ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ইউনাইটেড ও সৌখিন পরিবহন বন্ধ
Published: 12th, October 2025 GMT
ময়মনসিংহে জুলাইযোদ্ধা আবু রায়হানকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা পরিচালিত ১৬টি বাস বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী ইউনাইটেড ও সৌখিন পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাতে ইউনাইটেড বাসের লাইনম্যান অরুণ ঝন্টু আবু রায়হানকে গায়ে হাত তোলা, কটূক্তি ও আহত করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ‘জুলাই অভ্যুথানের বীর যোদ্ধাগণ’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার রাত ৯টা থেকে নগরীর বাসকান্দা ইউনাইটেড বাস কাউন্টারের সামনে ১০-১৫ জন বৈষম্যবিরোধী নেতৃবৃন্দ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
এসময় তারা দাবি জানান শহীদ সাগর হত্যা মামলার আসামি নিষিদ্ধ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমকে গ্রেপ্তার ও তার মালিকানাধীন ইউনাইটেড সার্ভিসের সকল বাস বন্ধ করতে হবে।
এদিকে এর প্রতিবাদে শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড়ে সকল ধরনের যানচলাচল বন্ধ করে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। এতে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরে প্রশাসন ও জেলা মোটর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ দফায় দফায় আলোচনা করে আমিনুল হক শামীম পরিচালিত ১৬টি ইউনাইটেড বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ময়মনসিংহ মহানগর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস বলেন, “আবু রায়হানকে লাঞ্ছিতের বিচার, ফ্যাসিস্ট শামীম নিয়ন্ত্রিত ১৬টি বাস বন্ধ, ম্যানেজারকে প্রত্যাহার এবং সকল দোসরকে চাকরিচ্যুত করার আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।”
ভুক্তভোগী আবু রায়হান বলেন, “প্রশাসন এবং শ্রমিক নেতারা আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় যাত্রী দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। আমরা চাই মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে ফ্যাসিস্টের কোন স্মৃতি চিহ্ন না থাকুক। তবে দাবি মেনে নেওয়ার পর শুনেছি মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইউনাইটেড এবং সৌখিন পরিবহনের কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তবে সেটি একান্তই তাদের বিষয়। কিন্তু যাত্রী দুর্ভোগ বাড়লে আমরা বসে থাকব না।”
ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, “আমিনুল হক শামীম পরিচালিত ১৬টি বাস বন্ধের পাশাপাশি একটি মনিটরিং টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাস চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ঢাকার নেতৃবৃন্দ তা মানতে নারাজ। যে কারণে ইউনাইটেড এবং সৌখিন পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে ইউনাইটেড সার্ভিসের ১৬টি বাস বন্ধের সিদ্ধান্তে বৈষম্যবিরোধী এবং শ্রমিকদের চলা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি প্রত্যাহার হয়। কিন্তু তাদের নিজেদের মধ্যে সমস্যার কারণে বাস বন্ধ রয়েছে।”
ইউনাইটেড পরিবহনের চালক সোহেল রানা বলেন, “শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত মালিক পক্ষ বাস চলাচলে নিষেধ করেছেন। আমাদের দাবি, গ্রেপ্তার শ্রমিককে মুক্তি দিতে হবে।”
ঢাকা/মিলন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স খ ন পর বহন ব স বন ধ র অবস থ ন ত ১৬ট
এছাড়াও পড়ুন:
ভিক্টোরিয়ায় চিকিৎসা নিতে এসে মৃত্যু, স্বজনরা জানলো দুইদিন পর
শহরের নিতাইগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। প্রথমে সে জরুরী বিভাগে থাকা ডাক্তারকে দেখান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে।
কার্ডিওলজি ডাক্তার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করে এসে ডাক্তারের সামনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ২৪ নভেম্বর (সোমবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে।
মৃত্যু ব্যক্তিটির নাম আব্দুল জব্বার। তিনি ফতুল্লা থানাধীন পূর্ব সস্তাপুর এলাকায় অস্থায়ী বাসিন্দা। তার গ্রামের বাসা ময়মনসিংহ জেলায়। পেশায় তিনি ছিলেন মাছ বিক্রেতা।
এদিকে তার মৃত্যুবরণ হাসপাতালে এক প্রকার হৈচৈ পড়ে যায়। কারণ, তার সাথে কোন স্বজন ছিলো না। ফলে কার কাছে লাশটি বুুঝিয়ে দিবেন সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। ফলে শুরু হয় লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান। কিন্তু স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি রাখা হয় হিমঘরে।
গত দুইদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে লাশটির স্বজনদের অনুসন্ধান করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে লাশটি অজ্ঞাতভাবে লাফন করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ আবেদনটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাউদ নূরে শফিউল কাদের। তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সামনে যাওয়ার পর পরই তাকে হাসপাতাল থেকে কল করে বলা হয়, ‘লাশটির স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসুন।’
এদিকে জরুরী বিভাগের পাশে লাশকাটা ঘরের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে আছে মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে আমির হামজা। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, তারা পিতা মারা গেছে। একদম জলজ্যান্ত মানুষটি বাসা থেকে অনেকটাই সুস্থভাবেই বেড়িয়ে আসলেন, অথচ তিনি আজ মৃত। এসব ভেবেই তিনি অনেকটাই দুঃখে শোকে কাতর। এমন পরিস্থিতিতে তার বক্তব্য নেয়ার সুযোগ ছিলো না।
তবে এ বিষয়ে মৃত আব্দুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো: মফিজুল ইসলাম বলেন, যথারীতি ২৪ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন আব্দুল জব্বার। তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাইনি। আমরা তাকে গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছি।
কিন্তু পাই নি। আজ সকালে আমাদের এলাকারই এক মহিলা বলে, ওনাকে নাকি এ হাসপাতালে দেখছে। তার কথা শুনে আমরা এ হাসপাতালে এসে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি। পরে জানতে পারি, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে তিনি মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহে নিয়ে যাবো এবং ওখানে দাফন করবো।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাষ্টার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তিনি প্রথমে জরুরী বিভাগে আসেন। সেখান থেকে তাকে ২১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্ডিওলজি স্যারের কাছে পাঠানো হয়। স্যার তাকে ইসিজি করতে বললে তিনি ইসিজি করিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করেই স্যারের রুমে মাটিতে পড়ে যান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমরা তার স্বজনদের খোঁজ পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাই নি। আজ তাই ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে পাঠিয়েছিলা যে, এ লাশটি এখন কি করবো। তার নির্দেশনা আসলে আমরা তাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করতাম।
আল্লাহ্’র রহমতে এর আগেই তার স্বজনরা চলে আসছে। আমরা মৃত ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য ও ছবির সাথে মিলিয়ে এবং যাচাই করে এ স্বজনদের হাতে লাশটি বুঝিয়ে দিচ্ছি।