বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যার মামলায় তার স্বামী ও সতীনসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে ছিলেন। 

আরো পড়ুন:

সন্তানকে কুপিয়ে পুকুরে ফেলে হত্যা করলেন বাবা

মোহনগঞ্জে মুদি দোকানদারকে গলাকেটে হত্যা

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কবির তালুকদার (৫৯), তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম (৫০) ও এলাচী বেগমের ছেলে সুজন (৩০)।

বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি রঞ্জুয়ারা শিপু বলেন, ‘‘চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে আমরা তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছি। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।’’  

রায়ের পর মামলার বাদী ও নিহত মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল তালুকদার বলেন, ‘‘রায়ে আমি সন্তুষ্ট। আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।’’

আদালত সূত্রে জানা যায়, মহিমা বেগমকে তার স্বামী কবির তালুকদার, সতীন এলাচী বেগম এবং এলাচী বেগমের ছেলে সুজন কারণে-অকারণে নির্যাতন করতেন। ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর তিনজন মিলে মহিমা বেগমকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। এরপর মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল বাদী হয়ে বাবাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রধান আসামি কবির তালুকদারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম তরু ফরাজী। আসামি এলাচী বেগন ও সুজনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘আসামিরা ন্যায় বিচার পাননি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’’

ঢাকা/ইমরান/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ব গম র ছ ল ত নজন

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে হিমাগারে নারী ও কিশোরীকে পিন ফুটিয়ে নির্যাতন

রাজশাহীর একটি হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা ওই হিমাগারের অফিসকক্ষে ভাঙচুর চালিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ডস্টোরেজের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ওই হিমাগারের মালিক রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকার। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার ওরফে জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবাকে (৪০) অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা-পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। এর আগে পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়।

ভুক্তভোগীদের বাড়ি পবা উপজেলার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ (২৭) রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর নারী (৩০) ও কিশোরী (১৩) ওই তরুণের খালাতো বোন। তাঁদের নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হিমাগারের অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।

দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান দেখা যায়। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম দেখা যায়। পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর ওই কিশোরীর ঠোঁটে রক্ত দেখা যায়।

নির্যাতনের শিকার নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তাঁর ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাঁদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাঁর (ওই নারী) অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ওই নারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে তাঁকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তাঁর খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাঁদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিসকক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁরা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। ওই কিশোরীর দাবি, তাঁকে ও তাঁর খালাতো বোনকে মোহাম্মদ আলী সরকারের দুই মেয়ে সারা শরীরে সেফটি পিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছেন।

এ ঘটনা জানাজানি হলে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলেমেয়েদের অবরুদ্ধ করে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান। বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাঁদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর দুইটার দিকে স্থানীয়রা অফিসকক্ষের সিসিটিভি ক্যামেরা ও কাচের জানালাগুলো ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ