পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবু সাইদ চেয়ারম্যানসহ ১৩৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। 

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সাহা আদালতে চার্জশিট জমা দেন।

আরো পড়ুন:

ফেনীতে শিশু হত্যা মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড

বরগুনায় গৃহবধূকে হত্যা: স্বামী-সতীনসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

বুধবার (৮ অক্টোবর) সঞ্জয় কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় বিভিন্ন সময় ৩৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্য আসামিরা পলাতক, তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

পাবনা জেলা জজ কোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট গোলাম সরওয়ার খান জুয়েল বলেন, “রাতেই তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই ফোনে জানিয়েছেন। চার্জশিটের কোনো কপি বা অনুলিপি এখনো হাতে পাইনি। এ মামলার এজাহারে ১০৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে সম্ভবত একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এক্ষেত্রে তদন্তে আরো ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহার থেকে কারো নাম বাদ যায়নি বলে জেনেছি। এজাহারের কপি হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।”

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা ও গুলি চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় সদরের চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং হাজিরহাট বেতেপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হোসেন নিলয় (১৬) নিহত হন।

১০ আগস্ট নিহত ছাত্র জাহিদুল ইসলামের বাবা মো.

দুলাল উদ্দিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এতে ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ এবং সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ত কর ম তদন ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ব্যবসায় নারীর জয়যাত্রা

দুই দশক আগেও সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা। এখন সেখানে তৈরি হয়েছেন হাজারো নারী উদ্যোক্তা। অনেকেই পেয়েছেন সফলতা। কারও কারও ব্যবসার পরিধি তো সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছে। 

স্থানীয় প্রশাসন, উইমেন চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় কী পরিমাণ নারী ব্যবসায়ী কিংবা উদ্যোক্তা আছেন, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত নেই। তবে চার জেলায় হাজারো নারী উদ্যোক্তা আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বাইরে আবার অনেক নারী অনলাইনে কিংবা বাসাবাড়িতে থেকেও ব্যবসা করছেন। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত হাজার নারী ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত আছেন। 

সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লুবানা ইয়াসমিন বলেন, একটা সময় শুধু পোশাক, পারলার ও টেইলার্সকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যেই নারীদের দেখা যেত। এখন নারীরা প্রায় সব ধরনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে রেস্তোরাঁ, বুটিকস, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, ক্যাটারিং, ঠিকাদারি, আইটি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসা উপকরণ বিক্রি, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং ও খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য। 

উইমেন চেম্বারের সভাপতি আরও জানান, দুই দশক ধরে ধীরে ধীরে সিলেটে ছোট ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়ে চলছে। নানা ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরা ব্যবসায় এগিয়ে চলেছেন। তবে নারী উদ্যোক্তাদের আরও উৎসাহিত করা গেলে সিলেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বদলে যাবে। 

সফলতার গল্প

সিলেটের হাজারো নারী উদ্যোক্তার মধ্যে একজন ষাটোর্ধ্ব রায়হানা খানম (রেশমা)। তাঁর বাসা নগরের শিবগঞ্জ মজুমদারপাড়া এলাকায়। তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুটস) সিলেটের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আছে ‘কুরশিকাঁটা গ্যালারি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হাতে তৈরি কুরশিকাঁটার পোশাক, শোপিস, পুঁথির কাজ, ব্যাগ, নামাজের টুপি, ব্লকের থ্রি-পিসসহ নানা পণ্য তিনি এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি করেন। অনলাইনেও তিনি এসব পণ্য বিক্রি করে থাকেন। 

প্রায় ৩৫ বছর ধরে রায়হানা বেগম কুরশিকাঁটার ব্যবসা করছেন। শুরুতে অল্প পরিসরে তাঁর ব্যবসা শুরু। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে পরিবারের নানা খরচও তাঁর ব্যবসার আয়ে হতো। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত। সন্তানদের কেউ প্রবাসে থাকেন, কেউ ব্যাংকে চাকরি করেন। এখন আর সেই অর্থে সংসার তাঁর আয়নির্ভর নয়। তবে স্বামী মুজিবুল হকের পাশাপাশি একসময় তিনি ব্যবসার আয় সমানতালে পরিবারের কাজে ব্যয় করেছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে সংসার চালানোর কারণেই তাঁর পরিবারে সচ্ছলতা এসেছিল। 

১৩ সদস্যের পরিবার আমার। এখন সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত, চাকরিবাকরি করে। পরিবারে আমার আয়ের টাকা আর দিতে হয় না। তবে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও আয় করে একসময় সংসার চালিয়েছি, সন্তানদের মানুষ করেছি, এটা ভাবলেই তো মনে একটা তৃপ্তি আসে। রায়হানা খানম, উদ্যোক্তা

রায়হানা বেগম জানান, ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটা শিখেছিলেন। তখন থেকেই সেলাই মেশিন চালাতেন। পরে এ মাধ্যমকেই তিনি ব্যবসার কাজ হিসেবে বেছে নেন। কুরশিকাঁটার পাশাপাশি নানা শোপিস পণ্য তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। মানুষজনও তাঁর কাজ পছন্দ করতে থাকেন। এরপর চলতে থাকে তাঁর সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ব্যবসা চালুর কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি সফলতা পান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়হানা নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। এর মধ্যে শাড়ি, জামা, কাপড়ের জুতা, টুপি, বাচ্চাদের কটি, টেবিল ক্লথ, কুশন কভার, নানা নকশার ব্লকের পোশাক, শোপিসের মধ্যে ফুল, পুঁথির মালা ও ব্যাগ, চুড়ি, ময়না, মুরগি, খরগোশ, পেঙ্গুইন, বিড়াল উল্লেখযোগ্য। হাতে তৈরি এসব পণ্য আগে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা তাঁর কাছ থেকে কিনতেন। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে অনলাইনে তাঁর একটা বিশাল ক্রেতাগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এখন প্রতি মাসে অনলাইনে তিনি বিভিন্ন পণ্যের আগাম চাহিদা পান। 

রায়হানা বেগম বলেন, তিনি নিজের নকশাতেই পোশাক তৈরি করেন। অনেক সময় অস্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ দিয়েও করান। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরের ৫ থেকে ৬টি প্রতিষ্ঠানে পাইকারি দরে তাঁর পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আগামী ১ ডিসেম্বর নগরের শিবগঞ্জে তিনি একটা শোরুম চালু করবেন। পরে সেখান থেকেই পণ্য বিক্রি করবেন। বিদেশ থেকেও এখন অনেক সময় তাঁর পণ্যের চাহিদা আসে। 

রায়হানা বেগম ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে কুরশিকাঁটার কাজ শিখেছিলেন। পরে তিনি এটা ধরেই পণ্য বানিয়ে ব্যবসায় যুক্ত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ