আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে তালেবানের ২০০ সদস্যকে হত্যার দাবি করেছে পাকিস্তান। রবিবার এক বিবৃতিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ দাবি করেছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আফগান পক্ষ থেকে হামলার পর সীমান্ত সংঘর্ষে ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ২০০ জন তালেবান ও তার সহযোগী সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “২০২৫ সালের ১১/১২ অক্টোবর রাতে, আফগান তালেবান এবং ভারত-মদদপুষ্ট ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ পাক-আফগান সীমান্তে পাকিস্তানে বিনা উস্কানিতে আক্রমণ শুরু করেছিল।”

ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ শব্দটি পাকিস্তানে নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সন্ত্রাসীদের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং ফিতনা-আল-হিন্দুস্তান শব্দটি বেলুচিস্তানের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “রাতভর সংঘর্ষের সময়, এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের প্রিয় দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে গিয়ে পাকিস্তানের ২৩ জন সাহসী সন্তান শাহাদাত বরণ করেছেন এবং ২৯ জন সেনা আহত হয়েছেন।”

এতে বলা হয়েছে, “বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য এবং ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন অনুসারে, ২০০ জনেরও বেশি তালেবান এবং তার সহযোগী সন্ত্রাসীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, আহতের সংখ্যা অনেক বেশি।”

এদিকে, রবিবার তালেবান সরকার নিশ্চিত করেছে যে তারা উত্তর সীমান্তের একাধিক পাহাড়ি স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের উপর আক্রমণ করেছে। তালেবানের হামলায় পাকিস্তানের ৫৮ সেনা নিহত হয়েছে।
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সন ত র স আফগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানের হামলার বদলা নিয়েছে আফগানিস্তান, সীমান্তের বড় এলাকাজুড়ে গোলাগুলি

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে শনিবার রাতে বিস্তীর্ণ সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে গোলাগুলি হয়েছে। এই অঞ্চলগুলো হলো আফগানিস্তানের পাক্তিয়া প্রদেশের আরিয়ুব জাজাই, হেলমান্দের বাহারামচে, পাকতিকার বারমাল, অঙ্গুয়ার, খোস্টের জাজাই ময়দান, দণ্ডপাতান, ঘুমরাখ ও সেকিন, নাঙ্গরাহারের গোস্তআ, স্পিনঘর, অচিন প্রভৃতি। অর্থাৎ আফগানিস্তানের পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ দিক এই গোটা সীমান্ত অঞ্চলেই দুই দেশের সেনাদের মধ্যে লড়াই হয়েছে। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র আজ রোববার এ তথ্য জানিয়েছে।

এই সংঘাতে পাকিস্তানের অন্তত ২৩ জন সেনা নিহত হয়েছেন বলে দেশটি স্বীকার করেছে। এর আগে আফগানিস্তান দাবি করেছিল, পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। আজ পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন (আইএসপিআর) ২৩ জনের নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। এই লড়াইয়ে অন্তত ২০০ জন তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে পাকিস্তান আইএসপিআর।

৯ অক্টোবর কাবুলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পাকিস্তান হামলা চালায় বলে আফগানিস্তানের অভিযোগ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের হামলা হয়েছে বলে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এতে পাকিস্তানের প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছে বলে আফগানিস্তানের সরকারি সূত্রের ভাষ্য।

পাকিস্তান গত মাসে জানিয়েছিল, সীমান্ত অঞ্চলে টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) ধারাবাহিকভাবে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপরে আক্রমণ চালাচ্ছে। তার জেরেই কাবুলে একজন টিটিপি নেতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় বলে আফগানিস্তানের প্রচারমাধ্যম দুদিন আগে জানিয়েছিল।

আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আজ সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘পাকিস্তানের উচিত সেখানে লুকিয়ে থাকা আইএসআইএস সদস্যদের তার ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কার করা অথবা তাদের ইসলামিক আমিরাতের কাছে হস্তান্তর করা। আইএসআইএস গ্রুপ আফগানিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

শনিবার রাতের ওই সংঘর্ষের জেরে আফগানিস্তানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সাধারণভাবে আফগানিস্তানে বিভিন্ন চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ দেখা গেল গাড়ি থামানোর পাশাপাশি বারবারই কাগজপত্র–পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট দেখতে চাওয়া হচ্ছে। বাঘরামের পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটিতে আজ এই প্রতিবেদক গেলে তাঁকে বলা হয়, এখন সেখানে ছবি তুলতেও দেওয়া যাবে না, কারণ একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তালেবান পুলিশ বা আফগান পুলিশ এবং গোয়েন্দারা মিলিতভাবে চেকপোস্টগুলোতে নজর রাখছে। তবে সব সময় অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁরা কাগজপত্র দেখতে চাইছেন।

আফগানিস্তানে একধরনের চাপা উত্তেজনরা রয়েছে বলে সকালে প্রথম আলোকে জানান পঞ্জশির প্রদেশের গভর্নরের সচিব ও মুখপাত্র সইফউদ্দিন লাতুন। তিনি বলেন, গত রাতে সীমান্তজুড়ে লড়াই হয়েছে এবং প্রধানত আফগানরা হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিদের কিছু মৃতদেহ আমরা আমাদের অর্ধে নিয়ে আসতে পেরেছি। তবে পরিস্থিতি সামান্য অস্থির। গত রাতে যখন আপনারা এসেছিলেন তখন আমাদের কাছে খবর ছিল যে কিছু ড্রোন গভর্নরের ভবনের ওপরে রয়েছে। সেই কারণে এখানে যে গভর্নরের গেস্টহাউস আছে, সেখানে আপনাদের থাকতে বলতে পারিনি।’

তবে কাবুল শহরে জীবন মোটামুটি স্বাভাবিক। সন্ধ্যায় রাস্তায় লোক চলাচল করছে, অন্যান্য দিনের মতোই প্রচুর গাড়িও রাস্তায় দেখা যাচ্ছে। দোকানপাট বা অফিসও অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, পাকিস্তানের উচিত কূটনৈতিক মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে বিরোধ মীমাংসা ও সংঘাত বন্ধের দিকে এগোনো। টিটিপির যে নেতাকে উদ্দেশ্য করে পাকিস্তান হামলা চালিয়েছিল, তিনি কাবুলে উপস্থিত ছিলেনই না। তিনি ছিলেন অন্যত্র। এ সময় ইমরান খানের প্রয়োজন ছিল। তিনি থাকলে টিটিপি সমস্যা এত দিনে মিটে যেত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানের হামলার বদলা নিয়েছে আফগানিস্তান, সীমান্তের বড় এলাকাজুড়ে গোলাগুলি