ভারতের বিহার রাজ্যে এক তরুণকে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যের দরভাঙা জেলায় এ ঘটনা ঘটে। ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণ একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্ণপ্রথা ভেঙে বিয়ে করায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিহত তরুণের নাম রাহুল কুমার। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বেনতা থানাধীন এলাকায় গুলির খবর পায় তারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাহুলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

আমার দুই ভাই, মা, দাদি, বোন এবং দুলাভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।নিহত তরুণের স্ত্রী।

একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নিহত রাহুল কুমার নার্সিংয়ের ছাত্র ছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রেমশঙ্কর ঝা (৪৫)। তাঁর মেয়ে দরভাঙা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) নার্সিং শিক্ষার্থী।’ প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাহুল গত এপ্রিলে প্রেমশঙ্করের মেয়ে তন্নু প্রিয়াকে বিয়ে করেন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলি করার পর উপস্থিত জনতা প্রেমশঙ্করকে ধরে মারধর করেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ডিএমসিএইচের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ওই দিনের কথা স্মরণ করে রাহুলের স্ত্রী তন্নু প্রিয়া অভিযোগ করেন, ‘কলেজে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার সময় রাহুল আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। হোস্টেলে পানি ছিল না, তাই আমি পাওয়ারগ্রিডের দিকে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, আমার স্বামী তার মোটরসাইকেলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত দুপুরের খাবার খেতে রুমে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।’

তন্নু প্রিয়া আরও বলেন, ‘এ সময় আমার বাবা এসে রাহুলের দিকে বন্দুক তাক করে জিজ্ঞেস করেন, মোটরসাইকেলটি কার? রাহুল জানায়, এটা তার। বাবা তখন আমার চোখের সামনে রাহুলের বুকে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করেন। রাহুল আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার কাঁধে ঢলে পড়ে। আমরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

তন্নুর অভিযোগ, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ভাই, মা, দাদি, বোন এবং দুলাভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। সাহারসায় আমার বাবার একটি ক্লিনিক আছে। সেখানে গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে। বাবা আগেও আমাকে বেল্ট দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন। তখন রাহুল আমাকে উদ্ধার করে এবং আমরা বিয়ে করি। প্রতিশোধ নিতেই বাবা রাহুলকে হত্যা করেছেন।’

রাহুলের বাবা রমেশ মণ্ডল সুপল জেলার বাসিন্দা। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ জানায় রাহুলকে গুলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে ডিএমসিএইচের ময়নাতদন্ত কক্ষে পৌঁছে ছেলের মরদেহ দেখতে পাই।’

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলি করার পর উপস্থিত জনতা প্রেমশঙ্করকে মারধর করেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়।

রমেশ বলেন, প্রেমশঙ্কর ঝা তাঁর দুই ছেলে অশ্বিনী ভাটস ও অবনীশ ভাটসকে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে এসেছিলেন বলে তিনি শুনেছেন।

রমেশ মণ্ডল পুলিশকে জানান, কিছুদিন আগে প্রেমশঙ্কর তাঁর পরিবারকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (প্রেমশঙ্কর ঝা) বনগাঁ থানায় একটি মামলাও করেছিলেন। আদালতে আমাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।’

কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেমশঙ্কর ঝা পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে দাবি করা হয়, রাহুল ও তাঁর পরিবার মিলে তাঁর মেয়েকে অপহরণ করেছে। গত ১ মে সাহারসা জেলার বনগাঁ থানায় অভিযোগটি দায়ের করা হয়। অভিযোগে ঝা বলেন, ২৭ এপ্রিল তাঁর স্ত্রী জানান, তাঁদের মেয়ে নিখোঁজ।

ওই দিন সন্ধ্যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর প্রেমশঙ্কর দাবি করেন, ভিডিওতে দেখা যায় তাঁর মেয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরা এক ব্যক্তির সঙ্গে চলে যাচ্ছেন। ওই ব্যক্তি তাঁর মেয়ের সহপাঠী রাহুল কুমার। তিনি ডিএমসিএইচে তাঁর সঙ্গে পড়াশোনা করতেন।

প্রেমশঙ্কর ঝা দাবি করেন, ওই ঘটনার পর তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হন। কর্তৃপক্ষ রাহুল ও তন্নুকে তিন দিনের মধ্যে অভিভাবকদের নিয়ে কলেজে হাজির হতে বলে। এরপর তিনি রাহুলদের বাড়িতে গেলে তাঁর পরিবার তাঁকে গালিগালাজ করে। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেও দেয়নি।

প্রেমশঙ্কর আরও অভিযোগ করেন, রাহুলের পরিবারের লোকজন তাঁকে জানায়, তন্নু রাহুলের বোন ও দুলাভাইয়ের কাছে আছে। সে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায় না।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রেমশঙ্কর বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় রাহুলের পরিবার। তিনি অভিযোগে লিখেছেন, ‘আমার মেয়েকে রাহুল কুমার ও তাঁর পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যে অপহরণ করেছে। এতে তাঁর ক্ষতি হতে পারে এমন বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে।’

রাহুল কুমারকে হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁর পরিবার মামলা করেছে। মামলায় প্রেমশঙ্কর ঝা, তাঁর স্ত্রী গুঞ্জন কুমারি, ছেলে অশ্বিনী ভাটস ও ছেলে অবনীশ ভাটকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুটি মামলার তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ব র এ ঘটন ঘটন র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা ১০টি, এর সমাধানই সংস্কার

স্বাস্থ্য খাতের মূল রোগ, সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ ১০টি। এগুলো সমাধানের মধ্য দিয়ে এই খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা মনে করেন, অন্য কোনো খাতের সংস্কার অর্থবহ হবে না, যদি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে, মতামত নিয়ে মনে হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা, রোগ বা চ্যালেঞ্জ মূলত ১০টি। এগুলো হচ্ছে: বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতাবিচ্ছিন্ন; এই ব্যবস্থা অতিকেন্দ্রীভূত; এই ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উপেক্ষিত, বিশেষায়িত সেবায় উৎসাহী; এখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রবল; এখানে কাজ করেন উৎসাহ ও মনোবলহীন জনবল; আছে মনন ও মানসিকতার সংকট; এই খাতে নৈতিকতার অবক্ষয় ও স্বাস্থ্যের দ্বন্দ্ব প্রবল; আছে পরনির্ভরশীলতা; এখানে নেতৃত্ব দুর্বল এবং চলছে বরাদ্দের ঘাটতির সঙ্গে পরিকল্পনাহীনভাবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এই ১০টি সমস্যার বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় বলেন, স্বাস্থ্য সরকারের ভাবনার কেন্দ্রে না থাকলে সব সংস্কার অর্থহীন হবে।

এর আগে ব্রিফিংয়ের শুরুতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম গত এক বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করেছে, তার বর্ণনা দেন। এই এক বছরে বড় কাজগুলোর মধ্যে আছে: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের দেশে ও বিদেশ চিকিৎসা, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করানো, কয়েক হাজার চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, ৭ হাজার চিকিৎসকের জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুই পালা চালু, মেডিকেল শিক্ষায় মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকদের বেতন ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি, আবার লিভার ও বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ১৯টি হোস্টেল নির্মাণের উদ্যোগ, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি।

নূরজাহান বেগম আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সময় নির্দলীয়, সৎ ও দক্ষ মানুষ পাওয়া কঠিন। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদে, চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বা বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগের সময় এটা দেখা গেছে।

সংস্কার কত দূর

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেন, ১০টি সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কাজ মূলত শুরু হয়ে গেছে। সব কাজ তাঁরা শেষ করতে পারবেন না।

অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সব ধরনের পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায় ইন্টার্নশিপ ১৮ মাসের হবে এবং এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে ছয় মাস গ্রামে থাকতে হবে। বিশেষায়িত সেবা রাজধানীর বাইরে নেওয়ার জন্য বিশেষায়িত সেবার একটি ‘মেডিকেল সিটি’ হবে উত্তরবঙ্গে, নারী স্বাস্থ্যের বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দক্ষিণবঙ্গে এবং প্রবীণদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দেশের পূর্বাঞ্চলে। এসব হাসপাতাল বিদেশি বিনিয়োগে হবে।

মানুষের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসি নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। মো. সায়েদুর রহমান বলেন, মুদিদোকান আর ফার্মেসি এক জিনিস নয়। ওষুধ দেওয়া একটি বিশেষায়িত কাজ। এর জন্য চাই ফার্মাসিস্ট। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। স্বার্থের দ্বন্দ্ব যেন না থাকে, সে জন্য ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে চিকিৎসকদের সব ধরনের উপহার নেওয়া বন্ধের আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ ওষুধশিল্পের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অন্য এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল পরিস্থিতি। এই দুটি বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকেরা।

মো. সায়েদুর রহমান স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের মন্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, সরকার কার স্বার্থ দেখবে। সরকার চাইবে মানুষ মানসম্পন্ন ওষুধ পাক আবার কোম্পানিগুলো ন্যায়সংগত মুনাফা করুক। সরকার কোম্পানিগুলোর কোনো ক্ষতি করবে না, বরং বিকাশে সহযোগিতা করবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী দেড় ঘণ্টা কথা বলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাঈদুর রহমান, শিক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ