সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে সিলেট স্টেশনে আটকা পড়া কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। পাশাপাশি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশনে আটকা পড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উপবন এক্সপ্রেসও গন্তব্য স্থলে পৌঁছেছে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম ও সিলেট রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করায় ৫ যুবক আটক

চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার রুটে চলবে ‘ট্যুরিস্ট স্পেশাল’ ট্রেন

আজ সকাল ৮টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকায় সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পরে ইঞ্জিনসহ লাইনচ্যুত চারটি বগি ছাড়া বাকিগুলো রেল লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর সিলেট স্টেশনে আটক পড়া কালনী এক্সপ্রেস সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী রফিুকল ইসলাম জানান, ট্রেনটি চলার সময় হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। এরপরই কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে পড়ে। 

রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস ইঞ্জিনসহ চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।”

সিলেট ফায়ার স্টেশনের সহকারী পরিচালক শফিকুর রহমান ভুইয়া জানান, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার খবর পেয়ে তাদের টিম ঘটনাস্থলে যায়। তেমন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ১০-১৫ জন অল্প আহত হয়েছেন।

সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। কুলাউড়া থেকে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার কাজ শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। কালনী এক্সপ্রেস সিলেট ছেড়ে গেছে বলে জানান তিনি। 

ঢাকা/নূর/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইনচ য ত উদ ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ব্যবসায় নারীর জয়যাত্রা

দুই দশক আগেও সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। এখন সেখানে তৈরি হয়েছেন হাজারো নারী উদ্যোক্তা। অনেকেই পেয়েছেন সফলতা। কারও কারও ব্যবসার পরিধি তো সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছে। 

স্থানীয় প্রশাসন, উইমেন চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় কী পরিমাণ নারী ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা আছেন, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত নেই। তবে চার জেলায় হাজারো নারী উদ্যোক্তা আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বাইরে আবার অনেক নারী অনলাইনে কিংবা বাসাবাড়িতে থেকেও ব্যবসা করছেন। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত হাজার নারী ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত আছেন। 

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন বলেন, একটা সময় শুধু পোশাক, পারলার ও টেইলার্সকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেই নারীদের দেখা যেত। এখন নারীরা প্রায় সব ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ, বুটিকস, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ক্যাটারিং, ঠিকাদারি, আইটি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসা উপকরণ বিক্রি, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং ও খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য। 

উইমেন চেম্বারের সভাপতি আরও জানান, দুই দশক ধরে ধীরে ধীরে সিলেটে ছোট ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়ে চলছে। নানা ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরা ব্যবসায় এগিয়ে চলেছেন। তবে নারী উদ্যোক্তাদের আরও উৎসাহিত করা গেলে সিলেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বদলে যাবে। 

সফলতার গল্প

সিলেটের হাজারো নারী উদ্যোক্তার মধ্যে একজন ষাটোর্ধ্ব রায়হানা খানম (রেশমা)। তাঁর বাসা নগরের শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়া এলাকায়। তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস) সিলেটের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আছে ‘কুরশিকাঁটা গ্যালারি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হাতে তৈরি কুরশিকাঁটার পোশাক, শোপিস, পুঁথির কাজ, ব্যাগ, নামাজের টুপি, ব্লকের থ্রি-পিসসহ নানা পণ্য তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি করেন। অনলাইনেও তিনি এসব পণ্য বিক্রি করে থাকেন। 

প্রায় ৩৫ বছর ধরে রায়হানা বেগম কুরশিকাঁটার ব্যবসা করছেন। শুরুতে অল্প পরিসরে তাঁর ব্যবসা শুরু। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে পরিবারের নানা খরচও তাঁর ব্যবসার আয়ে হতো। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত। সন্তানদের কেউ প্রবাসে থাকেন, কেউ ব্যাংকে চাকরি করেন। এখন আর সেই অর্থে সংসার তাঁর আয়নির্ভর নয়। তবে স্বামী মুজিবুল হকের পাশাপাশি একসময় তিনি ব্যবসার আয় সমানতালে পরিবারের কাজে ব্যয় করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সংসার চালানোর কারণেই তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা এসেছিল। 

১৩ সদস্যের পরিবার আমার। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত, চাকরিবাকরি করে। পরিবারে আমার আয়ের টাকা আর দিতে হয় না। তবে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও আয় করে একসময় সংসার চালিয়েছি, সন্তানদের মানুষ করেছি, এটা ভাবলেই তো মনে একটা তৃপ্তি আসে। রায়হানা খানম, উদ্যোক্তা

রায়হানা বেগম জানান, ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটা শিখেছিলেন। তখন থেকেই সেলাই মেশিন চালাতেন। পরে এ মাধ্যমকেই তিনি ব্যবসার কাজ হিসেবে বেছে নেন। কুরশিকাঁটার পাশাপাশি নানা শোপিস পণ্য তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। মানুষজনও তাঁর কাজ পছন্দ করতে থাকেন। এরপর চলতে থাকে তাঁর সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ব্যবসা চালুর কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সফলতা পান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়হানা নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। এর মধ্যে শাড়ি, জামা, কাপড়ের জুতা, টুপি, বাচ্চাদের কটি, টেবিল ক্লথ, কুশন কভার, নানা নকশার ব্লকের পোশাক, শোপিসের মধ্যে ফুল, পুঁথির মালা ও ব্যাগ, চুড়ি, ময়না, মুরগি, খরগোশ, পেঙ্গুইন, বিড়াল উল্লেখযোগ্য। হাতে তৈরি এসব পণ্য আগে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা তাঁর কাছ থেকে কিনতেন। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে অনলাইনে তাঁর একটা বিশাল ক্রেতাগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এখন প্রতি মাসে অনলাইনে তিনি বিভিন্ন পণ্যের আগাম চাহিদা পান। 

রায়হানা বেগম বলেন, তিনি নিজের নকশাতেই পোশাক তৈরি করেন। অনেক সময় অস্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ দিয়েও করান। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরের ৫ থেকে ৬টি প্রতিষ্ঠানে পাইকারি দরে তাঁর পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আগামী ১ ডিসেম্বর নগরের শিবগঞ্জে তিনি একটা শোরুম চালু করবেন। পরে সেখান থেকেই পণ্য বিক্রি করবেন। বিদেশ থেকেও এখন অনেক সময় তাঁর পণ্যের চাহিদা আসে। 

রায়হানা বেগম ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটার কাজ শিখেছিলেন। পরে তিনি এটা ধরেই পণ্য বানিয়ে ব্যবসায় যুক্ত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ