সনাতন সম্প্রদায়ের সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে জামায়াত: গোলাম পরওয়ার
Published: 14th, August 2025 GMT
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘হিন্দুদের বন্ধু সেজে যারা হিন্দুদের সম্পদ দখল করেছে, হিন্দুদের ওপর জুলুম করেছে, তারা ইসলামী দলগুলোর ওপর অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিচ্ছে, কোনো ইসলামী দল তাঁদের ওপর জুলুম করেনি। বরং জামায়াতে ইসলামী তাঁদের সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।’
বৃহস্পতিবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১০ নম্বর ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের সনাতনী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন। উপজেলার বান্দা স্কুল ও কলেজ মিলনায়তনে সনাতন সম্প্রদায়কে নিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়, সবাই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদার অধিকারী। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যালঘু বানিয়ে নাগরিক অধিকার বিনষ্টকারীরাই মূলত রাজনৈতিক ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ইসলামের ছায়াতলে সব মানুষ নিরাপদ এবং নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের সুযোগ রয়েছে। ইসলাম জোরপূর্বক কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। বরং এ বিষয়ে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ‘এ দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। মুসলিম, অমুসলিম সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় অধিকার পালন করার সুযোগ পাবেন। আমরা এই সংগ্রাম করছি। চেষ্টা করছি একটি মানবিক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, আধুনিক সুন্দর সমৃদ্ধপূর্ণ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে চাই।’
সনাতনী শাখার ইউনিয়ন সভাপতি নিত্যরঞ্জন রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডলের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বান্দা কলেজের অধ্যক্ষ সৌমেন মন্ডল, অধ্যাপক প্রকাশ চন্দ্র মজুমদার, বিপুল মন্ডল, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র, অধ্যাপক গৌতম রায়, দিপংকর ঢালী, প্রীতিশ মন্ডল প্রমুখ।
এরপর ডুমুরিয়ার ৯ নম্বর সাহস ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলার আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, উপজেলা সনাতনী শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল, ইসলামী আন্দোলনের ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা বায়জিদ হোসেন, খেলাফত মজলিসের ইউনিয়ন সভাপতি হাফেজ ইলিয়াস হোসেন, ইউনিয়ন সনাতনী শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাস বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়। কিন্তু তার আগে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের জন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশের মানুষ জীবন এবং রক্ত দিয়ে হলেও একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই দেখছি, কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জিব কেটে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা লক্ষ করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির ঘোষণা করছেন; কিন্তু এখনো জিব কেটে নেওয়ার কথা বলা সন্ত্রাসীকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারেননি?’
জামায়াতের সেক্রেটারি আরও বলেন, ‘বিনা ভোটের সরকার ১৫ বছর, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আলেম-ওলামা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিয়ে অত্যাচার-জুলুম নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। তারা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণের মাধ্যমে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর আমরা নতুন বাংলাদেশ ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র উপজ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে: পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বলা হলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে।
আজ বুধবার সকালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আরাফাত আবাসিক এলাকায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। সমাবেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই ‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে সেই আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সারা দেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের অনুকূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অবাধ ও নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারলে জনগণ ইসলামি আদর্শের শক্তিকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন একটি দেশের প্রেসক্রিপশনে ক্ষমতায় এসে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর জেল-জুলুম চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনক পতন হয়েছে। তাই আগস্ট বিপ্লবকে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের অতীতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদের প্রণয়নের কাজ সুসম্পন্ন করে বর্তমান সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পতিত স্বৈরাচারের অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছে বলে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে। আগামী নির্বাচনে দেশে ভোট বিপ্লব ঘটানোর জন্য নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের মানুষ এখন ইসলামী দলগুলোকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়। দেশে ইসলামের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অচিরেই জনগণের সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্রই জনতার বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না।
সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তবর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মধে৵ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট।
আরাফাত নগরের চকমথুরাবাদ ভোটকেন্দ্র কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও হরিণটানা থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মো. আমির হোসাইনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও মিয়া গোলাম কুদ্দুস, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মাওলানা মোক্তার হোসেন, হরিণটানা থানার আমির আবদুল গফুর, ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেবক প্রসাদ, সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান, খুলনা জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহকারী সেক্রেটারি আল আমিন গোলদার প্রমুখ।