মেয়ের সামনেই তাঁর স্বামীকে গুলি করে খুন করলেন বাবা
Published: 7th, August 2025 GMT
ভারতের বিহার রাজ্যে এক তরুণকে জনসমক্ষে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যের দরভাঙা জেলায় এ ঘটনা ঘটে। ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণ একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্ণপ্রথা ভেঙে বিয়ে করায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত তরুণের নাম রাহুল কুমার। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বেনতা থানাধীন এলাকায় গুলির খবর পায় তারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাহুলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
আমার দুই ভাই, মা, দাদি, বোন এবং দুলাভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।নিহত তরুণের স্ত্রী।একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নিহত রাহুল কুমার নার্সিংয়ের ছাত্র ছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রেমশঙ্কর ঝা (৪৫)। তাঁর মেয়ে দরভাঙা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ডিএমসিএইচ) নার্সিং শিক্ষার্থী।’ প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাহুল গত এপ্রিলে প্রেমশঙ্করের মেয়ে তন্নু প্রিয়াকে বিয়ে করেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলি করার পর উপস্থিত জনতা প্রেমশঙ্করকে ধরে মারধর করেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ডিএমসিএইচের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ওই দিনের কথা স্মরণ করে রাহুলের স্ত্রী তন্নু প্রিয়া অভিযোগ করেন, ‘কলেজে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার সময় রাহুল আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। হোস্টেলে পানি ছিল না, তাই আমি পাওয়ারগ্রিডের দিকে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, আমার স্বামী তার মোটরসাইকেলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত দুপুরের খাবার খেতে রুমে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।’
তন্নু প্রিয়া আরও বলেন, ‘এ সময় আমার বাবা এসে রাহুলের দিকে বন্দুক তাক করে জিজ্ঞেস করেন, মোটরসাইকেলটি কার? রাহুল জানায়, এটা তার। বাবা তখন আমার চোখের সামনে রাহুলের বুকে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করেন। রাহুল আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার কাঁধে ঢলে পড়ে। আমরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
তন্নুর অভিযোগ, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ভাই, মা, দাদি, বোন এবং দুলাভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। সাহারসায় আমার বাবার একটি ক্লিনিক আছে। সেখানে গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে। বাবা আগেও আমাকে বেল্ট দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন। তখন রাহুল আমাকে উদ্ধার করে এবং আমরা বিয়ে করি। প্রতিশোধ নিতেই বাবা রাহুলকে হত্যা করেছেন।’
রাহুলের বাবা রমেশ মণ্ডল সুপল জেলার বাসিন্দা। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ জানায় রাহুলকে গুলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে ডিএমসিএইচের ময়নাতদন্ত কক্ষে পৌঁছে ছেলের মরদেহ দেখতে পাই।’
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলি করার পর উপস্থিত জনতা প্রেমশঙ্করকে মারধর করেন। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়।রমেশ বলেন, প্রেমশঙ্কর ঝা তাঁর দুই ছেলে অশ্বিনী ভাটস ও অবনীশ ভাটসকে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে এসেছিলেন বলে তিনি শুনেছেন।
রমেশ মণ্ডল পুলিশকে জানান, কিছুদিন আগে প্রেমশঙ্কর তাঁর পরিবারকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (প্রেমশঙ্কর ঝা) বনগাঁ থানায় একটি মামলাও করেছিলেন। আদালতে আমাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।’
কয়েক সপ্তাহ আগে প্রেমশঙ্কর ঝা পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে দাবি করা হয়, রাহুল ও তাঁর পরিবার মিলে তাঁর মেয়েকে অপহরণ করেছে। গত ১ মে সাহারসা জেলার বনগাঁ থানায় অভিযোগটি দায়ের করা হয়। অভিযোগে ঝা বলেন, ২৭ এপ্রিল তাঁর স্ত্রী জানান, তাঁদের মেয়ে নিখোঁজ।
ওই দিন সন্ধ্যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর প্রেমশঙ্কর দাবি করেন, ভিডিওতে দেখা যায় তাঁর মেয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরা এক ব্যক্তির সঙ্গে চলে যাচ্ছেন। ওই ব্যক্তি তাঁর মেয়ের সহপাঠী রাহুল কুমার। তিনি ডিএমসিএইচে তাঁর সঙ্গে পড়াশোনা করতেন।
প্রেমশঙ্কর ঝা দাবি করেন, ওই ঘটনার পর তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হন। কর্তৃপক্ষ রাহুল ও তন্নুকে তিন দিনের মধ্যে অভিভাবকদের নিয়ে কলেজে হাজির হতে বলে। এরপর তিনি রাহুলদের বাড়িতে গেলে তাঁর পরিবার তাঁকে গালিগালাজ করে। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেও দেয়নি।
প্রেমশঙ্কর আরও অভিযোগ করেন, রাহুলের পরিবারের লোকজন তাঁকে জানায়, তন্নু রাহুলের বোন ও দুলাভাইয়ের কাছে আছে। সে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায় না।
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রেমশঙ্কর বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় রাহুলের পরিবার। তিনি অভিযোগে লিখেছেন, ‘আমার মেয়েকে রাহুল কুমার ও তাঁর পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যে অপহরণ করেছে। এতে তাঁর ক্ষতি হতে পারে এমন বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে।’
রাহুল কুমারকে হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁর পরিবার মামলা করেছে। মামলায় প্রেমশঙ্কর ঝা, তাঁর স্ত্রী গুঞ্জন কুমারি, ছেলে অশ্বিনী ভাটস ও ছেলে অবনীশ ভাটকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুটি মামলার তদন্ত চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র এ ঘটন ঘটন র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়নি কেউ
চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার হামজারবাগ এলাকায় বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি ও একজন নিহতের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হামলার ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।
আরো পড়ুন:
রাউজানে হামলায় বিএনপির ৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ
শরীয়তপুরে এনসিপি নেতার অফিসে ককটেল হামলা
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (জনসংযোগ) আমিনুর রশিদ জানান, নিহত সরোয়ার হোসেন বাবলার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান চলমান আছে।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, “আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল হবে।”
গতকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার হামজার বাগ খোন্দকারাবাদ ফতেপুকুর এলাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে কাঁধে পিস্তল ঠেকিয়ে সারোয়ার হোসেন বাবলাকে গুলি করা হয়। এতে তিনি নিহত হন। এছাড়াও প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। এরশাদ উল্লাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ