প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় যুবদল নেতা, কোমরে দড়ি বাঁধা থাকায় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ
Published: 25th, November 2025 GMT
রাজবাড়ীতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিলেন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেপ্তার যুবদল নেতা সাইদুল ইসলাম ওরফে তাজেল। তবে জানাজার সময় তাঁর কোমরে দড়ি বেঁধে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা।
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির উঠানে বাবার জানাজায় অংশ নেন সাইদুল। জানাজা শেষে দাফন হওয়ার পর সন্ধ্যায় তাঁকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়।
সাইদুল ইসলাম খানখানাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবার নাম মমিন মিয়া। সাইদুল কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ৯ নভেম্বর রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় ও খানখানাপুর দত্তপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে সাইদুল ইসলাম ও আকাশ মোল্লাকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, যুবদল নেতা সাইদুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা কারাগারে ছিলেন। গত রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁর বাবার মৃত্যু হলে আমাদের জানানো হয়। গতকাল সকালে প্যারোলে মুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিক্রমে বিকেল চারটার দিকে প্যারোলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
ওসি মাহামুদুর রহমান আরও বলেন, ২০ থেকে ২২ জন পুলিশ সদস্যের সতর্ক পাহারায় সাইদুল ইসলামকে জানাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজা শেষে এক থেকে সোয়া ঘণ্টা অবস্থানের পর সন্ধ্যায় তাঁকে পুনরায় জেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে সাইদুল ইসলামকে ‘হয়রানিমূলক’ মামলায় গ্রেপ্তার ও জানাজায় অংশ নেওয়ার সময় কোমরে দড়ি বেঁধে রাখায় অনেক নেতা-কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খানখানাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। রাজনীতি আজ প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছে। আমরা যুবদল নেতা সাইদুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
ওই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসলাম মিয়া গতকাল রাতে ফেসবুকে কোমরে রশি বাঁধা অবস্থায় জানাজায় অংশ নেওয়ার ভিডিও পোস্ট করে লেখেন, ‘কারও বাবা–মা চিরকাল বাঁচে না, একদিন আমি-আপনিও চলে যাব পরপারে, যখন আমাদের ডাক আসবে! কিন্তু কষ্টের বিষয় তখন হয়, যখন কোনো বাবার শেষনিশ্বাসের সময় তার সন্তান পাশে থাকে না! যখন শেষনিশ্বাসের সময় বলে যেতে পারে না—মা, ভাই, বোনকে দেখে রাখিস। কবে শেষ হবে এই প্রতিহিংসার রাজনীতি? কবে.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খ নখ ন প র য বদল ন ত গতক ল র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই বলে দাবি করেছেন কমিশনের সাবেক সহসভাপতি এবং সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্নটা আপনি (প্রশ্নকর্তা) তুলেছেন, সেটি তথ্যগতভাবে ভুল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নেই। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কোনো মিথ্যাচার করে থাকে, তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।’
বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন সম্মেলনের একটি পর্বে বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথাগুলো বলেন। আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত সাত কোটি টাকার মধ্যে দুই কোটি টাকার কম খরচ করা হয়েছে এবং কীভাবে খরচ করা হয়েছে, সেটা চিফ অ্যাডভাইজারের (প্রধান উপদেষ্টা) অফিস থেকে এবং কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
অভিযোগকে মিথ্যাচার উল্লেখ করে কমিশনের সাবেক এই সহসভাপতি বলেন, ‘আপনি যে মিথ্যাচারটা রিপিট (পুনরাবৃত্তি) করেছেন, সেটার জন্য আপনাকে আমি আরেকবার শুধু স্মরণ করিয়ে দেব, যেকোনো তথ্যের সর্বশেষ ভাষ্যটি লক্ষ করা খুব জরুরি। কেননা যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন যাঁরা এই প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁরা কিন্তু এই হিসাবের পরে আর কোনো কথা বলেননি।’
এ ছাড়া আলী রীয়াজের কাছে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের বিষয়ে। জবাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন, এমন পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি একে মতপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশটার খানিকটা হলো কথাবার্তা বলার, চর্চার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেকোনো রকম কাজ করলে তাদের সমালোচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পেরেছে। এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা করছি।’
জনগণের সমর্থনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে কাঠামোগত এবং সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব হবে—এমন আশাবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘ফলে যদি কেউ মনে করেন যে সংস্কারের প্রশ্নটি ইতিমধ্যে মারা গেছে এবং যাঁরা অবিচ্যুয়ারি লিখতে চান, তাঁরা লিখতে পারেন। কারণ, অবিচ্যুয়ারি লেখার অভ্যাস তাঁদের আছে এবং অন্যরা অবিচ্যুয়ারি লিখতে পারেন।’
‘বাংলাদেশের একটা ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে’ এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যখন জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়, সেই অনুষ্ঠানে সুস্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে একটি দলিল দিয়ে আসলে সমস্ত রকম সংস্কার সম্ভব নয়। এটি সূচনা মাত্র এবং জাতীয় সনদের যে শিরোনাম করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে—ভবিষ্যতের পথরেখা। আশা করি, সেটা আপনাদের সবারই নজরে থাকবে।’
এর আগে সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক দেশেই ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। কর্তৃত্ববাদীরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করলেও গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারায় বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, সরকারের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে অথবা রাষ্ট্রগুলো দমনমূলক হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, নজরদারির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সরকার সংকটকে টিকিয়ে রাখছে। আবার তার বিপরীতে প্রায়ই রাষ্ট্র নিজেও বহিরাগত শক্তির চাপে ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সমসাময়িক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বৈশ্বিক পরিস্থিতি।