ র য স ব ক উপ ছ ত রদল প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

টেপরির গল্প

আমার ছোট বোন টেপরি যখন জন্ম নিল, তখন বাংলা সিনেমার চিরায়ত সেই দুটি অপশন আমাদের সামনে চলে এল। ‘আম্মা নাকি টেপরি?’ অর্থাৎ সেদিন হাসপাতালে কোনো টেরিবেরি হয়ে গেলে আজ টেপরির জন্মদিনটাই আম্মার নিরস মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিণত হতে পারত।

জন্মের সময় টেপরির নাক প্রচলিত অর্থে বোঁচা ছিল। এই কারণেই আমি এই নাম রেখেছিলাম দুষ্টামি করে। জন্মের পর ওর গায়ের রং শ্যামলা ছিল, চুল ছিল কোঁকড়ানো। এই তথ্য গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর দাদি মরাকান্না জুড়িয়ে দিলেন।

আমরা বুঝতেই পারছিলাম না, দাদির এই কান্নার কারণ কী! তারপর জানা গেল, ‘শ্যামলা মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না’; ‘কোঁকড়ানো চুলের মেয়েদের স্বামীকপাল মন্দ হয়’...মূলত এসব ছাইভষ্ম ভেবে দাদি গঙ্গাকে আরও জলবতী করবার ব্রত নিয়েছিলেন।

মেয়ে ‘কালো’ নাকি ফরসা—এই বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের ১১৪ নম্বর কেবিনের আশেপাশে ঘোরাফেরা করা কয়েক শ বছরের এক বৃদ্ধা আয়া আঙুল তুলে বললেন, ‘এই ম্যায়ার চুল পাতলা হইব, মাথার তালু ফরসা, মুখে-চোখে-গতরে কালা দাগগুনি সব প্যাটের ময়লা। ফুটব ফুটব গায়ের রং ফুটব!’

টেপরি বড় হতে থাকল, সেই শতবর্ষী আয়ার কথামতো আজ টেপরির চুলগুলোতে কেমন মিষ্টি অথচ আঁশটে গন্ধ, আর গায়ের রং? ওর গায়ের রং রুই মাছের ডিমের মতো, যখন তা ঢিমে আঁচে রান্না করা হয় সাত–আটটা কাঁচা মরিচের ভাপে।

এসব বাহ্যিক রূপবৈচিত্র্যের বাইরেও ও টেপরি, যে কিনা সকালে দাঁত মাজা বাদ দিয়ে আম্মার পাশে একটা ছোট বঁটি নিয়ে পেঁয়াজের পর পেঁয়াজ, রসুনের পর রসুন দফারফা করে।

এই তো কিছুদিন আগেও, মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ পড়ার পর টেপরির সঙ্গে অনেক দিন কথা বলিনি। বলতে পারিনি। আমার ভেতর তখন কী হয়েছিল আমি আজও বুঝিনি। উপন্যাসে ছোট বোন রঞ্জু মারা গিয়েছিল। আর তার ভাই ‘খোকা’ ভেসে গিয়েছিল দেশ নামের একটা পুকুরের অনেক গভীরে। হয়তো এই দেশকে আমারও তখন একটা পুকুর মনে হয়েছিল।

একুশ মে, বারটা এক, একটা ছোট্ট কেক, আমরা চারজন। দেশলাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে মোমবাতিগুলো কেকের ওপর চোখ বন্ধ করে বসে ছিল নাগা সন্ন্যাসীদের মতো। কেকের ওপর আমার দেওয়া ‘টেপরি’ নামটাই লেখার কথা ছিল, কিন্তু সেটা বানান ভুল হয়ে ‘পেটরি’ হয়ে গেছে। এত চ্যুতি–বিচ্যুতির ভেতর আব্বা কেক মুখে নিয়ে বলে, ‘মা, তোমার হাত ধোয়া ছিল তো?’

পরিবারের আত্মীয় নাম্নী লোকেরা টেপরির জন্মদিনের কথা জানে নাকি জানে না, আমি জানি না। খেয়াল করলাম, তেমন কেউই টেপরিকে বারটায় কিংবা বারটা একে, এমনকি তিরিশেও উইশ করল না। এমন সময়ে টেপরির মোবাইলে একটা মেসেজ এল, কিন্তু সেটাও টেলিকম কোম্পানি থেকে। টেপরিও এসব বুঝে যাবে...এদের সবাইকে চিনে যাবে একদিন।

টেপরির ব্যাপারে একটা–দুটো বাক্য বলা অসম্ভব। সে হয়তো সেই বোনটা, যে টেলিফোনের অন্য পাশে বসে তার রাগের মাথায় ঘরছাড়া ভাইকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য হু হু করে কাঁদে।

অকারণ এই কান্নাপর্ব আমার যাপিত সময়ে সশস্ত্র হামলা করে, দেখি অপু আর দুর্গা কাশবনে ছুটছে, দূরে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে হারিয়ে যাচ্ছে রেলগাড়ি।

টেপরি বড় হয়ে গেল। বিস্ময়কর একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে কিশোরী থেকে তরুণী আর তারপর আরও ধীরে ধীরে ধীরে কোনো এক ‘নারী’ হয়ে উঠল ও।

আমি ওকে দেখি আর ভাবি, বিকেলের পর বিকেল। দেব দেব করে কোনো একটা বড়সড় গিফট আর দেওয়া হয়ে ওঠে না। এই মন ভোলানো ভাবনাগুলোই ওকে গিফট হিসেবে দেওয়া গেলে ভালো হতো।

কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে দাদির দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে টেপরির বিয়েটাও হয়ে গেল। আম্মার শরীর খারাপ থেকে খারাপতর হওয়ায় নিজের বিয়ের কাজও ওকেই করতে হলো।

বিয়ের আগের সময়গুলোতে আমাদের প্রিয় আব্বা হঠাৎ এক–দেড় মাসেই অনেকটুকু বুড়িয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম, আব্বা ইস্পাত কঠিন হলে এই একটা মাত্র বিষয়ে উনি প্রচণ্ড অসহায়বোধ করেন। বাবা–মেয়ের সম্পর্কটাই হয়তো এমন।

টেপরি এখন দূরে চলে যাবে আমাদের কাছ থেকে। আমাদের বাসাটা ‘পাখিহীন’ হয়ে কীভাবে টিকে থাকবে; আমি অফিসের ফাঁকে, রাস্তার জ্যামে, সিনেমা হলে সিনেমা শেষ হওয়ার পর, নদীর পাড়ের বাতাসে কিংবা মধ্যরাতের ছাদে হঠাৎ-বিঠাৎ সেইটাই ভাবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ