৫০ শতাংশ শুল্ক: পোশাক উৎপাদন সরিয়ে বাংলাদেশসহ তিন দেশে আনতে চায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান
Published: 8th, August 2025 GMT
ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পর থেকে বড় সমস্যার মুখে পড়েছে ভারতের পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে গ্যাপ ও কোলসের মতো প্রতিষ্ঠান। এখন রাতবিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফোনকল আসছে।
ফোন করে পার্ল গ্লোবালকে নানা আল্টিমেটাম দেওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে বাড়তি শুল্কের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে নিতে। ভারতের বাইরে অন্য দেশে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার কথাও উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন ক্রেতাদের শান্ত রাখতে পোশাকের উৎপাদন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালায় নিজেদের ১৭টি কারখানার সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে পার্ল গ্লোবাল।
প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া এই কৌশলের লক্ষ্য ভারতের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা উচ্চহারে শুল্ক এড়ানো। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এরই মধ্যে সব ক্রেতা আমাকে ফোন করছেন। তাঁরা চান, আমরা যেন উৎপাদন ভারত থেকে সরিয়ে অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাই।’
ট্রাম্প প্রথম পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন গত এপ্রিল মাসে। তখন তৈরি পোশাকশিল্পে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে ভারতের ওপর আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ কম ছিল। এ থেকে নিজেদের ১ হাজার ৬০০ কোটি (১৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি বাজার দ্রুত সম্প্রসারণের একটি একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল ভারতের।
এর পর থেকে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে শুল্কে। ভারতের ওপর এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার দণ্ড হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে পোশাকশিল্পে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। আর চীনের ওপর ৩০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পার্ল গ্লোবাল প্রায় অর্ধেক ব্যবসা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কিছু ক্রেতা এই শর্ত দিয়েছে যে শুল্ক ভাগাভাগি করলেই কেবল তারা পার্ল গ্লোবালের কাছ থেকে পণ্য কিনবে। তবে এটি কার্যকর কোনো সমাধান নয়। ওই ক্রেতা কারা—এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের নাম উল্লেখ করেননি পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকেরা যদি দেশের বাইরে উৎপাদন শুরু করে, তাহলে তা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতে তৈরি’ নীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা।ভাবা হচ্ছে নেপাল–ইথিওপিয়ার কথাওআলাপ–আলোচনার পর ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি হিসেবে পরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। ভারতকে ২৮ আগস্ট থেকে সব মিলিয়ে বাড়তি ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকশিল্পে নেপাল ও ইথিওপিয়ার মতো কম প্রতিষ্ঠিত দেশগুলোতে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছে ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
ভারতের পোশাক খাত ইতিমধ্যেই শ্রমিক–সংকট এবং সীমিত উৎপাদন সক্ষমতার মতো সমস্যায় রয়েছে। এখন ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকেরা যদি দেশের বাইরে উৎপাদন শুরু করে, তাহলে তা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতে তৈরি’ নীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। তাই তো ট্রাম্পের নতুন শুল্ককে ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছে নয়াদিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ফরমাশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের জন্য পার্ল গ্লোবাল হয়তো বিদেশে নিজেদের কারখানাগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে ভারতে তৈরি পোশাকের যেসব রপ্তানিকারক শুধু দেশের ভেতরের কারখানাগুলোর ওপর নির্ভর করে, তাদের ওপর ধাক্কাটা বড় হবে। যেমন রিচাকো এক্সপোর্ট।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ১১ কোটি ১০ লাখ (১১১ মিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে রিচাকো এক্সপোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনেশ রাহেজা বলেন, এই পণ্যগুলোর সবই ভারতজুড়ে রিচাকোর দুই ডজনের বেশি কারখানায় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভারতীয় আয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
রয়টার্সকে দীনেশ রাহেজা বলেন, ‘আমরা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে ভাবছি। ভারতের পোশাক খাত এখন অচল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের দিন জানা গেল চীন যাচ্ছেন মোদি০৬ আগস্ট ২০২৫আরও পড়ুনভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের, মোট দাঁড়াল ৫০০৬ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ওজুর ফরজ কয়টি
ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)
ওজুর ফরজ কয়টিওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।
৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।
আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যাফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)
৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)
আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।
পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)
কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।
ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতাপূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।
ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।
পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।
নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।
(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)
ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫