জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে।

শনিবার (১১ অক্টোবর) এফডিসিতে ‘গণতন্ত্র সুরক্ষায় আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব’ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি। ছায়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ড.

বদিউল আলম বলেন, নির্বাচনী ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দুর্নীতির পালাবদল না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, ক্ষমতার সঙ্গে ‘জাদুর কাঠি’ যুক্ত ছিল। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্য, মেয়র ও চেয়ারম্যানদের সম্পদ আকাশচুম্বী হয়েছে- এটা বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও স্বৈরাচারী আইন-কানুন ও কাঠামো এখনো বহাল রয়েছে। এসব কাঠামোই তাকে স্বৈরাচার বানিয়েছে। বর্তমানে চলমান সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এসব কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকলে কেবলমাত্র নির্বাচন দিয়ে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই- এই নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। ভবিষ্যৎ সরকার যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করে, তবে তাদের পরিণতিও শেখ হাসিনার মতোই হতে পারে। এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে। আশা করি, ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা এ বিষয়ে সজাগ থাকবে।

তিনি আরো জানান, আগামী নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেবে ঐকমত্য কমিশন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য এখন ‘সিলভার লাইন’ থেকে ‘গোল্ডেন লাইন’-এ উন্নীত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। দেশের মানুষও অপেক্ষায় আছেন, কবে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, যারা এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল, বিনা ভোটে ক্ষমতায় ছিল, দিনের ভোট রাতে করেছিল, ডামি নির্বাচন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল- সেখান থেকে মুক্তির জন্য আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক।

তিনি আরো জানান, আগামী ১৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে যদি জুলাই সনদ স্বাক্ষরে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিগত শাসনামলে ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, গুম, খুন এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদদের হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে এবং পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে ফ্যাসিস্টবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলেই গণতন্ত্র সুরক্ষিত হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তেজগাঁও কলেজ ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা যৌথভাবে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক মো. হুমায়ূন কবীর এবং সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

ঢাকা/এএএম/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ব ট ফর ড ম ক র স জ ল ই সনদ গণতন ত র র জন ত ক ল আলম সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে না, প্রত্যাশা সিইসির

শাপলা প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে এনসিপি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় ফ্যাক্টচেক (যাচাই–বাছাই) না করে কোনো সংবাদ পরিবেশন না করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থা এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সিইসি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। পরিষ্কার ও স্বচ্ছ নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, এবার লুকিয়ে, রাতের আঁধারে কোনো ভোট হবে না।

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নাসির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে এনসিপির ধারণা আছে। তাই গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে এনসিপি বাধা সৃষ্টি করবে না বলেই প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, ‘যারা এনসিপির নেতৃত্বে আছেন, তাঁরা ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান চলাকালে সম্মুখ সারিতে থেকে আন্দোলন করেছেন। তাঁরা গণতন্ত্রায়ণের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন না—সেটা আমি বিশ্বাস করি।’

সিইসি বলেন, ‘কোনো দল যখন নিবন্ধন পায়, আমাদের যে নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা, সেখান থেকে তাকে প্রতীক নিতে হয়। যেহেতু শাপলা আমাদের তালিকায় নেই, তাই দিতে পারিনি। এখন পর্যন্ত তালিকার বাইরে কাউকে প্রতীক দেওয়া হয়নি।’

নতুন করে প্রতীক যোগ করতে অসুবিধা আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ‘কোনো অসুবিধা নেই’ বলেও জানান সিইসি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপি গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে না, প্রত্যাশা সিইসির
  • আমরা রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না: সিইসি
  • তালিকায় না থাকায় এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া হয়নি: সিইসি
  • দুই দিন পিছিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ১৭ অক্টোবর
  • জনতা চায় নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, এটিই আমাদের লক্ষ্য: মির্জা ফখরুল
  • যাঁরা গণভোট দেবেন তাঁরা গণভোট নিয়ে কতটা জানেন
  • আত্মগোপনে মারিয়া, কেন পেলেন শান্তিতে নোবেল
  • বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন ফখরুলের
  • জুলাই সনদ: বাস্তবায়নের উপায় দেখে সিদ্ধান্ত নেবে দলগুলো