জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘হিন্দুদের বন্ধু সেজে যারা হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের ওপর জুলুম করেছে, তারা ইসলামী দলগুলোর ওপর অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিচ্ছে, কোনো ইসলামী দল তাঁদের ওপর জুলুম করেনি। বরং জামায়াতে ইসলামী তাঁদের সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।’

বৃহস্পতিবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১০ নম্বর ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সনাতনী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। উপজেলার বান্দা স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে সনাতন সম্প্রদায়কে নিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদার অধিকারী। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে নাগরিক অধিকার বিনষ্টকারীরাই মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইসলামের ছায়াতলে সব মানুষ নিরাপদ এবং নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সুযোগ রয়েছে। ইসলাম জোরপূর্বক কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। বরং এ বিষয়ে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।’

জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ‘এ দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। মুসলিম, অমুসলিম সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় অধিকার পালন করার সুযোগ পাবেন। আমরা এই সংগ্রাম করছি। চেষ্টা করছি একটি মানবিক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, আধুনিক সুন্দর সমৃদ্ধপূর্ণ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে চাই।’

সনাতনী শাখার ইউনিয়ন সভাপতি নিত্যরঞ্জন রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বান্দা কলেজের অধ্যক্ষ সৌমেন মন্ডল, অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র মজুমদার, বিপুল মন্ডল, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র, অধ্যাপক গৌতম রায়, দিপংকর ঢালী, প্রীতিশ মন্ডল প্রমুখ।

এরপর ডুমুরিয়ার ৯ নম্বর সাহস ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলার আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, উপজেলা সনাতনী শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল, ইসলামী আন্দোলনের ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা বায়জিদ হোসেন, খেলাফত মজলিসের ইউনিয়ন সভাপতি হাফেজ ইলিয়াস হোসেন, ইউনিয়ন সনাতনী শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাস বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু তার আগে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের জন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশের মানুষ জীবন এবং রক্ত দিয়ে হলেও একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই দেখছি, কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জিব কেটে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা লক্ষ করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির ঘোষণা করছেন; কিন্তু এখনো জিব কেটে নেওয়ার কথা বলা সন্ত্রাসীকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারেননি?’

জামায়াতের সেক্রেটারি আরও বলেন, ‘বিনা ভোটের সরকার ১৫ বছর, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আলেম-ওলামা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিয়ে অত্যাচার-জুলুম নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। তারা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণের মাধ্যমে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর আমরা নতুন বাংলাদেশ ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র উপজ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১ থেকে ১২ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে একই দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দলটি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে জামায়াতের যুব বিভাগের নেতা নিহত

ক্ষমতায় গেলে কাউকে দাবি নি‌য়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না: জামায়াতের আমির

পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো-
৫ দফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা। গোলটেবিল বৈঠক। সেমিনার ইত্যাদি।

এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে  স্মারকলিপি পেশ।

যে পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি' হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছে।

প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ' জারি করা। দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সেটা না হলে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ছাড়া ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করতে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে জানিয়েছে জামায়াত।

জামায়াতের এর আগে ঘোষণা করা পাঁচ দফা জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। তাই জনগণের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
  • ১ থেকে ১২ অক্টোবর নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত