পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থানে শনিবার দিবাগত রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আফগানিস্তানের দাবি, সংঘর্ষে তারা পাকিস্তানের অন্তত ৫৮ সেনাকে হত্যা করেছে। প্রাণ হারিয়েছেন নিজেদের ৯ সেনা। অপর দিকে পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের অন্তত ২০০ জন তালেবান ও তালেবান-সংশ্লিষ্ট ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে। সংঘর্ষে নিজদের ২৩ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। সংঘর্ষের পর উভয় দেশের সব স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সময় শনিবার রাত প্রায় ১০টায় সীমান্তবর্তী ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত শুরু হয়। কোন পক্ষ আগে হামলা চালায়, তা নিয়ে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি দাবি রয়েছে। পাকিস্তানের কর্মকর্তা এবং দেশটির রাষ্ট্রীয় রেডিও জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সীমান্তবর্তী অঙ্গুর আড্ডা, বাজৌর, কুর্রাম, দির ও চিত্রাল এবং বেলুচিস্তান প্রদেশের বাহরাম চাহে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ আজ রোববার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শনিবার রাতে ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন অংশে ‘প্রতিশোধমূলক’ অভিযান চালানো হয়েছে। আফগান সরকার স্বীকৃত এবং ডি ফ্যাক্টো (আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি এমন) সীমান্তরেখার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবৈধ কার্যক্রম মোটাদাগে রোধ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অভিযানে পাকিস্তানের ২৫টি সীমান্তচৌকি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে এবং অন্তত ৩০ শত্রু সেনা আহত হয়েছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ পাকতিকায় বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আফগান সরকার। পাকিস্তান এই অভিযোগ সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটি করেনি। তবে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে কাবুলের প্রতি আহ্বান জানায় ইসলামাবাদ।

আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানায়, সংবাদ সম্মেলনে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আইএসের প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের করাচি ও ইসলামাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে সেখানে আনা হচ্ছে। তাঁদের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ইরান ও মস্কোতে হওয়া হামলাগুলো এসব কেন্দ্র থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্তকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটানোর জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের বাহিনী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে হামলা দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করেছে। সংঘাতে তাদের অন্তত ২৯ সেনা আহত হয়েছেন। তালেবানের সীমান্তবর্তী অনেকগুলো অবস্থান ধ্বংস করা হয়েছে। শত্রুর ২১টি চৌকি সাময়িকভাবে দখলে নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা পরিকল্পনা এবং সহায়তার জন্য ব্যবহৃত একাধিক সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণশিবির অকার্যকর করা হয়েছে।

পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পর নিজেদের মালপত্র নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত চমানে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র স ম ন তবর ত স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা

জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।

দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপট

হাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’

এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)

আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।

দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকত

এই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯

আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।

আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।

দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ