জাতীয় পার্টির সম্মেলন ডেকেছেন আনিসুল, প্রক্রিয়া বেআইনি বলছেন শামীম
Published: 7th, August 2025 GMT
জাতীয় পার্টিতে (জাপা) জি এম কাদেরের বিরোধী অংশের নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ডেকেছেন। আগামী শনিবার রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি মিলনায়তনে এই সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
জাতীয় পার্টির জি এম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এই সম্মেলনসহ পুরো প্রক্রিয়াকে ‘বেআইনি’ এবং ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গত ৩০ জুলাই ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো.
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে গঠনতান্ত্রিক পন্থায় সম্মেলন করে দলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় হয়েছেন জি এম কাদেরের বিরোধী অংশ। সম্মেলন আয়োজনের মূল ভূমিকায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সঙ্গে আছেন জ্যেষ্ঠ দুই নেতা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে ১৬ জুন জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি সম্মেলনের জন্য মিলনায়তনের বরাদ্দ না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর বিরোধিতা করে জ্যেষ্ঠ নেতাদের ওই অংশটি ২৮ জুনই সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়। এমনকি জি এম কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব পদে প্যানেল দেওয়ার ঘোষণা দেন। এখান থেকেই বিরোধের শুরু হয় এবং তা দিনে দিনে আরও প্রকট হয়ে আদালত পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। এখন জি এম কাদেরের বিরোধী অংশটি সম্মেলন করতে যাচ্ছে।
জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরপর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছে জি এম কাদেরের বিরোধী অংশ। সেই সঙ্গে জি এম কাদের যে নেতাদের বহিষ্কার করেছিলেন, তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয় তারা।
জাতীয় পার্টির জি এম কাদের অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান যাঁদের বহিষ্কার করেছেন, তাঁরা আদালতের আদেশ অনুযায়ী এখনো বহিষ্কৃতই আছেন। যেহেতু দলে তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদ নেই, সেহেতু তাঁরা প্রেসিডিয়ামের সভা ডাকতে এবং সভায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। আর চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করার বিধানও গঠনতন্ত্রে নেই। পুরো প্রক্রিয়াই বেআইনি এবং গঠনতন্ত্রবিরোধী।’
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘পল্লীবন্ধু পরিষদ’ নামের একটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কথা বলেন শামীম হায়দার। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সময় সরকারি মদদে জাতীয় পার্টিকে খণ্ডিত করা হয়েছে। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শে জাতীয় পার্টি কখনো দুর্বল হয়নি। আজও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিটি ইউনিট এবং নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ঐক্যবদ্ধ আছে।’
এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের, আলমগীর সিকদার, শামসুন নাহার বেগম, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, হুমায়ুন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাস বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুনজাতীয় পার্টির চার অংশ এক মঞ্চে, নেই জিএম কাদেরের জাপা১৪ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এম ক দ র র ব র ধ
এছাড়াও পড়ুন:
জবি প্রশাসনের ‘দায়সারা’ জবাবের প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়ন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও দুটি হলের কাজের অগ্রগতি এবং সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর না হওয়ার প্রতিবাদ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে একটি চেয়ারে ‘প্রশাসন’ লিখে বসিয়ে এ প্রতীকী প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
ওই চেয়ারের সামনে রাখা প্ল্যাকার্ডে তারা ‘ছাত্র সংসদ কবে হবে?’, ‘দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ কবে শুরু হবে?’, ‘পুরান ঢাকায় দুটি হলের কাজ কবে হবে?’, ‘সম্পূরক বৃত্তি কবে হবে?’ লিখেছেন।
আরো পড়ুন:
রাবিতে বিজয় ফিস্টের খাবার খেয়ে অসুস্থ ৮৩ শিক্ষার্থী
চবি প্রশাসনকে নিয়ে পথনাটক ‘বহুতদিন অইয়ে আর মুলা ন ঝুলায়ো’
এসব প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের বক্তব্যের অনুকরণে চেয়ারে লিখে দেন— ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘চিঠি পাঠিয়েছি’, ‘বের হয়ে যাও’, ‘হচ্ছে, চলছে, চলমান’, ‘৮টা টু ৮টা’।
এ বিষয়ে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলার প্রতিফলন। ন্যায্য অধিকার- সম্পূরক বৃত্তি প্রদান ও জকসু নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি— এই নীরবতা চলতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, “এই জবাবদিহিতা কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ। গণঅভ্যুত্থানের পর যাদের ক্ষমতায় আনতে আমরা গেট লক কর্মসূচি পালন করেছিলাম, তারাই আজ মৌলিক অধিকার নিয়ে উদাসীন।”
তিনি বলেন, “আবাসন, ভাতা, ছাত্র সংসদ— সবখানেই ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও দুটি হলের কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। এই প্রতীকী জবাবদিহিতা প্রশাসনের ব্যর্থতা ও গাফিলতির নগ্ন মুখোশ খুলে দিতেই।”
সম্প্রতি জকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিনকে প্রশ্ন করলে তিনি দুই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন এবং জকসু ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
২০০৫ সালে প্রণীত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ গঠনের বিধান না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জকসু নির্বাচন হয়নি। গত ২ জানুয়ারি ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। ৭ মে ১০০তম বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় আরো একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়, যা বর্তমানে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রকে আইন আকারে প্রণয়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, গঠনতন্ত্র প্রণয়নের অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন সময়ক্ষেপণ করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পথ আরো দীর্ঘ হচ্ছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী