জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবি করায় বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন চাই না। অথচ এক বছর আগেই ২০০ আসনে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। বড় দলটির একটি আসনে এখানো ১০ জনের বেশি প্রার্থী কাজ করছেন। প্রার্থী ঘোষণা করে দেখেন না, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।’

আজ শুক্রবার দুপুরে সিলেটে জামায়াতের কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এহসানুল মাহবুব এ কথা বলেন। নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে সিলেট মহানগর জামায়াত।

অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে উল্লেখ করে এহসানুল মাহবুব আরও বলেন, ‘কেউ কেউ পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) বোঝেন না। সময় গেলে এটাও বুঝবেন। কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) পদ্ধতির মতো পিআর পদ্ধতিও এ দেশে কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবি মেনে নিন। অন্যথায় আবার গণ–আন্দোলনের সূচনা হবে।’

আরও পড়ুন‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই, উপদেষ্টা অনেকের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ: গোলাম পরওয়ার২ ঘণ্টা আগে

এহসান মাহবুব বলেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ভুল বোঝানো হচ্ছে। অথচ পিআর পদ্ধতি হলে বেশি ভোট কাস্ট হবে। মনোনয়ন–বাণিজ্য বন্ধ হবে। জনগণের ভোটের সঠিক মূল্যায়ন থাকবে। তাই আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। স্বৈরশাসকের সঙ্গে থাকা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে কোর্ট পয়েন্ট থেকে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা মোড়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ড-ইউনিটের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য সিলেট জেলার আমির হাবিবুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন জেলার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, মহানগরের নায়েবে আমির নূরুল ইসলাম, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি জামিল আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমুখ।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে গণমিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে সিলেট নগরের বন্দরবাজার থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা এলাকায় গিয়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের সিলেট মহানগরী সভাপতি তাজুল ইসলাম হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদু হান্নান। মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরে মাওলার সঞ্চালনায় গণমিছিল ও সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগরের সহসভাপতি শাহ আশিকুর রহমান, সিলেট জেলার সহসভাপতি মুখলিসুর রহমান, মহানগরের সহসভাপতি শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলয়াস, আবদুল হান্নান তাপাদার, মুহাম্মদ ফয়জুল হক, ইমদাদুল হক নোমানী, জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র আইন গণম ছ ল র রহম ন ম হব ব ইসল ম এহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

সমালোচনাকারীরা কার পক্ষে বলছেন: ফয়েজ আহমদ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের কিছু ধারা নিয়ে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের প্রশ্ন করেছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, তাঁরা দেশের নাগরিক নাকি কার পক্ষে কথা বলছেন?

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ এই সমালোচনাকে স্বাগতও জানিয়েছেন।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫, জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সাইবার সুরক্ষা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদিত হওয়ার বিষয়ে অবহিতকরণ সভা হয়। এই সভায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার এই তিন অধ্যাদেশের অনুমোদন হয়।

এই সভায় তিনটি অধ্যাদেশ অনুমোদন হওয়ার বিষয়টি কেক কেটে উদ্‌যাপন করা হয়।

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে ১৮ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘ডেটা সেন্টার করতে কয় দিন লাগে? আমরা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের দিক থেকে ডেটা সেন্টার বাস্তবায়ন করছি তিনটা। একটা না, তিনটা করছি। সেখানে আমরা ভেন্ডরকে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দিয়েছি।’

সরকার যদি এক বছরের মধ্যে ডেটা সেন্টার করতে পারে বেসরকারি প্ল্যাটফর্ম কেন ১৮ মাসের মধ্যে করতে পারবে না—এই প্রশ্ন তোলেন ফয়েজ আহমদ। সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের নাগরিক নাকি কার পক্ষে কথা বলছেন? সুতরাং আমি এই প্রশ্নগুলো তুলতে চাই এই জন্য যে আজকে আমাদের বোঝাপড়ার গভীরতায় যাওয়ার সময় হয়েছে। বিরোধিতার ক্ষেত্রে বিরোধিতা করে আমাদের অগ্রযাত্রাকে কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।’

ফয়েজ আহমদ বলেছেন, ‘দেখুন আজকের পত্রিকায় যে কিছু কথা আমরা দেখলাম সেটা হচ্ছে যেই গভীর এবং ডিপ কারিগরি ইনসাইটের মাধ্যমে এবং গভর্ন্যান্স স্কোপের মাধ্যমে আমরা যে আইনটা তৈরি করেছি ছয় মাসের অধিক সময়ে দিনের পর দিন রাতের পর রাত খেটে, সেটা যদি ৬ ঘণ্টায় কোনো পরামর্শ না করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া আপনি যদি রিপোর্ট করে দেন তাহলে অবধারিত হবে সেখানে ভুল বক্তব্য আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমি গণমাধ্যমকে অনুরোধ করব আমাদের সঙ্গে প্রশ্ন করুন, আমাদের কাছে আসুন জিজ্ঞেস করুন জানা-বোঝার ভিত্তিতে রিপোর্ট করুন।’

ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়ে গতকাল শনিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, গোপনীয়তার আশ্রয় ও তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া আজ রোববার সকালে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদে অধ্যাদেশটির অপব্যবহারের ঝুঁকি এবং কর্তৃপক্ষের অবাধ ক্ষমতার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

অধ্যাদেশ করতে গিয়ে সরকার অনেক বেশি পরামর্শ করেছে জানিয়ে এই বিশেষ সহকারী বলেন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়, মেটা, গুগলের মতো টেক প্ল্যাটফর্মসহ বাংলাদেশে যারা আছে, সবার সঙ্গে আলাদা করে পরামর্শ হয়েছে।

ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আইন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের করতে হয়েছে। কিন্তু এই দ্রুততার কারণে আমরা কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ (মানে আপস) করিনি।’

দ্রুততার কারণে সাইবার সুরক্ষা আইনে একটা ভুল ছিল। সেটা এবার সংশোধন করেছেন বলে জানান ফয়েজ আহমদ। নতুন আইনে যদি কোনো ধরনের ভুল থাকে, তাহলে সেটাও সংশোধন হবে বলে জানান তিনি। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান এবং আলোচনা-সমালোচনার জন্য তাঁরা উন্মুক্ত আছেন বলে জানান।

ফয়েজ আহমদ বলেছেন, কর্তৃপক্ষকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জুডিশিয়াল অথরিটি রাখা হয়েছে।  নাগরিকেরাও এই জুডিশিয়াল কাউন্সিলে সালিসের জন্য যেতে পারবে। এই আইনে কোনো জামিন-অযোগ্য ধারা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘উপাত্তের মালিকানা ব্যক্তির। ব্যক্তির পক্ষে জিম্মাদার যেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণের যে স্তরগুলো তাতে কর্তৃপক্ষ দেখবে যে আসলে ওই প্রতিষ্ঠানের এই কাজের সক্ষমতা আছে কি না। এখন এটাকে যদি আপনি অধিক ক্ষমতা বলেন তাহলে আমার কিছু করার নেই।  আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলব এই ক্ষমতা দেওয়ার দরকার আছে।’

সরকার মেটা, গুগলসহ দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলোকে দায়বদ্ধ করে এই আইনের আওতায় এনেছে। এই কাজ করার জন্য তাঁর সহকর্মীদের প্রশংসা করা উচিত বলে জানান ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, অনেক বেশি জ্ঞান, অনেক বোঝাপড়া অনেক গভীরতার মধ্য দিয়ে আইনগুলো তাঁরা তৈরি করেছেন।

বিদেশি পরামর্শক এনে নীতি করার যে ধারণা এত দিন ছিল, তা থেকে সরে এসে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এবং তৈরি হয়েছে বলে জানান ফয়েজ আহমদ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা আইন প্রকাশ করবেন বলে জানান। আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও জানান।

আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মামুনুর রশীদ ভূঞার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বিসিসির নির্বাহী পরিচালক মো. আবু সাঈদ প্রমুখ।

আরও পড়ুনব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ: কর্তৃপক্ষের অবাধ ক্ষমতায় অপব্যবহারের ঝুঁকি৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের সভাপতি খোরশেদ আলম
  • সমালোচনাকারীরা কার পক্ষে বলছেন: ফয়েজ আহমদ
  • নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিল অটোরিকশা, চালক নিহত