তালেবান ও তালেবান-সংশ্লিষ্ট ২০০ জনকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
Published: 12th, October 2025 GMT
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী কয়েকটি স্থানে শনিবার দিবাগত রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আফগানিস্তানের দাবি, সংঘর্ষে তারা পাকিস্তানের অন্তত ৫৮ সেনাকে হত্যা করেছে। প্রাণ হারিয়েছেন নিজেদের ৯ সেনা। অপর দিকে পাকিস্তানের দাবি, তারা আফগানিস্তানের অন্তত ২০০ জন তালেবান ও তালেবান-সংশ্লিষ্ট ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে। সংঘর্ষে নিজদের ২৩ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। সংঘর্ষের পর উভয় দেশের সব স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সময় শনিবার রাত প্রায় ১০টায় সীমান্তবর্তী ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত শুরু হয়। কোন পক্ষ আগে হামলা চালায়, তা নিয়ে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি দাবি রয়েছে। পাকিস্তানের কর্মকর্তা এবং দেশটির রাষ্ট্রীয় রেডিও জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সীমান্তবর্তী অঙ্গুর আড্ডা, বাজৌর, কুর্রাম, দির ও চিত্রাল এবং বেলুচিস্তান প্রদেশের বাহরাম চাহে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ আজ রোববার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শনিবার রাতে ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন অংশে ‘প্রতিশোধমূলক’ অভিযান চালানো হয়েছে। আফগান সরকার স্বীকৃত এবং ডি ফ্যাক্টো (আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি এমন) সীমান্তরেখার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবৈধ কার্যক্রম মোটাদাগে রোধ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অভিযানে পাকিস্তানের ২৫টি সীমান্তচৌকি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে এবং অন্তত ৩০ শত্রু সেনা আহত হয়েছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রদেশ পাকতিকায় বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আফগান সরকার। পাকিস্তান এই অভিযোগ সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটি করেনি। তবে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে কাবুলের প্রতি আহ্বান জানায় ইসলামাবাদ।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানায়, সংবাদ সম্মেলনে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আইএসের প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের করাচি ও ইসলামাবাদ বিমানবন্দর দিয়ে সেখানে আনা হচ্ছে। তাঁদের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ইরান ও মস্কোতে হওয়া হামলাগুলো এসব কেন্দ্র থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্তকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটানোর জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের বাহিনী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করে হামলা দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করেছে। সংঘাতে তাদের অন্তত ২৯ সেনা আহত হয়েছেন। তালেবানের সীমান্তবর্তী অনেকগুলো অবস্থান ধ্বংস করা হয়েছে। শত্রুর ২১টি চৌকি সাময়িকভাবে দখলে নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা পরিকল্পনা এবং সহায়তার জন্য ব্যবহৃত একাধিক সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণশিবির অকার্যকর করা হয়েছে।
পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পর নিজেদের মালপত্র নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত চমানে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র স ম ন তবর ত স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সাফল্য তোমাকে অসুখীও করে তুলতে পারে: ইয়ামালকে পরামর্শ নাদালের
সাফল্য কে না চায়! কিন্তু সেই সাফল্যের বিপদও আছে। সবার নজর চলে যায় সফল মানুষটার দিকে। তখন একটু পা হড়কালেই সমস্যা। আর ভুল পথে হাঁটলে সাফল্যের খ্যাতিই হয়ে উঠতে পারে বিপদের কারণ। কিংবদন্তি স্প্যানিশ টেনিস তারকা রাফায়েল নাদালের তাই পরামর্শ, সঠিক পথে হাঁটো, সঠিক মানুষদের পাশে রাখো।
ভাবছেন, পরামর্শটা কাকে দিলেন নাদাল? দিয়েছেন তাঁর দেশেরই এক সফল মানুষকে, বয়সের কারণে যাঁর আসলে এখন ভালো পরামর্শের খুব প্রয়োজন। লামিনে ইয়ামাল তাঁর নাম।
বয়স মাত্র ১৮। এ বয়সে ইয়ামাল এত কিছু পেয়েছেন, যা অনেকের সারাজীবনের স্বপ্ন! খেলছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনায়। এরই মধ্যে তিনি দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। ক্লাবের হয়ে এরই মধ্যে লা লিগা জিতেছেন দুবার, সঙ্গে একটি করে কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। জাতীয় দল স্পেনের হয়ে জিতেছেন ইউরো।
বিশ্বের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন তিনি। ব্যালন ডি’অরে একবার রানারআপ হয়েছেন, দুবার জিতেছেন সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার কোপা ট্রফি। কিন্তু এই সাফল্যের পাশাপাশি মাঠে ও মাঠের বাইরে সাম্প্রতিক কালে তাঁকে নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। কখনো প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য, কখনো বিলাসী পার্টিতে উদ্দাম, আবার কখনো আর্জেন্টাইন গায়িকা নিকি নিকোলের সঙ্গে প্রেম-ঘোরাঘুরি, ইয়ামালকে নিয়ে কত গুঞ্জন!
এর মধ্যে আবার চোট। ২০২৫-২৬ মৌসুমের বড় অংশ কাটাতে হয়েছে কুঁচকির চোটে। তবে ফেরাটা ছিল প্রত্যাশিত। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১২ ম্যাচে ৬ গোল, ৮ অ্যাসিস্ট। যেন বুঝিয়ে দিলেন, মাঠের বাইরে যত আলোচনাই হোক, মাঠে তিনি দিন দিন ধারালোই হচ্ছেন। কিন্তু এই ধার কমে যেতে পারে মাঠের বাইরের ঘটনায় বেশি জড়িয়ে পড়লে। নাদাল তাই স্বদেশি তারকাকে দিয়ে রাখলেন সতর্কবার্তা—ফর্ম সামলানো সহজ, খ্যাতি সামলানো কঠিন। সব সময় রাশ টেনে ধরে রাখতে হবে নিজের।
আরও পড়ুনলিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, বিশ্বকাপ, ব্যালন ডি’অর—সব জিততে চান ইয়ামাল২১ নভেম্বর ২০২৫মোভিস্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইয়ামাল প্রসঙ্গ আসতেই নাদাল বলেছেন, ‘তার চারপাশে এমন সব মানুষ থাকা দরকার, যারা সত্যিই তাকে সমর্থন করবে। সফল মানুষেরা যেসব কথা শুনতে পছন্দ করে না, সেগুলো বলার মতো বুদ্ধিমান হতে হবে ওদের। তার চারপাশে এমন মানুষ থাকা দরকার, যারা সত্যিই তার ভালো চায়। আর তার মধ্যেও সেই মানুষদের কথা শোনার ক্ষমতা থাকতে হবে। আলোয় থাকা একজন তরুণের জন্য এটা সহজ নয়। কিন্তু এটা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
নাদাল আরও যোগ করেন, ‘তার পাশে এমন মানুষ থাকা দরকার, যারা তার উপকারে আসবে। ওরা পরিবারের মানুষ হতে পারে, কিংবা তার সতীর্থ। দেখুন, সবার বাস্তবতা আলাদা, সবার মানসিকতা আলাদা। সাফল্যের অনেক পথ আছে। কিন্তু সেই সাফল্য কে কীভাবে সামলায়, সেটাই ঠিক করে দেয় মানুষটা সুখী হবে নাকি অসুখী। কারণ, সাফল্য আর খ্যাতি একসময় আপনাকে গ্রাস করে ফেলতে পারে। আপনাকে অসুখী করে তুলতে পারে।’
আরও পড়ুনমেসির মতো হতে ইয়ামালকে যে পরামর্শ দিলেন বার্সা কোচ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইয়ামাল চাইলে নাদালের পরামর্শগুলো নিতে পারেন। কারণ, সাফল্যের যে পথে এখন তিনি হাঁটছেন, সেই পথটা অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছেন নাদাল। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পেশাদার টেনিসে পা রেখেছিলেন। ১৯-এ পৌঁছানোর কয়েক দিনের মধ্যে জেতেন প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেন, উঠে যান বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ২ নম্বরে। কিন্তু এই খ্যাতি কখনো তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। নিজেকে দারুণভাবে সামলে রেখেছেন বলেই আজ নাদাল টেনিসের সর্বকালের সেরাদের একজন।
এখন ইয়ামালই ঠিক করবেন, তিনি ফুটবলে সর্বকালের সেরাদের হতে চান, নাকি কয়েক মৌসুমের তারকা হয়ে পরে হারিয়ে যাবেন!