ময়মনসিংহে গেজেটভুক্ত জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানের গায়ে হাত, কটুক্তি ও আহত করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বৈষম্যবিরোধীরা। 

গতকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাত থেকে নগরীর বাসকান্দা ইউনাইটেড বাস কাউন্টারের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। 

শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত দোষীদের বিচারসহ শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি নিষিদ্ধ জেলা আওয়ামী লীগের জেলার সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমকে গ্রেপ্তার ও তার মালিকানাধীন ইউনাইটেড সার্ভিসের সকল বাস বন্ধে অনড় অবস্থানে রয়েছেন তারা।

শুক্রবার রাত নয়টা থেকে বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছে জুলাই যোদ্ধারা। ফলে ময়মনসিংহ-ঢাকাগামী ইউনাইটেড সার্ভিস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সার্ভিসে আমিনুল হক শামীমের ১৬টি বাসসহ সারাদেশে চলাচলকারী সকল বাস বন্ধের দাবি তাদের। 

খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক, সেনা সদস্যরা মাসকান্দা বাসটার্মিনালে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এঘটনায় ঝন্টু নামে এক বাস শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।

বৈষম্যবিরোধীদের অবস্থানের প্রতিবাদে নগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাসে ঢাকাগামী সকল ধরনের যানচলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এতে দুপুর ১২টা থেকে ঢাকাগামী কোন যান চলাচল না করায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেওয়া জুলাই যোদ্ধা আবু রাইহান, মাসুদ রানা, মোজাম্মেল হক, মোকাররম আদনান প্রমুখ যোদ্ধাদের দাবি- জুলাই যোদ্ধাকে আহত করার প্রতিবাদে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কার্যকরী দোসর, পরিবহনের মাফিয়া ডন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের ময়মনসিংহের শহীদ সাগর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আমিনুল হক শামীম এর মালিকানাধীন ইউনাইটেড পরিবহনের সকল বাস বন্ধসহ অনতিবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় অবস্থান কর্মসূচি চলমান রাখার হুশিয়ারী দেন তারা।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, হালুয়াঘাটের জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হান শুক্রবার রাতে বাসে ওঠার সময় বাস শ্রমিক ঝন্টুর শরীরে ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় নিজেকে জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে রায়হান একাধিক বার সরি বরে। তবে ঝন্টু তার প্রতি অশালিন আচরণ ও কটুক্তি করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, “সারারাত বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি। সমাধান না হওয়ায় শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ বাইপাসে সকল ধরনের পরিবহন আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে রয়েছেন।”

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, “জুলাইযোদ্ধারা আমাদের সার্ভিসের কাউন্টার বন্ধ করে শ্রমিকদের আটকে রাখে। পরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সেনাসদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে ছাত্ররা বাস চলাচল করতে না দেওয়ায় শ্রমিকরা অবরোধ করছে। বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করছি।”

ঢাকা/মিলন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর

শহরের নিতাইগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। প্রথমে সে জরুরী বিভাগে থাকা ডাক্তারকে দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে।

কার্ডিওলজি ডাক্তার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করে এসে ডাক্তারের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৪ নভেম্বর  (সোমবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।

মৃত্যু ব্যক্তিটির নাম আব্দুল জব্বার। তিনি ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় অস্থায়ী বাসিন্দা। তার গ্রামের বাসা ময়মনসিংহ জেলায়। পেশায় তিনি ছিলেন মাছ বিক্রেতা।

এদিকে তার মৃত্যুবরণ হাসপাতালে এক প্রকার হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ, তার সাথে কোন স্বজন ছিলো না। ফলে কার কাছে লাশটি বুুঝিয়ে দিবেন সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফলে শুরু হয় লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান। কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি রাখা হয় হিমঘরে।

গত দুইদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি অজ্ঞাতভাবে লাফন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ আবেদনটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাউদ নূরে শফিউল কাদের। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে যাওয়ার পর পরই তাকে হাসপাতাল থেকে কল করে বলা হয়, ‘লাশটির স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন।’

এদিকে জরুরী বিভাগের পাশে লাশকাটা ঘরের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তারা পিতা মারা গেছে। একদম জলজ্যান্ত মানুষটি বাসা থেকে অনেকটাই সুস্থভাবেই বেড়িয়ে আসলেন, অথচ তিনি আজ মৃত। এসব ভেবেই তিনি অনেকটাই দুঃখে শোকে কাতর। এমন পরিস্থিতিতে তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিলো না।

তবে এ বিষয়ে মৃত আব্দুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, যথারীতি ২৪ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন আব্দুল জব্বার। তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাইনি। আমরা তাকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছি।

কিন্তু পাই নি। আজ সকালে আমাদের এলাকারই এক মহিলা বলে, ওনাকে নাকি এ হাসপাতালে দেখছে। তার কথা শুনে আমরা এ হাসপাতালে এসে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে তিনি মারা গেছে।

তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহে নিয়ে যাবো এবং ওখানে দাফন করবো।

এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাষ্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তিনি প্রথমে জরুরী বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি স্যারের কাছে পাঠানো হয়। স্যার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্যারের রুমে মাটিতে পড়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, আমরা তার স্বজনদের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। আজ তাই ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে পাঠিয়েছিলা যে, এ লাশটি এখন কি করবো। তার নির্দেশনা আসলে আমরা তাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করতাম।

আল্লাহ্’র রহমতে এর আগেই তার স্বজনরা চলে আসছে। আমরা মৃত ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ও ছবির সাথে মিলিয়ে এবং যাচাই করে এ স্বজনদের হাতে লাশটি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
  • হতাশায় ডুবে থাকলে সম্ভাবনা দেখা যায় না
  • সম–অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতা করতে চাইলে স্বাগত জানাই: মামুনুল হক
  • নারীর ভোট মানেই পরিবর্তনের ঘোষণা: এমরান সালেহ
  • ময়মনসিংহে ক্লিনিকে অভিযানে কারাদণ্ড-জরিমানা