চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে জোট বেঁধে প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র মজলিস। এই প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ। এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের শাখা আহ্বায়ক ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তামজিদ উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে থাকবেন ইসলামী ছাত্র মজলিসের শাখা সভাপতি ও আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব মাহামুদ।

আজ শনিবার বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কলার ঝুপড়ির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এ সময় সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন প্যানেল ঘোষণা করেন। এ সময় প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও ইসলামী ছাত্র মজলিসের শাখা সভাপতি সাকিব মাহামুদ বলেন, শুরুতে ছাত্র অধিকার ‘চাকসু ফর র‍্যাপিড চেঞ্জ’ নামে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছিল। পরে ক্যাম্পাসের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের শিক্ষার্থী নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে কারণে প্যানেলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সময় সাকিব মাহামুদ বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিগত সময়ে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবি করা হয়েছে। তবে এখনো প্রক্টর চাকসু কমিটিতে রয়েছেন। যার কারণে এখনো আমাদের দাবি—প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করবে। যেহেতু তারা তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা আশা করছি, শিক্ষার্থীদের দায় নিতে পারবে, এমন প্রক্টরিয়াল বডি আসবে। সব মিলিয়ে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচনের বিষয়ে শঙ্কামুক্ত নই।’

এই প্যানেল থেকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের শাখা সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.

রোমান রহমান। এ ছাড়া খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. সবুজ, সহ–খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দেওয়ান আব্দুর, সহ–সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সিয়াম আল ইহসান, দপ্তর সম্পাদক পদে তৌহিদুল ইসলাম, সহ–দপ্তর সম্পাদক পদে শাফিন রহমান, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে সানজিদা আক্তার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম, গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক পদে তৌহিদুল ইসলাম, সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে জহিরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে জিয়াউদ্দিন সায়েম, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে নাজমুস সাদাত, যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে মো. নাজমুছ ছাকিব, সহ–যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে রায়হান আব্দুল্লাহ, আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে ইয়াছিন আরাফাত, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক পদে মো. মারুফ এবং নির্বাহী সদস্যপদে মো. মুজাহিদুল্লাহ, কাজী বেলাল হোসেন, আবিদ হাসান ও সালমান মাহাম্মদের নাম ঘোষণা করা হয়।

বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হচ্ছে। আজ দুপুরে চাকসু ভবনের সামনে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ ন ল ইসল ম মজল স

এছাড়াও পড়ুন:

গোল্ডেন হারভেস্টের নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ

পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্টের অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পরিদর্শন করে বেশ কিছু গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা ও জাল তথ্য উপস্থানের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল ও অসত্য তথ্য শনাক্ত না করে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে কোম্পানির নিরীক্ষক ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের আস্থাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও এর অংশীদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে (এফআরসি) অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

আরো পড়ুন:

সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে প্রাইম ফাইন্যান্স কোম্পানি

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে খান ব্রাদার্স

সম্প্রতি কমিশন থেকে এফআরসির চেয়ারম্যানের এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কোম্পানির সম্পর্কিত এবং অ-সম্পর্কিত উভয় ধরনের পক্ষের সঙ্গে কিছু লেনদেন দেখিয়েছে, যেগুলো বাস্তবে ঘটেনি বা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে প্রকৃত সম্পদের চেয়ে বেশি বা বিভ্রান্তিকর সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভুল ধারণা দিতে পারে। একই সঙ্গে এসব মারাত্মক ধরনের ভুল ও জালিয়াতি শনাক্ত করা ও আপত্তি তোলার দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষক তা শনাক্ত পারেননি বা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা কোম্পানি ও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানি ও নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি তার নিয়ন্ত্রক কার্যাবলী বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণ, হিসাবের বই এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সশরীরে পরিদর্শন করেছে। এ পরিদর্শন কার্যক্রেমে কোম্পানির গুরুতর অনিয়ম এবং আর্থিক প্রতিবেদনে অসত্য তথ্য শনাক্ত করেছে, যা কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক বিবরণীর নির্ভরযোগ্যতায় বাস্তব ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

যেসব তথ্য মিথ্যা বলে জানা গেছে সেগুলো হলো-কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত এবং সম্পর্কহীন উভয় পক্ষের সাথে মিথ্যা এবং জাল লেনদেনের তথ্য দিয়েছে। এছাড়া আর্থিক বিবরণীতে বিভ্রান্তিকর সম্পদ অবস্থান প্রদর্শন করা হয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইনানুগ নিয়োজিত করা হলে আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ অসত্য তথ্য সনাক্ত করা ও আপত্তি জানাতে নিরীক্ষক ব্যর্থ হয়েছেন। এই ধরনের অনিয়ম কেবল নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুন্ন করে না বরং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থাকেও বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এজন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধিমালা, ২০২০ এর রুলস ১৪(৫) অনুসারে, গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের পরিদর্শন প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি এবং আর্থিক প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযুক্ত করে পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধানের গুরুত্ব বিবেচনা করে গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা ও অফিস প্রাঙ্গণের পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনগুলোও পর্যালোচনা করুন। পর্যালোচনায় যদি সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা তাদের অংশীদারদের কাজে অবহেলা বা সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তবে প্রযোজ্য আইন ও মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি বা বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে নিরীক্ষকরা যদি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তবে বাজারে আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।

বিএসইসি বলছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ কারণে বিষয়টি এফআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ