আমরা রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না: সিইসি
Published: 12th, October 2025 GMT
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন ‘সুষ্ঠু’, ‘নিরাপদ’ ও ‘স্বচ্ছ’ হয়, সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না। চাই একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সবার দৃষ্টিগোচর নির্বাচন।’’
রবিবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
‘পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটের মূল্যায়ন হবে’
আয়নার মতো স্বচ্ছ ভোট করতে চাই: সিইসি
সিইসি বলেন, ‘‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা, হিল এলাকায় সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার— এ সব ইস্যু গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই না ইন্টারনেট বন্ধ হোক। আমি চাই তথ্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকুক, যাতে মানুষ সবকিছু জানতে পারে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির প্রতীক প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘‘যে দল নিবন্ধন পায়, তাদের নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা থেকে প্রতীক নিতে হয়। এনসিপির চাওয়া প্রতীকটি আমাদের তালিকায় না থাকায় আমরা দিতে পারিনি। এখনো পর্যন্ত তালিকার বাইরে কাউকে প্রতীক দেওয়া হয়নি।’’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বলছেন শাপলা প্রতীক ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘‘এনসিপিতে যারা নেতৃত্বে আছেন, তারা কিন্তু ২০২৪ এর আন্দোলনে একটিভলি পার্টিসিপেটলি ইনভলভ (সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন) ছিলেন। এই দলটা যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা গণতন্ত্র আনার প্রতি নিজেরা বাধা সৃষ্টি করবেন, এটা আমি মনে করি না। আমি তাদের দেশপ্রেমিক ভাবি। এনসিপিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভ্যুত্থানে যোগদান করেছিলেন। সুতরাং তারাও দেশের মঙ্গল চান। তারাও দেশের ভালো চান। তারাও দেশের গণতন্ত্র চান। আমার বিশ্বাস এবং যাতে গণতন্ত্রের উত্তরণটা যাতে সুন্দর হয়, সুষ্ঠু হয়; সেই একটা পরিবেশে উনারা সম্মতি দেবেন।
‘‘আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে রাজনীতিবিদরা জানেন এবং বিশেষ করে এনসিপির নেতৃত্ব ফুললি (সম্পূর্ণ) সচেতন, আমাদের সীমাবদ্ধতা জানেন। আমি কোনো শঙ্কিত নই, ইলেকশনে পার্টিসিপেশন সম্পর্কে। আই এম ফুললি কনফিডেন্ট, আপনারা দেখবেন ওয়েট (অপেক্ষা) করেন।’’
সাংবাদিকদের সঙ্গে সহযোগিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করবে এমন কোনো চিন্তা আমাদের নেই। আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের পার্টনার হিসেবে পেতে চাই। কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা যদি ঘটে দয়া করে ফ্যাক্ট চেকিং না করে সংবাদ পরিবেশন করবেন না। শেয়ার করার আগে নিশ্চিত হতে হবে এই ঘটনাটা সঠিক কি-না।’’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টা কিন্তু এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস (চলমান প্রক্রিয়া)। এটা চলতে থাকবে। নির্বাচন পর্যন্ত এটা চলতে থাকবে। নির্বাচনে যাতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার না হয়, সে লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।’’
ঢাকা/রেজাউল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইস ইস ইস ইস আম দ র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে: বদিউল আলম
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) এফডিসিতে ‘গণতন্ত্র সুরক্ষায় আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব’ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি। ছায়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. বদিউল আলম বলেন, নির্বাচনী ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতার পালাবদলে যেন দুর্নীতির পালাবদল না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি। গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, ক্ষমতার সঙ্গে ‘জাদুর কাঠি’ যুক্ত ছিল। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্য, মেয়র ও চেয়ারম্যানদের সম্পদ আকাশচুম্বী হয়েছে- এটা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও স্বৈরাচারী আইন-কানুন ও কাঠামো এখনো বহাল রয়েছে। এসব কাঠামোই তাকে স্বৈরাচার বানিয়েছে। বর্তমানে চলমান সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এসব কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকলে কেবলমাত্র নির্বাচন দিয়ে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই- এই নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। ভবিষ্যৎ সরকার যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করে, তবে তাদের পরিণতিও শেখ হাসিনার মতোই হতে পারে। এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে। আশা করি, ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা এ বিষয়ে সজাগ থাকবে।
তিনি আরো জানান, আগামী নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেবে ঐকমত্য কমিশন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য এখন ‘সিলভার লাইন’ থেকে ‘গোল্ডেন লাইন’-এ উন্নীত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি রাজনৈতিক দলই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। দেশের মানুষও অপেক্ষায় আছেন, কবে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, যারা এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল, বিনা ভোটে ক্ষমতায় ছিল, দিনের ভোট রাতে করেছিল, ডামি নির্বাচন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল- সেখান থেকে মুক্তির জন্য আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক।
তিনি আরো জানান, আগামী ১৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে যদি জুলাই সনদ স্বাক্ষরে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিগত শাসনামলে ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, গুম, খুন এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদদের হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে এবং পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে ফ্যাসিস্টবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলেই গণতন্ত্র সুরক্ষিত হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তেজগাঁও কলেজ ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা যৌথভাবে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক মো. হুমায়ূন কবীর এবং সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
ঢাকা/এএএম/ফিরোজ